1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌বয়েজ স্কুলের ছাত্র ছিলেন প্রীতি!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কলকাতার একটি ছেলেদের স্কুলের প্রাক্তনীদের সংগঠনের সদস্য হলেন এক নারী, যিনি একসময় ওই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন৷

https://p.dw.com/p/2kqUJ
স্কুলের সাবেক ছাত্রদের সঙ্গে প্রীতিছবি: Facebook/TBAAK

রীতিমতো আতান্তরে পড়েছিলেন মধ্য কলকাতা টাকি বয়েজ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন টিব্যাক-এর পরিচালন গোষ্ঠী৷ কারণ, প্রীতি সেনগুপ্ত নামে এক মহিলা প্রথমে ফেসবুকে অনুরোধ জানিয়ে, তারপর আনুষ্ঠানিক লিখিত দরখাস্ত করে টিব্যাক-এর সদস্য হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন৷ টাকি বয়েজ-এর মতো টাকি গার্লস বলেও একটি মেয়েদের স্কুল আছে পাশাপাশি৷ টিব্যাক-এর সম্পাদক পার্থসারথী সাহা ডয়চে ভেলেকে জানালেন, তিনি ভেবেছিলেন, প্রীতি সেনগুপ্ত হয় আগাগোড়াই ভুল করে এমন অদ্ভুত আবেদন করেছেন, অথবা তিনি নির্ঘাত টাকি গার্লস লিখতে গিয়ে টাকি বয়েজ লিখেছেন৷

‘ভেবেছিলাম তিনি নির্ঘাত টাকি গার্লস লিখতে গিয়ে টাকি বয়েজ লিখেছেন’

কিন্তু তারপরেও মহিলার সদস্যপদের আবেদন, সেই নিয়ে তাগাদা, যোগাযোগ বন্ধ না হওয়ায় একটু নড়েচড়ে বসে টিব্যাক এবং জানতে পারে, প্রীতি সেনগুপ্ত আদতেই একসময় টাকি বয়েজ স্কুলের ছাত্র ছিলেন৷ ১৯৯৭ সালে পাস করে স্কুল ছেড়েছেন এবং পরবর্তী জীবনে লিঙ্গ রূপান্তরিত হয়ে তিনি এখন একজন মহিলা৷ কিন্তু স্কুলজীবনের কথা যদি ধরতে হয়, তা হলে অবশ্যই তিনি টাকি বয়েজ স্কুলের প্রাক্তনী সংগঠনের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন৷ তবে সেটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে, সেটা পার্থসারথী সাহার জানা ছিল না৷ কারণ, তাঁদের সদস্য হওয়ার যে ফর্ম, তাতে নারী-পুরুষ আলাদা করার কোনও উপায়ই নেই৷ কোনও নারী যে কোনওদিন সদস্যপদ চাইতে পারেন, এ তাঁদের চিন্তারও বাইরে ছিল৷

আর প্রীতির কাছে এ ছিল এক ইমোশনাল সিদ্ধান্ত৷ আদতে উত্তর কলকাতার বাগবাজারের বাসিন্দা প্রীতি এখন দিল্লিতে থাকেন৷ অটিস্টিক বাচ্চাদের পড়াবার বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন দিল্লির একটি স্কুলের শিক্ষিকা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, কলকাতায় ফিরলেই শিয়ালদা স্টেশনের ঠিক পাশে টাকি বয়েজ স্কুলের বাড়িটির দিকে বার বার তাঁর নজর চলে যেতো৷ তিনি নিজের স্কুলজীবনের কথা মনে করতেন, স্কুলের বন্ধুদের কথা মনে পড়ত৷ কাজেই প্রাক্তনী সংগঠনের সদস্যপদ চেয়ে আবেদন করাটা ছিল নেহাতই আবেগজনিত এক চাওয়া৷ কিন্তু সেই সূত্রে তাঁর লিঙ্গ পরিচয়, লিঙ্গ পরিবর্তন ঘটিয়ে পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হওয়ার ঘটনা যে এভাবে সামনে চলে আসবে, তা তিনি ভাবেননি৷

প্রীতি বুঝতে পারছেন, তিনি হয়ত পথ দেখালেন

কিন্তু এখন প্রীতি বুঝতে পারছেন, তিনি হয়ত পথ দেখালেন৷ তাঁর মতো আরও যাঁরা রূপান্তরকামী আছেন, এই ঘটনা হয়ত তাঁদেরকেও সামনে এগিয়ে আসতে, লিঙ্গ পরিচয় জানিয়েই সমাজে স্বীকৃত হতে উৎসাহিত করবে৷ কারণ, তাঁর সদস্যপদের আবেদন গৃহীত হয়েছে৷ সম্প্রতি এক ছোটখাট পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে প্রীতিকে প্রাক্তনী সংগঠনের আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে৷ পার্থসারথী সাহা জানালেন, এর জন্য তাঁরা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের লিঙ্গ-সমতা বিষয়ক আগের যে রায় এবং এ সংক্রান্ত পরিবর্তিত আইনের সাহায্য নিয়েছেন৷ প্রীতিকে সদস্যপদ দিতে পেরে তাঁরাও খুশি৷ প্রীতিও আপ্লুত এই প্রাপ্তিতে৷

পশ্চিমবঙ্গে কোনও রূপান্তরিত নারী এর আগেও খবরের শিরোনাম হয়েছেন৷ তার সবথেকে বড় দৃষ্টান্ত মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা, এমনকি অধ্যক্ষাও হয়েছেন৷ যদিও সে কাজ সহজে হয়নি৷ তার জন্য তাঁকে আইনি বিরোধের রাস্তায় হাঁটতে হয়েছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত নিজের অধিকার বুঝে নিয়েছেন মানবী৷ প্রয়াত চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষও নিজের লিঙ্গ পরিচয় নিজের অঙ্গে ধারণ করেই রাস্তা হেঁটেছেন, সফল হয়েছেন৷ এই প্রতিটি ঘটনাই একবার করে প্রমাণ করেছে, সমাজ আসলে বদলাচ্ছে৷ রূপান্তরকামীরা বৈধতা পাচ্ছেন আইনের চোখে, সমাজের চোখেও৷