বিতর্কিতদের মনোনয়নে দোষ দেখছে না দুই দল
২৯ নভেম্বর ২০১৮এবারের নির্বাচনেও সবচেয়ে আলোচিত কক্সবাজারের বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি৷ ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে তার নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়৷ তাই কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বদি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি৷ কিন্তু তার বদলে পেয়েছেন তার স্ত্রী শাহীন আখতার৷ এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে৷ অনেকেই বলছেন, ‘যেই লাউ, সেই কদু’৷
আর টাঙ্গাইল-৩ আসনে মনোনয়ন পাননি আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানা৷ রানা আওয়ামী লীগেরই এক নেতাকে হত্যার দায়ে এখন কারাগারে৷ কিন্তু তাতে কী? আওয়ামী লীগ এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছে রানার বাবা আতাউর রহমান খানকে৷ তাতে এলাকার মানুষ বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ৷
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ সম্ভূর বিরুদ্ধে এক হয়েছিলেন জেলার প্রায় সব আওয়ামী লীগ নেতা৷ তাঁদের অভিযোগ– তিনি দুর্নীতিবাজ৷ তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ করেছেন৷ তারপরও সম্ভূ মনোনয়ন পেয়েছেন৷
একই ধরনের অভিযোগ ছিল বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে৷ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তাঁকে মনোনয়ন না দেয়ার দাবিতে গণভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন৷ তারপরও পঙ্কজ দেবনাথের মনোনয়ন ঠেকানো যায়নি৷
এরকম আরো যারা বিতর্কিত অথচ মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন শাজাহান খান,শামসুর রহমান খান ডিলু, নিজাম উদ্দিন হাজারী, শওকত হাচানুর রহমান, এ কে এম শামীম ওসমান, শেখ আফিল উদ্দিন, রণজিত কুমার রায়, আ স ম ফিরোজ, ফাহমি গোলন্দাজ, ওমর চৌধুরী, মনোরঞ্জন শীল, আবদুল ওয়াদুদ দারা, দবিরুল ইসলাম৷ দুর্নীতি, নির্যাতন ছাড়াও এদের কারো কারো বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর দখলের অভিযোগও আছে৷
এসব প্রার্থী সম্পর্কে নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা যাচাই-বাছাই করেই প্রার্থী দিয়েছি৷ যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে তা তো আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়৷ আর কেউ খারাপ হলে তার স্ত্রী বা পিতা খারাপ হবেন, তা তো বলা যায় না৷ তাই যদি হয়, তাহলে তারেক রহমান তো দণ্ডিত৷ তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান তো নির্বাচন করতে আসতে চেয়েছিলেন৷ অনেকেই তো তাকে স্বাগত জানিয়েছেন৷’’
প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘নির্বাচনের সময় এরকম হয়৷ নির্বাচন শুরু হয়ে গেলে এসব থাকবে না৷’’
এদিকে বিএনপি'র বিতর্কিত প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত আবদুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীমও রয়েছেন৷ তাকে জয়পুরহাট-১ আসনের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে৷ হালে আলোচনায় এসেছেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি৷ তাকে পটুয়াখালী-৩ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি৷ তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগ আছে৷
সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আমিনুল হক, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফার বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে৷ তারা রাজশাহী অঞ্চলের৷ তাদের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে ওই অঞ্চলে জেএমবি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতার অভিযোগ আছে৷
এছাড়া ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থি বলে পরিচিতি পাওয়াদের মধ্যে আবু হেনা (রাজশাহী-৪), আলমগীর কবির (নওগাঁ-৬), জহিরউদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), সাখাওয়াত হোসেন বকুল (নরসিংদী-৪) এবং শহীদুল হক জামালকেও (বরিশাল-২) মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি৷
পিরোজপুর-১ আসনে বিএনপি'র ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র শামীম সাঈদী৷ তিনি জামায়াতের প্রার্থী৷ তাকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি৷এছাড়া যুদ্ধপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও মনোনয়ন দিয়েছে দলটি৷
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান খান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা জয়ের লক্ষ্যে প্রার্থী দিয়েছি৷ এখন জনগণই বিবেচনা করবে৷ আর মামলা থাকলেই অপরাধী নয়৷ সেটা আদালতে প্রমাণ হতে হয়৷ যাদের বাংলাভাই ও জেএমবি'র সহযোগী বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ সত্য নয়৷ আমরা যখন ক্ষমতায়, তখনই বাংলা ভাই, শায়েখ রহমানদের গ্রেপ্তার করে বিচার করেছি৷ অন্যরা স্লোগান দিয়েছে৷’’
তিনি আরো বলেন,‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধে কেউ দণ্ডিত হলে তার সন্তান তো তার জন্য দায়ী নয়৷ তাদের তো দণ্ড হয়নি৷ সাঈদীর পুত্র জামায়াত করেন৷ জামায়াত তাকে মনোনয়ন দিয়েছে৷ জামায়াত ২০ দলীয় জোটে আছে৷ জোট ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছে৷ তাই সাঈদীর পুত্র ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছন৷’’
দুই দলেই বিতর্কিত প্রার্থীদের এই মনোনয়ন নিয়ে ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা)-র চেয়ারম্যান মুনিরা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা যাদের বিতর্কিত বলছি, তারা কীভাবে বিতর্কিত৷ তারা তো আদালতে দণ্ডিত হননি৷ আর এক জনের অপরাধের জন্য তো তার পরিবারের সদস্যদের দায়ী করা যায় না৷ এটা করা হলে তাদের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচনে দলগুলো তাদের পছন্দমতো প্রার্থী নির্বাচন করে৷ তারা জয়ের জন্য প্রার্থী নির্ধারণ করে৷’’