1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যাঙের কথা আগে ভেবেছেন?

পায়েল সামন্ত
২৩ জুন ২০১৮

প্রাণিজগতের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঙের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অথচ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে কমে যাচ্ছে ব্যাঙের সংখ্যা৷ তাই এ ধরনের প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন জার্মানির বন শহরের বিজ্ঞানীরা৷

https://p.dw.com/p/2zxVm
Deutschland Krötenwanderung
ছবি: DW/J. Franken

প্রাণিজগতের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঙের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অথচ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে কমে যাচ্ছে ব্যাঙের সংখ্যা৷ তাই এ ধরনের প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন জার্মানির বন শহরের বিজ্ঞানীরা৷

খাদ্যশৃঙ্খলে সক্রিয় অবস্থান ছাড়াও বৃষ্টিপাত থেকে শুরু করে ভূমিকম্প, প্রকৃতির নানা ওঠা-পড়ার পূর্বাভাস দিতে পারে এই ছোট্ট প্রাণীটি৷ এ জন্যই একে ‘এনভায়রনমেন্টাল ব্যারোমিটার' বলা হয়৷ অথচ ব্যাঙ সংরক্ষণে সেভাবে কোনো চেষ্টা নজরেই পড়ে না৷ প্রতি বছর শীত শেষে যখন বসন্ত আসে, ব্যাঙেরা শীতঘুম শেষ করে গর্তের বাইরে বেরিয়ে পড়ে মিলনের জন্য৷ এই স্থানান্তরণের সময়েই রাস্তায় প্রচুর ব্যাঙ গাড়ি চাপা পড়ে৷ জানালেন জার্মান বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান শামেলা৷

বন শহরের একটি এনজিও-তে ক্রিস্টিয়ান সহ আটজন বিজ্ঞানী বিপন্ন ব্যাঙদের বাঁচানোর কাজটিই করেন৷

উভচর প্রাণীর গবেষক তথা রাইন-এর্ফ্ট বায়োলজি স্টেশন নামক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান শামেলার আক্ষেপ, ‘‘বড় বড় প্রাণী নিয়ে অনেক গবেষণা হয়৷ অথচ বিপন্ন ব্যাঙ বা ফায়ার স্যালামান্ডার সংরক্ষণের কোনো চেষ্টাই কারও নেই৷ যথেচ্ছ পরিমাণে কীটনাশকের ব্যবহার, জঙ্গল সাফ করে বসতি গড়ে ওঠা, দূষণ, কোথাও আবার অ্যাসিড বৃষ্টি বা যুদ্ধ – এ সব নানা কারনে উভচর প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে চলেছে৷ ফলে খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হওয়া থেকে বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে৷ আর তা হলে শুধুই উভচরপ্রাণী নয়, তার ভয়ংকর প্রভাব পড়বে জীবজগতেও৷''

কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ার হাত থেকে ব্যাঙকে বাঁচানোর উপায় কী? বড় রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করা যাবে না, সেটা ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে করা যেতে পারে৷ তাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা নেয় রাস্তার নীচে তৈরি সুড়ঙ্গ৷ এগুলি ব্যবহার করে ব্যাঙ সহজেই রাস্তা পার করতে পারে৷ তবে নতুন রাস্তা তৈরির সময়েই এই সুড়ঙ্গ তৈরি করতে হয়৷

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ বিশেষভাবে তৈরি বেড়াগুলি রাস্তার ধারে
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ বিশেষভাবে তৈরি বেড়াগুলি রাস্তার ধারে দেওয়া হয়ছবি: DW/J. Franken

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ক্রিস্টিয়ান জানালেন, ‘‘আমরা যেটা করি সেটা সবচেয়ে সহজ৷ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ বিশেষভাবে তৈরি বেড়াগুলি রাস্তার ধারে ধারে দিয়ে রাখি৷ এতে ব্যাঙ বা অন্য উভচর সেটা ডিঙিয়ে রাস্তায় যেতে পারে না৷ এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত এগুলো এমন করে দেওয়া থাকে৷''

