1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৈষম্য নয়, প্রতিবেশির সঙ্গে সম্পর্ক হোক ভালোবাসার

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম মূলত রাজনীতি, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, শরণার্থী এবং অভিবাসন সম্পর্কিত ইস্যু কভার করেন৷ পাশাপাশি জার্মানি ও ইউরোপে জীবনযাপনের নানা দিকও তুলে ধরেন তিনি৷
আরাফাতুল ইসলাম
১১ অক্টোবর ২০১৯

বাংলাদেশ-ভারত, নাকি ভারত-বাংলাদেশ? কোন দেশের নাম আগে লেখা উচিত, কোনটা পরে - তা নিয়েও বির্তক দেখেছি বহুবার৷ আমাদের মধ্যে অনেকের যেমন ভারতীয় পণ্য, চলচ্চিত্র ছাড়া চলে না, তেমনি আবার দেশটির দাদাগিরিও অনেকের কাছে অসহ্যকর৷

https://p.dw.com/p/3R7nw
Auto-Rallye Kolkatta Kunming 2013
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar

এই লেখাটা যখন লিখছি, তখনও ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে কিছু ছবি৷ তিন ব়্যাব সদস্য এবং তাদের দুই সোর্স ‘এক চোরকারবারী ধরতে' গিয়ে ভারতের সীমান্তে ঢুকে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তাদের বেধড়ক মারধর করে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী একটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ এবং হাত বাঁধা আহত সদস্যদের কাদায় পড়ে থাকা ছবি দেখে ফেসবুকে কেউ কেউ খুশিও হচ্ছেন৷ কিন্তু আমার চোখে জল এসে গেছে৷ দু'জন মানুষকে বর্বরভাবে পেটানো কোন যুক্তিতেই আমার কাছে সমর্থনযোগ্য নয় তা তারা যাই হোক না কেন৷ 

এটা সত্য যে তাদের এভাবে সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে যাওয়াটা অবৈধ ছিল৷ কিন্তু এই অবৈধ কাজের পরিনতি কী হতে পারে সেটা নিয়ে সুস্পষ্ট আইন রয়েছে৷ সেই আইন অনুযায়ী তাদের সাজা হতে পারতো৷ আর তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই৷ 

বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক আমার বিবেচনায় অসাধারণ৷ আমি নিজে বেশ কয়েকবার ভারতে গিয়েছি৷ জার্মানিতে গত এক যুগে অনেক ভারতীয়র সঙ্গে কথা হয়েছে, সখ্যতা হয়েছে৷ মোটা দাগে আমার কখনো মনে হয়নি ভারতীয়দের মধ্যে বাংলাদেশিদের নিয়ে কোন ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা ঘৃণা রয়েছে৷

আর বাংলাদেশিদের ভারতীয় পণ্যের প্রতি টান কতটা সেটাতো আমরা সবাই জানি৷ ঈদ-পুজার পোশাক বলেন কিংবা কোরবানির গরু - ভারত থেকে যাই, যেভাবে আসুক বাংলাদেশিরা সেটা বেছে নিচ্ছেন৷ এমনকি বাংলাদেশিদের বিনোদনের একটা বড় উৎস ভারতীয় টিভি সিরিয়াল আর সিনেমা৷ দেশটির প্রতি আমাদের আগ্রহ অনেক৷ ফলে এখানেও মোটা দাগে ভারতের প্রতি কারো ব্যক্তিগত ঘৃণা বা ক্ষোভ আমি দেখতে পাই না৷ 

তবে, সরকারি পর্যায়ে একধরনের বৈষম্য, বিদ্বেষ সৃষ্টির চেষ্টা আমি দেখতে পাই৷ আর সেক্ষেত্রে ভারত সরকার গত এক যুগের বিবেচনায় বেশ এগিয়ে৷ বাংলাদেশের জনগণের চেয়ে আওয়ামী লীগ দলকে আপন করে নেয়ার একটি নীতি ভারত পরিস্কারভাবে ফুটিয়ে তুলেছে৷ আর আওয়ামী লীগও ভারতকে তুষ্ট রাখতে নিজের দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার চেয়ে প্রতিবেশির ইচ্ছাকে কয়েকগুণ বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে৷ এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার৷ 

