বিশ্বভারতীর ফলকে নেই রবি ঠাকুরের নাম, প্রতিবাদের ঝড়
২৮ অক্টোবর ২০২৩বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে বীরভূমের শান্তিনিকেতন৷ এর ধারাবাহিকতায় যে ফলকটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বসানো হয়েছে, তাতে নেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম৷ শুরু হয়েছে বিতর্ক৷
ফলকে নেই রবি
ইউনেস্কো-এর স্বীকৃতি পাওয়ার পর বিশ্বভারতীর উপাসনা ঘর, ছাতিমতলা ও রবীন্দ্র ভবনের উত্তরায়ণের সামনে সম্প্রতি শ্বেতপাথরের ফলক বসানো হয়েছে৷ তাতে লেখা হয়েছে, ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷' তার নীচে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদী ও উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম৷ কিন্তু নেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম৷
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষোভ জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য৷ তিনিই প্রতিষ্ঠাতা৷ তার নামই সরিয়ে দিয়েছে!''
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের বাইরে কবিগুরু মার্কেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে স্থানীয় তৃণমূল৷ অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে বিশ্বভারতীর সাবেক শিক্ষার্থীরাও৷ শনিবারও জারি রয়েছে এই কর্মসূচি৷
বইছে সমালোচনার ঝড়
এ ঘটনার পর বিভিন্ন স্তর থেকে বিশ্বভারতীর নিন্দা শোনা যাচ্ছে৷ আশ্রমিক থেকে শুরু করে সাবেক ও বিশ্বভারতীর শিক্ষকদের একাংশ ক্ষোভ জানিয়েছেন৷ সমালোচনার তীর উপাচার্যের দিকেই৷
ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, "বর্তমান উপাচার্য বিশ্বভারতীর হর্তা-কর্তা-বিধাতা হয়ে গেছেন৷ রবীন্দ্রনাথ বলে কেউ ছিলেন, আজ বোধহয় তারা ভুলে গেছেন৷ এমন ঘটনা এখানে আগে কখনো ঘটেনি৷''
বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও অসন্তুষ্ট৷ রাজভবন সূত্রে জানা গেছে, তিনি বিশ্বভারতীর উপাচার্যের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন, কীভাবে বিশ্বকবির নাম বাদ পড়ল৷
বিশ্বভারতীর সাবেক উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘‘কোথাও হেরিটেজ হলে সেখানকার ফলকে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা থাকে৷ এক্ষেত্রে সেটা হয়নি, বরং নাম কেনার চেষ্টা হয়েছে৷’’
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত নিম্ন রুচির বিজ্ঞাপন৷ শান্তিনিকেতনের স্বীকৃতি লাভের পিছনে বর্তমান আচার্য বা উপাচার্য, কারো কোনো ভূমিকা নেই৷ এই খবরটা আমাকে অত্যন্ত বিচলিত করায় আমি ফেসবুকে লিমেরিক লিখেছি৷''
প্রেসিডেন্সি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ফলক বদলে দেবেন বলে শোনা যাচ্ছে, দেখা যাক কী পদক্ষেপ নেয়া হয়৷ তবে তারা তাড়াহুড়ো করে ফলক না লাগালেই পারতেন৷ যদিও শুরু থেকেই এটা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়৷’’
রাজনৈতিক তর্ক
কেন্দ্রের সমালোচনা তো করেছেন, তৃণমূলকেও ছাড়েননি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম৷ তার বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান মানে মোদীর ছবি লাগাতে হবে, আর রাজ্যের প্রতিষ্ঠান মানে দিদির ছবি লাগাতে হবে৷ বিশ্বভারতী যা করেছে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটাই দেখা যাচ্ছে৷ দুজনের ছবিই ফেলে দিতে হবে৷’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্রনাথ সমার্থক৷ রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীকে খাটো করতে ওখানে আর একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিশ্বভারতী কেন্দ্র থেকে কত টাকা পেয়েছে আর মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় কত অনুদান পেয়েছে, সেটা দেখতে হবে৷''
বিজেপি নেতা ও এলাকার সাবেক সাংসদ অনুপম হাজরাও উপাচার্যকে আক্রমণ করেছেন৷ তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘‘নিজের উপাচার্য পদ বাঁচানোর তাগিদে প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে, এই ওভারস্মার্ট ভণ্ড বিশ্বভারতীর উপাচার্য আরও ক্ষতি করবেন৷’’
ফলক প্রতিষ্ঠার আইনি বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ বিশ্বভারতীর শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য, যেখানে ফলক লাগানো হয়েছে, তার মালিকানা হয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের, নইলে পূর্ত দপ্তরের৷ ফলক বসানোর আইনি অধিকার উপাচার্যের নেই৷ প্রশ্ন উঠেছে, নাম ব্যবহারের আগে কি আদৌ প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নেয়া হয়েছিল?
এ সব প্রশ্নে এখনো মুখ খোলেননি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ৷ তবে বিতর্কের জেরে তাদের পিছু হঠার ইঙ্গিত মিলেছে৷ সূত্রের দাবি, ওই ফলক অস্থায়ী ভাবে বসানো হয়েছে৷ পরে সরিয়ে দেয়া হবে৷ যদিও কবে ফলক সরানো হবে বা বিশ্বকবির নামযুক্ত নতুন ফলক বসবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে৷