বিধায়ক বাঁচানোর লড়াই শুরু মধ্যপ্রদেশে
১১ মার্চ ২০২০চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে এই দৃশ্য কলকাতা ময়দানে দেখা যেত। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান একে অপরের ফুটবলারদের ভাঙিয়ে আনার জন্য লড়াই করত। ক্লাবের পক্ষে সই করানোর আগে নিজেদের ফুটবলারদের নিয়ে রাখত নিরাপদ আশ্রয়ে। মোদী-শাহের আমলে রাজনীতির ময়দানে এখন হামেশাই এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। যেমন দেখা যাচ্ছে এখন মধ্যপ্রদেশে। কংগ্রেসের ২৩ জন বিদ্রোহী বিধায়ককে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কর্ণাটকে। দলের বাকি বিধায়কদের নিয়ে আসা হয়েছে দিল্লির কাছে গুড়গাঁওতে। কংগ্রেসও তাদের বিধায়কদের নিয়ে যাচ্ছে জয়পুরে অশোক গেহলটের নিরাপদ আশ্রয়ে। যাতে আর কোনও ক্ষতি না হয়। ভারতে এই রাজনীতির নাম দেওয়া হয়েছে 'রিসর্ট রাজনীতি'। কারণ, বিধায়কদের বিলাসবহুল রিসর্টে নিয়ে গিয়ে কার্যত আটকে রাখছে দুই দল। আর কর্ণাটকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার অনুগামী যে বিধায়কদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব পেয়েছেন কর্ণাটকে কংগ্রেসের প্রভাবশালী বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী ডি কে শিবকুমার। এই শিবকুমার এক সময় কর্ণাটকে কংগ্রেস বিধায়কদের দীর্ঘদিন আগলে রেখেছিলেন। তিনি বলেছেন, বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
ঘটনা হল, কর্ণাটক-সহ যে সব রাজ্যে বিরোধী দল ভাঙিয়ে নিজেদের সরকার গঠন করেছে বিজেপি, সেখানে তারা বিরোধী দলকে ভাঙাতে পেরেছে। কিন্তু বিজেপি থেকে বিধায়করদের ভাঙাতে পারেননি কংগ্রেস নেতারা। ভয়ে হোক বা ভক্তিতে, তাঁরা দলের সঙ্গে থেকেছেন। ফলে কমল নাথের মতো শক্তিশালী নেতার পক্ষেও বিজেপি শিবির ভাঙানো অত্যন্ত কঠিন। তাই তিনি নিজের দলের বিধায়কদের ফেরানোর দিকে নজর দিয়েছেন। প্রশ্ন হল, তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন কি? কংগ্রেস নেতারাই স্বীকার করছেন, কাজটা খুবই কঠিন।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সম্ভবত বুধবারই বিজেপিতে যোগ দেবেন। দলের তরফে সম্ভবত এ দিনই রাজ্যসভার প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে। সম্ভবত সিন্ধিয়ার নাম সেই তালিকায় থাকবে। তাঁকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করার কথা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ১৮ বছর ধরে কংগ্রেসে থাকার পর বিজেপি-তে যোগ দিতে যাওয়া সিন্ধিয়ার ওপর এখন প্রবলভাবে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতারা। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী গতকালই বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ করেছিলেন। তারপর মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের সঙ্গে থাকা বিধায়করা বারবার একই অভিযোগ করছেন। রাজ্যের মন্ত্রী জিতু পাটোয়ারি বলেছেন, জ্যোতিরাদিত্য বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। অশোক গেহলটের বক্তব্য, দলের দুঃসময়ে কেন পাশে থাকবেন না নেতারা। আবার এরকম মন্তব্যও কংগ্রেস নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে, সিন্ধিয়ারা তো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। প্রশ্ন হল, তারপরেও কংগ্রেস কেন এতদিন ধরে সেই পরিবারের সদস্যদের মন্ত্রী করল?
সিন্ধিয়া পরিবারের ইতিহাস হল, তাঁদের অনেকেই কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়েছেন বা নরেন্দ্র মোদাীর দল থেকে সোনিয়ার দলে এসেছেন। বিজয়রাজে সিন্ধিয়া কংগ্রেস থেকে জনসঙ্ঘে গিয়েছিলেন। মাধবরাও আবার জনসঙ্ঘ থেকে কংগ্রেসে আসেন। জ্যোতিরাদিত্য তাঁর ঠাকুমার মতো কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে গেলেন। ফলে সিন্ধিয়া পরিবারের কাছে কোনও দলই অচ্ছুৎ নয়। সুযোগ-সুবিধামতো তাঁরা দলবদল করেছেন। ফলে জ্যোতিরাদিত্য সেই দিক থেকে নতুন কিছু করেননি। তিনি পূর্বসূরিদের অনুসরণ করেছেন মাত্র।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)