আমার কাছে মনে হয়, দুই দেশের সরকারের এরকম নীতি আপাতদৃষ্টিতে তাদের জন্য লাভজনক হলেও দীর্ঘ মেয়াদে দুই দেশের মানুষের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করছে, করবে৷ আর এমন নীতির সমালোচনা করতে গিয়ে যখন কাউকে প্রাণ দিতে হয়, যখন সীমান্তে আহত-নিহত বাংলাদেশিদের পড়ে থাকতে দেখা যায়, তখন ঘৃণাও সৃষ্টি হয়৷ প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্র দু'টি কি তাদের নাগরিকদের মধ্যে ঘৃণার বসতি গড়বে, নাকি ভালোবাসারক্ষেত্র গড়ে দেবে?

জার্মানিতে দীর্ঘদিন থাকি, সাংবাদিকতা করি৷ তাই মাঝেমাঝেই ইউরোপের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে মন চায়৷ অফিসও কখনো কখনো সেটাই প্রত্যাশা করে৷ এখানে তাই জার্মানি আর ফ্রান্সের মধ্যকার সম্পর্কের একটা উদাহরণ টানতে চাই৷ জার্মানি সম্পর্কে আমার যে আগ্রহ, তা গড়তে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী৷ আমার প্রিয় লেখকের ‘চাচা কাহিনী' পড়ে জার্মান সংস্কৃতি সম্পর্কে খানিকটা ধারনা পেয়েছিলাম৷ হিটলারকে নিয়ে তাঁর লেখা পড়ে বুঝেছি অনেক কিছু৷

তো, সেই চাচা কাহিনীতে এক জার্মান কর্ণেলের কথা ছিল যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কার্যত নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন৷ কর্ণেলের একটা মেয়ে ছিল৷ শেষ জীবনে তিনি সেই মেয়েকে ত্যাজ্য করেছিলেন শুধুমাত্র একটি কারণে৷ মেয়েটা এক ফরাসি তরুণকে বিয়ে করেছিল৷ জার্মান এবং ফরাসিদের মধ্যে তীব্র বৈরি সম্পর্কের একটা ছোট্ট উদাহরণ এটি৷ এমন উদাহরণ অনেক৷ কয়েক শতক ধরে চলেছে এই বৈরিতা৷ 

Arafatul Islam Kommentarbild App
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

কিন্তু, অনেক ক্ষতিসাধণের পর দু'দেশই একসময় বুঝতে পেরেছে যে বৈরিতা লালন করার চেয়ে সম্পর্কটা ভালোবাসায় রূপ দেয়াটা অনেকবেশি লাভজনক৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানির প্রথম চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গোল তাই ১৯৬৩ সালে এলিসে চুক্তি করেন৷ সেই চুক্তির পর দেশ দু'টির এবং দেশ দু'টির মানুষের মধ্যকার সম্পর্কে অনেকটাই বদলে গেছে৷ বৈরিতা রূপ নিয়েছে ভালোবাসায়৷

আজকে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রিটেন চলে গেলেও নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করছে, সেটা ঐ ফরাসি আর জার্মানিদের মধ্যকার গভীর সম্পর্কের কারণে৷ ইউরোপের এই ইতিহাস যখন মনে পড়ে তখন ভাবি, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যেতো শত শত বছরের শত্রুতা ছিল না৷ বরং একসময় এক ছাতার তলেই ছিল সবাই৷ তাহলে এখন কেন এত বৈষম্য, ঘৃণা সৃষ্টির চেষ্টা? আমাদের রাজনীতি কি শুধু মানবতার পরাজয় দেখার জন্য?

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য