বিচার নেই বলে বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা
৫ অক্টোবর ২০২২বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরিবার এবং পরিচিত পরিবেশেই শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি৷ এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিশুদের ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন৷ আর এই শিশুরা পরবর্তী জীবনে দুঃসহ মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট নিয়ে বেড়ে উঠছে৷
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট এই আট মাসে সারাদেশে ৫৭৪ জন কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ এছাড়া ৭৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ এই শিশুরা পাঁচ থেকে ১৮ বছর বয়সের৷ তবে অধিকাংশের বয়সই ১২ থেকে ১৪ বছর৷
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার বিধি থাকলেও কার্যকর হয় না৷ জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, ‘‘এটা পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে হিসাব৷ কিন্তু বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ৷ সামাজিকসহ নানা কারণে অনেক ঘটনায়ই মামলা হয় না৷ অনেক ঘটনা প্রকাশও করা হয় না৷''
এদিকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, গত বছর(২০২১) সারাদেশে ৮১৮টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ ২০২০ সালের তুলনায় যা ৩১ শতাংশ বেশি৷ বেশির ভাগ শিশু ধর্ষণ পারিবারিক পরিবেশে পরিচিতদের মাধ্যমেই হয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ তারাও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতেই প্রতিবেদন তৈরি করেছে৷
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে গড়ে ৭২ টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ যা হারের দিক থেকে গত বছরের চেয়ে বেশি৷ অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) গাইবন্ধায় পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ৫৫ বছর বয়সের এক পুরুষ ধর্ষণ করেছে৷ এর আগেও সে আরো তিনবার ধর্ষণের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছে৷ ছাড়া পেয়ে আবার ধর্ষণ করছে৷ তাহলে এটা থেকেই বোঝা যায় কেন শিশু ধর্ষণ বাড়ছে৷ আইন আছে, বিচার নেই৷ আবার শিশুরা পরিচিত পরিবেশে, পরিবারের মধ্যেই ধর্ষণের শিকার হয় বেশি৷ এটা অনেক সময়ই প্রকাশ হয় না৷ প্রকাশ হলেও নানা দিক বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত আপস হয়৷ ফলে শিশু ধর্ষণ বাড়ছেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘শিশুরা সবচেয়ে দুর্বল৷ তারা বুঝতেও পারে না৷ পরিবার থেকে এব্যাপারে তাদের সচেতনও করা হয় না৷ আর পরিবারের লোকজন পরিচিতদের বিশ্বাস করে৷ যার পরিণতি নেমে আসে শিশুদের ওপর৷''
শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, ‘‘২০১৪ সালের জরিপে দেখা যায় ধর্ষণের ৬০ ভাগ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করে না৷ ২০১৬ সালে দেখা যায় মেয়েদের ৮০ ভাগ মামলা করতে যায় না৷''
তিনি বলেন, ‘‘যে যত বেশি দুর্বল তারাই তত বেশি ধর্ষণের শিকার হয়৷ তাই শিশু এবং প্রতিবন্ধিরা ধর্ষণের শিকার হয় বেশি৷ আর পরিচিত পরিবেশ এবং পরিবারের মধ্যে ধর্ষণের শিকার বেশি হওয়ার কারণ রেপিস্ট জানে এই পরিবেশে তাকে ক্যাপটিভ বানানো সহজ৷ সে এর সুযোগ নেয়৷''
তার মতে, ‘‘পারিবারিক শিক্ষা এর জন্য জরুরি৷ শিশুকে বিষয়টি বুঝাতে হবে৷ আর তারা আগে মায়ের কাছেই বলে৷ মাও সামাজিক পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় তা প্রকাশ করেন না৷''
তিনি বলেন, ‘‘থানা মামলা নিতে চায় না৷ আর মামলা নিলেও বিচার পাওয়া যায় না৷ উচ্চ আদালতে ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির ১১ লাখ মামলা পেন্ডিং আছে৷ আর নারীদের করা নানা ধরনের মামলা পেন্ডিং আছে ৩৩ লাখ৷''
তারা বলেন, ধর্ষণের শিকার এই শিশুদের সারাজীবন এর নেতিবাচক প্রভাব বহন করতে হয়৷ তারা নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার শিকার হয়৷ আবার সমাজ ও পরিবারেও তারা নানা প্রতিকুলতার মধ্যে থাকেন৷ এটা শুধু আইনের মাধ্যমে দূর করা যাবে না৷ সামাজিক ও পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন আনতে হবে৷