বেকহ্যামকে নিয়ে মাতামাতি? উঠতি তারকার নাম পিএসজি
৪ এপ্রিল ২০১৩মঙ্গলবার-বুধবারের ম্যাচগুলোর আগে বায়ার্নের রিবেরি-রবেন, বার্সেলোনার মেসি, রেয়ালের রোনাল্ডো-বেনজেমা-ইগুয়াইন, এরা সব কেমন খেলবেন, তাই নিয়েই মুখ এবং কলম ছুটিয়েছেন ফুটবলের পণ্ডিত-ভাষ্যকার-বোঝদার-সমঝদারেরা৷ ওদিকে ডেভিড বেকহ্যাম যে পিএসজির হয়ে তাঁর পুরনো রণক্ষেত্রে আবার উত্তীর্ণ হতে পারেন, সেটা নিয়ে যা কিছু উল্লাস-উচ্ছ্বাস, তা যেন খেলার পাতা থেকে মনোরঞ্জনের পাতায় গিয়ে পড়েছিল৷
বায়ার্ন জিতেছে ঠিকই৷ জার্মানির অপর দল ডর্টমুন্ড মালাগার সঙ্গে ড্র করেই খুশি, বিশেষ করে মারিও গোয়েটসে দু-দু'টো নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করার পর৷ রেয়ালের রোনাল্ডো দলের হয়ে প্রথম গোলটি করে এখন চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি মরশুমে টপ স্কোরার – ন'টি গোল নিয়ে৷ যে করিম বেনজেমা এবং গনজালো ইগুয়াইন চলতি লিগ মরশুমে ফর্মে নেই বলে রেয়াল লা লিগায় খেতাব বজায় রাখার আশা পরিত্যাগ করেছে, সেই স্ট্রাইকাররা দু'জনেই গালাতাসারাইয়ের বিরুদ্ধে একটি করে গোল করেছেন৷ তাই রেয়ালের কোচ হোসে মুরিনহো খুশি এবং ইস্তানবুলে ফিরতি লেগ সম্পর্কে আশাবাদী৷
মেসি থেকে পশ স্পাইস
ওদিকে বার্সেলোনার মেসি নেমেই গোল করে তাঁর নিজের কিংবদন্তিটি রক্ষা করেছেন তো বটেই, পরে হাঁটুতে আবার সেই পুরনো চোট পেয়ে, ফিরতি লেগে খেলতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনা সৃষ্টি করে যথারীতি মিডিয়ার কোল জুড়ে বসে রয়েছেন৷ এই পরিস্থিতিতে ডেভিড বেকহ্যাম নামের এক প্রবীণ ফুটবল প্লেয়ার, যার মাথার চুলের কেয়ারি, গায়ের উল্কি এবং সহধর্মিণী পশ স্পাইস ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামকে নিয়েই বেশি আলোড়ন হয়ে থাকে – সেই ‘বেক' কাতারি মালিকানার একটি ফরাসি ক্লাবের হয়ে খেললেন কি না খেললেন, তা-তে ফুটবলমোদীদের কি আসে যায়, এ রকমই একটা গা-সারা ভাব দেখা যাচ্ছিল৷
বয়স যে বেকহ্যামকেও ছেড়ে কথা বলে না, বার্সেলোনার বিরুদ্ধে খেলায় তাঁর ফর্ম দেখে অতিবড় বেকহ্যাম ফ্যানরাও তা বলতে বাধ্য হয়েছেন৷ ৩৭ বছরের বেকহ্যামের শরীর যেন আর এই ক্ষিপ্র গেমের উপযুক্ত নয়, তা তিনি নিজেকে যতই ফিট রাখুন না কেন৷ বার্সার বিরুদ্ধে খেলায় বেকহ্যাম যেন ছিলেন পিএসজির সবচেয়ে দুর্বল সংযোগ৷ বার্সেলোনার দ্রুত পাসের খেলায় যেন তিনি থৈ পাচ্ছিলেন না৷ ট্যাকল করতে গিয়ে দেখছিলেন তাঁর সে পর্যন্ত পৌঁছনোর গতিবেগ নেই৷
পিএসজি কিন্তু বেকহ্যামকে গোড়া থেকেই মাঠে নামিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে যে তারা শুধু জার্সি আর ফ্যান আর্টিকেল বেচার জন্য বেকহ্যামকে আনেনি৷ বেকহ্যাম পিএসজির খেলাকে বার্সার গোলের দিকে ফেরাবেন, তাঁর চিরকালের নিখুঁত পাসগুলি দিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করে দেবেন, এটাই ছিল পরিকল্পনা৷ বেকহ্যাম সে প্রত্যাশা পূর্ণ না করতে পারলেও, নিজের অথবা দলের মুখে চুনকালি পরাননি৷
‘ইসি প্যারি'
বিশেষ করে সেই দল যখন বার্সেলোনার মতো ক্লাবের সঙ্গে খেলায় পর পর দু'বার এক গোল পিছিয়ে থেকেও আবার ইকোয়ালাইজ করতে পেরেছে, কোয়ার্টার-ফাইনালের ফার্স্ট লেগে বার্সাকে প্যারিস থেকে ফেরত পাঠিয়েছে ২-২ গোলের স্কোর নিয়ে৷ যে বার্সাকে লোকে বলে ইতিহাসের সেরা ক্লাব দল৷ যাদের তারকা লিওনেল মেসিকে লোকে বলে চিরকালের সেরা ফুটবল প্লেয়ার৷
আর পিএসজি? সেটা আবার কি? প্যারি' সাঁ-জার্মাঁ, যাদের কাতারি মালিকরা নাকি গত দু'বছরে শুধু প্লেয়ার কেনায় কমপক্ষে ২৫ কোটি ইউরো খরচ করেছেন৷ এবং বার্সার বিরুদ্ধে খেলায় পিএসজি প্রমাণ করে দিয়েছে, ট্যাঁকে রেস্ত থাকলে এ রকম খুচরো প্লেয়ার দিয়েও একটি খাঁটি দল গড়ে তোলা যায়৷
সাধে কি মঙ্গলবার খেলার শেষে প্লেয়াররা য়খন ড্রেসিং রুমে ফিরছে তখন স্টেডিয়ামের স্পিকার থেকে গর্জন আসে: ‘‘ইসি...'' ‘‘প্যারি'...'' জনতা উত্তর দেয়৷ ‘এই হলো প্যারিস', যেখানে আসতে ভবিষ্যতে বিপক্ষদলের ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, রেয়াল মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বের্নাবেউ কি বার্সেলোনার ক্যাম্প নু-এর মতোই প্রাণ কাঁপবে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)