ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস দমন
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১১এডিস ইজিপ্টি নামে এক ধরনের মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ হয়৷ এই মশা দমন করার জন্য গবেষকরা বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এখন তাঁরা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দিয়ে মশাকে সংক্রামিত করে ডেঙ্গুর ভাইরাসকে কাবু করতে চান৷
মশার দেহে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়ে ভাইরাস ধ্বংস করা, কথাটা অদ্ভুত শোনালেও বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে আশাবাদী৷ এ প্রসঙ্গে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির স্কট ও'নিল বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে ওলব্যাকিয়া নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে কাজে লাগাতে পারব বলে আমাদের আশা৷ ৭০ শতাংশ পতঙ্গের দেহে রয়েছে এই ব্যাকটেরিয়া৷ অনেক মশাও উদ্ধার পায়নি এই ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে৷ তবে এই সব মশা মানুষকে হুল ফোটালেও কোনো রোগের সংক্রমণ হয়না''৷
ওলব্যাকিয়া থাকলে ডেঙ্গুর ভাইরাসরা কাবু হয়ে পড়ে
স্কট ও' নিল ব্যাখ্যা করে জানান, ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন প্রচুর তেজঃশক্তির৷ তাই এই ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব থাকলে মশার দেহে ভাইরাসরা তেমন সুবিধা করতে পারেনা, বাধা পায় বংশ বিস্তারে৷ এই বিষয়টি ডেঙ্গুর ভাইরাসকে দমন করার ব্যাপারে কাজে লাগাতে চান মেলবোর্নের গবেষকরা৷ প্রক্রিয়াটি সহজ না হলেও এডিস মশার দেহে ফ্রুট ফ্লাই'এর ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা৷ এ প্রসঙ্গে স্কট ও' নিল বলেন, ‘‘ওলব্যাকিয়া ডেঙ্গুর ভাইরাসের বিস্তৃতি পুরোপুরি রোধ করে ফেলে৷ বংশ বিস্তার করতে না পারলে মানুষকে সংক্রমণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে ভাইরাসগুলো৷''
এখন প্রশ্ন এই যে, গবেষণাগারের এই পরীক্ষা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব কিনা৷ এজন্য মশার দেহে প্রথমে ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার বিস্তৃতি ঘটানো প্রয়োজন৷ এক্ষেত্রে আর একটি বিষয়ও লক্ষ্য করা গেছে, আর তা হল ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়া মশার প্রজনন ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে৷ এই ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রামিত মশারা বংশবিস্তারেও পারদর্শী৷ এই প্রসঙ্গে মেলবোর্নের পতঙ্গ গবেষক অ্যারি হফমান জানান, ‘‘সংক্রামিত নারী মশারা দ্রুত বংশ বিস্তারের মাধ্যমে ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়াও ছড়িয়ে দেয়৷''
ওলব্যাকিয়া নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষায় সফল পাওয়া গেছে
গবেষক ও'নিল এবং হফমান উত্তর অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে এ ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান৷ গবেষক ও'নিলের ভাষায়, ‘‘পরীক্ষার জন্য আমরা ব্যাকটেরিয়াযুক্ত কিছু মশাকে মানুষকে হুল ফোঁটানোর জন্য ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম৷ এটা একটু বেশি চাওয়া হয়ে যায়৷ কিন্তু ঐ অঞ্চলের মানুষরা ডেঙ্গু জ্বরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন, তাই তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছিলেন, যা আমাদের অভিভূত করে৷''
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন৷ আর তাই গবেষকরা বেশ কিছু মশাকে ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত করে প্লাস্টিকের কৌটায় করে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই অঞ্চলের মানুষদের কাছে৷ এই প্রসঙ্গে অ্যারি হফমান জানান, ‘‘আমরা প্লাস্টিকের কৌটাগুলি ট্রাকে চাপিয়ে ঐ গ্রামগুলির দিকে রওনা হই৷ সেখানে পৌঁছে ঢাকনা খোলার সাথে সাথে মশাগুলি উড়ে যায়৷''
এই ভাবে ১০ সপ্তাহ ধরে গবেষকরা সংক্রামিত মশাগুলিকে ছাড়তে থাকেন, যার সংখ্যা তিন লাখের মত হবে৷ স্কট ও'নিলের ভাষায়, ‘‘মশাগুলিকে ছাড়ার পর ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণও বাড়তে থাকে৷ শেষমেষ প্রায় সব মশাই ওলব্যাকিয়া দ্বারা সংক্রামিত হয়৷ আমাদের গবেষণাগারের ফলাফল অনুযায়ী পরীক্ষা চালানো গ্রামগুলিতে ডেঙ্গুর ঝুঁকিও অনেকটা দূর হয়ে যায়৷''
ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমে যাবে ভবিষ্যতে
সামনের বছরগুলিতে ডেঙ্গুর কিছুটা ঝুঁকি হয়তো থাকবে, মনে করেন গবেষক ও'নিল৷ তবে এ ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হল, ডেঙ্গু প্রতিরোধক ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়া আপনা আপনি বিস্তৃত হয়৷ পরবর্তীতে এশিয়া ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশগুলিতে এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে, যেখানে ডেঙ্গু জ্বর প্রায়ই দেখা দেয়৷ সেই সময় গবেষকরা মশার দেহে ওলব্যাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণই শুধু মেপে দেখবেন না, পরীক্ষাধীন এলাকার মানুষদের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কতটা কমছে তাও খতিয়ে দেখবেন৷
গবেষক অ্যারি হফমান বলেন, ‘‘আমরা এখনও পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রথম দিকে রয়েছি৷ এই মুহূর্তে আমরা আশাবাদী৷ আমরা ওলব্যাকিয়াযুক্ত মশার বিস্তৃতি ঘটাতে পারি৷ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা এখনই বলতে পারব, ওলব্যাকিয়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷ এ জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন৷''
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক