আর এটা আপাতত পাবেন ষাটোর্ধ্বরা৷ অবশ্য বুস্টার ডোজ নিতে নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা৷
১৯ ডিসেম্বর অনেকটা ঘটা করেই বুস্টার ডোজ নিলেন পাঁচ মন্ত্রী৷ নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক৷ আর নিয়েছেন সেই স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা, যিনি প্রথম বাংলাদেশে করেনার টিকা নিয়েছিলেন৷
করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ বাংলাদেশেও এসে গেছে৷ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন৷ বলা হচ্ছে সেই কারণেই প্রধানত বুস্টার ডোজের উদ্যোগ৷ তাহলে সেটা শুধু ষাটোর্ধ্ব নাগরিদের জন্য কেন? এর জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে এপর্যন্ত যারা করেনায় মারা গেছেন তাদের ৮৫ ভাগেরই ৬০ এর বেশি বয়স৷ দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য এই উদ্বেগ আর সুরক্ষা অবশ্যই প্রশংসনীয়৷ তবে প্রশ্ন আছে দেশের সব নাগরিকের সুরক্ষা কি সম্ভব হয়েছে? সবাইকে কি টিকার আওতায় আনা গেছে? সবাইকে টিকা না দিয়ে বুস্টার ডোজ শুরু করা কোনো অসাম্য কী না?
দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের৷ সেই হিসেবে মোট ১২ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে৷ আর দুই ডোজ করে টিকা দিতে মোট টিকা লাগবে ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডোজ৷ এপ্রিল মাসের মধ্যে এই টিকা দিতে হলে এখন পর্যন্ত যা দেয়া হয়েছে সেই বিবেচনায় আরো ১৫ কোটি ডোজ টিকা লাগবে৷ কিন্তু সরকারের হাতে আছে এখন টিকা আছে চার কোটি ৬৩ লাখ৷
তবে সরকার বলছে চলতি মাসেই আরো ছয় কোটি ৫৫ লাখ টিকা আসবে৷ ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে ৯ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে৷ সেই হিসেব করলে মার্চ মাসে ১৬ কোটি ডোজের বেশি টিকা আসছে বাংলাদেশে৷ সেটা হলে টিকা নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু সরকারের পরিকল্পনায় সবার জন্য যদি বুস্টার ডোজের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে কিন্তু এই টিকায় কুলোবে না৷ আর বুস্টার ডোজ তো সবার প্রাপ্য৷
তাই প্রশ্ন এখানে দুইটি:
১.সবাই দুই ডোজ টিকা পাওয়ার আগে বুস্টার ডোজ কি অসাম্য সৃষ্টি করবে?
২. সবাইকেই কি বুস্টার ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে?
ষাটোর্ধ্ব কত নগরিক এখন পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হাতে সঠিক সংখ্যাটি এখনও নাই৷ তারা বলছেন ষাটোর্ধ্বদের ৬০ ভাগ টিকা পেয়েছেন৷ কিন্তু তারা সবাই কি দুই ডোজ পেয়েছেন৷ এই হিসাব করতে আরো সময় নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ হিসাব থাকলে তারা বলে দিতে পারতেন ষাটোর্ধ্বদের বুস্টার ডোজ দিতে কত টিকা লাগবে৷ তবে সাধারণ ভাবে একটি হিসাব বের করা যায়৷ দেশের মোট নাগরিকদের ৬.১ ভাগ ষাটোর্ধ্ব ৷ জনসংখ্যা ১৭ কোটি ধরলে তাদের সংখ্যা এক কোটির বেশি৷ তার ৬০ ভাগ ৬০ লাখের বেশি৷ তাহলে বুস্টার ডোজ দিতে ৬০ লাখের বেশি টিকা লাগবে৷ আর দেশের সবাই যদি টিকা পেয়ে যায় তাহলে সবাইকে বুস্টার ডোজ দিতে লাগবে ১২ কোটি ৮০ লাখ অতিরিক্ত টিকা৷
কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ পেয়েছেন ছয় কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার ৮০১ জন৷ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন চার কোটি ৭৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪২৫ জন৷ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১০ জন৷ শতকরা হিসেবে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫০ ভাগের বেশি মানুষ৷ আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৫ ভাগের বেশি৷ এটা মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগের হিসেবে৷
বুস্টার ডোজ নিবন্ধন করেই নিতে হবে৷ তাই সুরক্ষা অ্যাপটি আপডেটেড না করা পর্যন্ত আসলে বুস্টার ডোজ ওই অর্থে শুরু হচেছ না৷
করোনায় এপর্যন্ত বাংলাদেশে মারা গেছেন ২৮ হাজার ৫২ জন৷ মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৯৮৬ জন৷ যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সের সর্বোচ্চ আট হাজার ৭০১ জন৷ শতকরা হিসেবে ৩১.২ ভাগ৷ মৃত্যুর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা৷ তাদের সংখ্যা ছয় হাজার ৬১৪ জন৷ শতকরা হার ২৩.৫৮৷ তৃতীয় অবস্থানে ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা৷ তাদের সংখ্যা চার হাজার ৮৬৯ জন৷ শতকরা হিসেবে ১৭.৩৬ ভাগ৷
এই হিসেব দেখলে এটা স্পষ্ট যে এখনকার বুস্টার ডোজের বয়স সীমা সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ধরা উচিত ছিলো৷