পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য
৩১ জুলাই ২০১৩অন্ধ্রপ্রদেশকে টুকরো করে তেলেঙ্গানা নামে ভারতের ২৯তম রাজ্য গঠনে চূড়ান্ত শিলমোহর দিল সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস কর্মসমিতি এবং সমন্বয় কমিটি৷ এই সিদ্ধান্ত নতুন এক ‘প্যান্ডোরাস বক্স' খুলে দিল বলে মনে করছে নাগরিক সমাজ এবং বিশেষজ্ঞ মহল৷ কারণ এর অভিঘাত পড়বে দেশ জুড়ে৷ ছোট ছোট রাজ্য গঠনের দাবি মাথা চাড়া দেবে৷ দাবি উঠবে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও জম্মু-কাশ্মীর থেকে৷ আসামে বোড়োল্যান্ড, পশ্চিমবঙ্গে গোর্খাল্যান্ড, মহারাষ্ট্রে বিদর্ভ এলাকা এবং জম্মু-কাশ্মীরে লাদাখ ও জম্মু অঞ্চল৷
পশ্চিমবঙ্গের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি তথা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) প্রধান বিমল গুরুং পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, পৃথক তেলেঙ্গানা হলে পৃথক গোর্খাল্যান্ড হবে না কেন? একই সুর বোড়ো নেতাদের৷ মহারাষ্ট্র থেকেও পৃথক বিদর্ভ রাজ্য গঠনের দাবি উঠছে জোরেসোরে৷
অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশকে ভাগ করা নিয়ে কংগ্রেস দলের মধ্যেই দেখা দিয়েছে তীব্র মতভেদ – বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশের সাংসদ, বিধায়ক ও কংগ্রেস নেতাকর্মীদের মধ্যে৷ তেলেঙ্গানার নেতাকর্মীরা চাইছেন ভাগ হোক, আর অন্ধ্র নেতাকর্মীরা চাইছেন পৃথক তেলেঙ্গানা কখনই নয়৷ এই নিয়ে তীব্র চাপের মধ্যে কংগ্রেস৷ কংগ্রেসের পক্ষে এ যেন শাঁখের করাত৷ সোনিয়া গান্ধীর হিসেবে আগামী নির্বাচনে এতে নাকি দলের ফায়দা হবে৷ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি আবার কংগ্রেস জোটে ফিরবে এবং আগামী নির্বাচনে সেই জোট অব্যাহত থাকবে৷ বর্তমানে অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের ৪২টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০০৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস একাই পায় ৩৭টি আসন৷
পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যান তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির প্রধান কে. চন্দ্রশেখর রাও৷ ঐ দাবি খতিয়ে দেখতে সরকার দায়িত্ব দেন শ্রীকৃষ্ণ কমিশনকে৷ কমিশন রাজ্যের জেলায় জেলায় ঘুরে রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে যে রিপোর্ট দেন, তাতে পাঁচ-দফা সমাধানসূত্রের কথা বলা হয়৷ তার প্রথম সুপারিশ রাজ্যকে ভাগ না করা৷ তবে তেলেঙ্গানা এলাকার আর্থ-সামাজিক বিকাশে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে তেলেঙ্গানা আঞ্চলিক পরিষদ গঠনে বিধিবদ্ধ সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেয়া৷ দ্বিতীয় বিকল্প রাজ্য দুভাগে ভাগ করা বর্তমান সীমানার ভিত্তিতে৷ ১০টি জেলা নিয়ে হবে তেলেঙ্গানা রাজ্য এবং অন্ধ্র উপকূলভাগ ও রায়েলসীমা নিয়ে ১২টি জেলা হবে সীমান্ধ্র রাজ্য৷ পাঁচ বছর হায়দ্রাবাদ থাকবে উভয় রাজ্যের যৌথ রাজধানী৷ তারপর অন্ধ্রের নতুন রাজধানী তৈরি হবে৷
অন্ধ্রপ্রদেশ পৃথকীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা কার্যকর হতে সময় লাগবে৷ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে যেটা খুব মসৃণ নয়৷ দলীয় প্রস্তাব পাশ করবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ তারপর তা যাবে মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে৷ মন্ত্রিগোষ্ঠী তা পাশ করলে রাজ্য পুনর্গঠন সংশোধনী বিল অনুমোদন করবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ সেখান থেকে যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে৷ রাষ্ট্রপতির নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রাজ্য বিধানসভায় তা পাশ করাতে হবে৷ ভোটের কথা মাথায় রেখে বিজেপি আগেই ঘোষণা করে বসে আছে যে, কংগ্রেস যদি পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন না করে, তাহলে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে তা অবশ্যই করবে৷