ভারতীয় তরুণীদের বিশ্বজয়ে নতুন স্বপ্নের শুরু
৩১ জানুয়ারি ২০২৩নারীদের ক্রিকেটে নজির গড়েছে ভারত। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেতাব ঘরে তুলেছে। অতীতে ভারত একাধিকবার নারী বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলেছে। কিন্তু ট্রফি থেকে গিয়েছিল অধরা। এবার অধিনায়ক শেফালি বর্মার হাত ধরে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তিতাস সাধু, রিচা ঘোষ ও হৃষিতা বসুর উত্থান স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলার অগণিত ক্রীড়াপ্রেমীকে।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তথা সাবেক বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় টুইট করেছেন, ''ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা ক্রিকেট দলকে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানাতে চাই। দেশের নারী ক্রিকেটের ক্ষেত্রে এটা এক বিরাট পদক্ষেপ। আশা করছি, আগামী দিনে দেশের মহিলা ক্রিকেট আরও উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছাবে।''
দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে ফাইনালে মাত্র ৬৮ রানে ইংল্যান্ডকে বেঁধে রেখেছিল ভারত। এই খেলায় তিতাস ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ'। চার ওভারে মাত্র ছয় রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নেন তিতাস। হুগলির চুঁচুড়ার এই তরুণীর প্রথম প্রশিক্ষক বাবা রণদীপ সাধু। তারই ক্রিকেট অ্যাকাডেমি রাজেন্দ্র স্মৃতি সংঘে খেলা শুরু করেন তিতাস।
হাওড়ার বালিটিকুরির বাসিন্দা হৃষিতা বসু ব্যাটার। বাংলা ক্রিকেট দলের কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লার অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন। কোচ চরণজিৎ সিংয়ের কাছে ক্রিকেটের পাঠ নেওয়া শুরু। চরণজিৎ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''আগের চেয়ে মেয়েরা নিঃসন্দেহে বেশি খেলছে। তবে বাংলার তিনটি মেয়ে জাতীয় দলে খেলছে, এটাই বড় প্রাপ্তি।''
উইকেটরক্ষক রিচা তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন। সিনিয়র দলেও সুযোগ পেয়েছেন। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাবে তালিম নেন তিনি। রিচা বলেছেন, ''খুব ভাল লাগছে এই সাফল্যে। এই ফল নিশ্চয়ই সিনিয়রদের অনুপ্রেরণা দেবে।''
ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজ যা পারেননি তা করে দেখিয়েছেন তিতাস-রিচা-হৃষিতারা। পাঁচ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই। তবে এ যেন নারী ক্ষমতায়নের এক প্রতীক, যা অর্থমূল্যের থেকেও বেশি!
ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখেন ভারতের তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু প্রশিক্ষণ ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকের সাধ অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে নারীদের হাত ধরেছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সংস্থা। হাওড়ায় প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতনের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তেমনই। সপ্তাহে চারদিনের প্রশিক্ষণে গড়ে ৮০০ জন ছেলেমেয়ে এখানে প্রশিক্ষণ নেন। এর মধ্যে প্রায় ২০০ জন মেয়ে।
সংস্থার প্রশিক্ষক তথা জাতীয় দলের কোচ চরণজিৎ বলেন, ''গরিব মেয়েরা খেলতে চায়। কিন্তু ওদের কোচিং নেওয়ার সাধ্য নেই। তাই বিনাপয়সায় কোচিং করাচ্ছি আট বছর ধরে। হৃষিতা প্রমাণ করল, যোগ্যতা থাকলে নিখরচায় প্রশিক্ষণ নিয়েও সফল হওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতে অন্য মেয়েরাও ক্রিকেট নিয়ে ভাবতে পারবেন।''
ভারতের রাষ্ট্রপতি একজন নারী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও। তবু ভারতীয় নারী সমাজের একটা বড় অংশ এখনো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অধীন। তার বিপরীতে একুশ শতকের ভারতে নয়া নজির নারী ক্রিকেটারদের সাফল্য। বাংলার ক্রিকেট সংগঠনগুলির অবদানের প্রশংসা করেন তিতাস সাধুর শৈশবের প্রশিক্ষক প্রিয়ঙ্কর মুখোপাধ্যায়।
রাজেন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘের সঙ্গে জড়িত প্রিয়ঙ্কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''মেয়েদের অংশগ্রহণ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। সিএবি (ক্রিকেট এসোসিয়েশন অব বেঙ্গল) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। জেলা স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এই উত্থানে কাজে এসেছে। তবে মেয়েদের এমন সাফল্যের জন্য অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।''
ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলোর প্রশিক্ষণে নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের পাশে রয়েছে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাব। সংগঠনের সহ সভাপতি শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''আমাদের ক্যাম্পে ১১২ জন মেয়ে আসে। এদের অনেকে হতদরিদ্র পরিবারের। নইলে পরিচারিকা, দিনমজুর, রিকশাচালকের মেয়ের স্বপ্ন কীভাবে পূরণ হবে?''
বাংলার সাবেক ক্রিকেট তারকা দেবাং গান্ধী স্বপ্ন পূরণের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''লক্ষ্মীরতনের মতো আরো অনেককে এগিয়ে আসতে হবে। অভাব যেন কারো প্রশিক্ষণে বাধা না হয়। সঙ্গে তিতাস, রিচাদের অনুপ্রেরণা তো আছেই।''