বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার যত পদ্ধতি
২২ ডিসেম্বর ২০২১২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে এরইমধ্যে ৪৮ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন। । আর পঞ্চম ধাপের নির্বাচন ৫ জানুয়ারি। সেই ধাপেও বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ৫২ জন।
বিভিন্ন এলকায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে হুমকি ধামকি ছাড়াও আরও অনেক কৌশলে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন অনেকে। এসব কৌশলের মধ্যে মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি, আর্থিক সুবিধা দেয়া, মনোনয়পত্র বাতিল করানো বেশি কার্যকর।
ফেনীর দাগনভুঞা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে এবার বিনা ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন। এরকমই একটি ইউনিয়ন মাতুভুঞাতে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুর রহিমসহ সবাই নাম প্রত্যাহার করেছেন। আব্দুর রহিম জানান, তিনি তার ছেলের কথা চিন্তা করে প্রত্যাহার করেছেন। কারণ তার ছেলের জীবন নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি বলেন," আমার ছেলে কান্নাকাটি করে বলেছে বাবা আমরা কেউ বাঁচতে পারব না। তুমিও না আমিও না। আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিলো। পাস করতাম বলে বিশ্বাস। কিন্তু জীবন না থাকলে পাস করে কী হবে?”
তিনি বলেন," শুধু আমি একা নই আমরা ছয়জন ভয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছি।”
তবে ওই ইউনিয়নে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,"তারা স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করেছেন। কোনো চাপ সৃষ্টি করা হয়নি।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"বিএনপি নির্বাচনে নেই বলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা ভোটে জয় পাচ্ছেন। তারা থাকলে হয়তো এরকম হতো না।”
ওই একই উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলী রেজা চৌধুরীর মনোনয়নপত্র কৌশলে বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ধকল সামলাতে না পেরে তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার ছেলে মো. বাদশা চৌধুরী বলেন,"আমার বাবার মনোনয়নপত্রে যারা প্রস্তাবক ও সাক্ষী হন তাদের ভয় ভীতি দেখিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর প্রস্তাবক ও সমর্থক ঠিক নেই বলে আমার বাবার মনোনয়নপত্র বাতিল করানো হয়। এরপর থেকেই আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন।” এই পরিস্থিতি দেখে আরেকজন প্রার্থী মো. রহমতুল্লাহ আদালতে গেলে আদালত দুই মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জের হাইজাদী ইউনিয়নে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার আলী হোসেন। তিনি অন্য প্রার্থীদের হুমকি বা সুবিধা দিয়ে একক প্রার্থী হয়েছেন বলে অভিযোগ। তবে শেষ পর্যন্ত হাওয়া বেগম নামে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী অনঢ় ছিলেন। কিন্তু তাকে নারী কোটায় মেম্বার করার প্রতিশ্রতি দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় মেম্বার পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সবাইকে বসানো হয়েছে যাতে হাওয়া বেগমকে মেম্বার করা যায়। এখন হাওয়া বেগমের ওয়ার্ডে আবার ভোট হবে। তবে হাওয়া বেগম বলেন,"আমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। আমি এখনো অসুস্থ। আর কোনো কথা বলতে পারব না।”
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নে তিনজন প্রার্থীকে বসিয়ে দিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন নৌকার আবদুস সালাম সওদাগর। প্রত্যাহারকারীদের একজন হলেন সদ্য সাবেক চেয়াম্যান আহসান হাবীব জুয়েল। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি বলেন,"এখানে মহিউদ্দিন খান আলমগীর সাহেব যা চান তাই হয়। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার আমার ক্ষমতা নাই। ওরা সন্ত্রাস করে সবকিছু নিয়ে যেতে চায়, নিয়ে গেছে। এই ঘটনায় আমার বাবা স্ট্রোক করেছেন। তিনি এখন হাসপাতালে।”
বিনা ভোটে নির্বাচিত সালাম সওদাগর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,"অন্য প্রার্থীরা সবাই নৌকায় আস্থা স্থাপন করেছেন। তাই সবাই মিলে আমাকেসহ নির্বাচন অফিসে গিয়ে একযোগে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছেন। তারা আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তাই হয়েছে।”
এপর্যন্ত পাঁচটি ধাপে ৩৫১ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন। আর মেম্বারসহ সব পদ মিলিয়ে এক হাজার ৫৭০ জন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের(সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন,"ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। শাসক দলের মনোনয়ন পেতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন নির্বাচনে হেরে গেলে তো অনেক টাকা লোকসান হবে। তাই তারা এখন যেকোনো উপায়ে জয়ী হচেছন। সবচেয়ে সুবিধা হলো বিনা ভোটে চেয়ারম্যন হওয়া। এটা হতে তারা তাদের সব ধরনের ক্ষমতা ব্যবহার করছেন।”
এটা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনেরও। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আছে নাকি? নির্বাচন কমিশন তো মিসিং।”
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, প্রার্থীদের নানাভাবে বসিয়ে দিয়ে বিনা ভোটে পাস করার প্রবণতা সম্পর্কে তারাও জানেন। কিছু অভিযোগও পেয়েছেন। তার কথা,"কিন্তু অভিযোগ তো প্রমাণ করতে হবে। আমরা দুই-একটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। সেখানে নির্বাচন স্থগিত করেছি।”