এরপরে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বালতি বসিয়ে দেওয়া হয়৷ ৮০০ মিটার লম্বা বেড়ার কাছাকাছি ৩ থেকে ৫ মিটার অন্তর অন্তর এই বালতিগুলো বসান হয়৷ বেড়ার কাছাকাছি ব্যাঙ পৌঁছে গেলে সহজেই বালতি পড়ে যায়৷

প্রাণিজগতে ব্যাঙের ভূমিকা

বায়ো স্টেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা রোজ এই বালতিগুলো নজরদারি করেন৷ বালতিতে ব্যাঙ পড়লেই তাঁরা সেগুলিকে রাস্তা পার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেন৷

জার্মানিতে ব্যাঙকে রক্ষা করার জন্য প্রায় ৮০০টি বেড়া ব্যবহার করা হয়৷ এতে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে চিন্তাও রয়েছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ায় খুবই কমে এসেছে গার্লিক ব্যাঙ এবং হলদে পেট ব্যাঙ৷ সেগুলিকে সংরক্ষণ করার জোরকদমে চেষ্টা চলছে৷

বায়োস্টেশনে এখন সেই কাজই চলছে৷  নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়ার বিভিন্ন জলাশয় থেকে এই দু'টি বিপন্ন প্রজাতির ব্যাঙাচি সংগ্রহ করে আনা হচ্ছে৷ এরপরে কৃত্রিমভাবে সেই ব্যাঙাচির প্রজনন ঘটানো হচ্ছে, যাতে পরিবেশে এই বিরল প্রজাতির ব্যাঙের সংখ্যা বাড়ে৷                

নিছক প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই বায়োস্টেশনে এই কাজ করেন চার জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবী ও আটজন বিজ্ঞানী৷ ব্যাঙের চলার পথকে সুরক্ষিত করে তুলতে তাঁরা সেখানে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে রাখেন৷

ভারত, বাংলাদেশের পুকুরে ইদানীং ব্যাঙের সংখ্যা কমে আসছে৷ রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং দূষণে ব্যাঙ আজকাল তৃতীয় বিশ্বের ক্ষেত খামারেও ব্যাঙের ডাক শোনা যায় না৷ কিন্তু জার্মানির মতো উন্নত দেশে ব্যাঙের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কী?

 বেড়ার কাছাকাছি ৩ থেকে ৫ মিটার অন্তর অন্তর এই বালতি
বেড়ার কাছাকাছি ৩ থেকে ৫ মিটার অন্তর অন্তর এই বালতিতে ব্যাঙ পড়ে যায়ছবি: DW/J. Franken

ক্রিস্টিয়ান শামেলা জানালেন, ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা কাজটা করছেন৷ সমস্যাটা শুধু তৃতীয় বিশ্বের নয়, সারা বিশ্বের৷ ঠিক একই কারণে জার্মানিতেও ব্যাঙ কমে যাচ্ছে৷ বহু ব্যঙ শুধু গাড়ি চলাচলের কারণে মারা পড়ছে৷ বিশুদ্ধ জল, সংরক্ষিত এলাকা এবং অধিক প্রজনন ছাড়া ব্যাঙ বা এই জাতীয় উভচর বাঁচিয়ে রাখার উপায় নেই৷

জলাশয়ে যেমন ব্যাঙ থাকে তেমনই নানা ধরনের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গও থাকে৷ ব্যাঙ সেগুলি খেয়ে নেয়৷ ব্যাঙ না থাকলে সেই সব কীটপতঙ্গ মানব জগতের ক্ষতি করবে৷ জিকা ভাইরাস বহনকারী ক্ষতিকারক পতঙ্গ খেয়েও ব্যাঙ আমাদের সুরক্ষিত রাখে৷ এত সব জানার পরেও কি আমরা ব্যাঙের ব্যাপারে সচেতন হবো না?

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য