বিএনপির টার্গেট কী, আওয়ামী লীগ কী ভাবছে?
১ ডিসেম্বর ২০২১বিএনপি সরকার পতনের কথাও বলছে৷ আওয়ামী লীগ অবশ্য তা আমলে নিচ্ছে না৷ তাহলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে৷
৩০ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে গণ অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি৷ আর সেই কর্মসূচির পরই আরো ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা৷ ওই দিনের পর থেকে বিএনপি এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলো প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করছে৷ মঙ্গলবার দেশের সব বিভাগের সমাবেশে বিএনপি নেতাদের মুখে সরকারের পতন বিষয়টিই বেশি উচ্চারিত হয়েছে৷ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় বলেছেন,"সরকারের পতন শুরু হয়ে গেছে৷” আর কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, "খালেদা জিয়ার চিকিৎসার চেয়ে এখন সরকার পতনের আন্দোলন জরুরি৷”
বিএনপির কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা মনে করেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সহানুভূতি আছে৷ সাধারণ মানুষ মনে করে যে খালেদার বিদেশে চিকিৎসা সরকারই আটকে রেখেছে৷ বিএনপি চাইছে এই সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে ৷ তাই তারা এখন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি দেবে৷ তবে সরকারের মনোভাবের দিকেও তারা খেয়াল রাখছে যাতে এই কর্মসূচিগুলো সহিংস না হয়ে ওঠে৷ নেতা-কর্মীদের বার বার এই বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে৷ তারপরও পুলিশের সাথে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয়েছে৷
বিএনপির নীতি নির্ধারকেরা এখনো অবশ্য সভা-সমাবেশ, অনশনের বাইরে আরো কঠোর কোনো কর্মসূচির কথা ভাবছেন না৷ হরতাল দেয়া হবে কী না জানতে চাইলে এক নেতা জানান, ওই পর্যায়ে এখনো চিন্তা করা হচ্ছে না৷ কারণ এমনিতেই নেতা-কর্মীদের নামে অনেক মামলা৷ নতুন করে আরো মামলা হলে তা সামলানো কঠিন হবে৷
বিএনপি এখন বাইরে কিছুটা গরম আর ভিতরে নরম কৌশলেই আছে৷ তারা সরকারকে নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হলে এটা নিয়ে তারা কোনো রাজনীতি করবে না৷ তবে এই কৌশলে মাঠের দখল নিতে পারলে ভবিষ্যতের কর্মসূচি অন্যরকমও হতে পারে৷
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন,"সরকার পতনের আন্দোলন তো আমরা আগে থেকেই করছি৷ আর এখন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলনও একই সঙ্গে চলছে৷ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলকে আমরা এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি৷ আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই৷ এই কর্মসূচি শেষে আমরা আরো কর্মসূচি দেব৷ কিন্তু সরকার যদি আমাদের পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে যায় তাহলে তো সংঘাত অনিবার্য৷ সেটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের জন্য আমরা সেটা চাই না৷”
তার মতে,"খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠালে তো সরকারের পতন হয়ে যাবে না৷ সরকারের কিসের এত ভয়? তাকে সরকার চাইলে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ দিতে পারে৷ কিন্তু সেটা না দিয়ে রাজনীতি করছে৷''
অন্যদিকে সরকার আসলে বিএনপিকে সীমিত আন্দোলনের সুযোগ দিচ্ছে৷ প্রশাসন বিএনপির কর্মসূচিগুলোর সময় এবং এলাকাও বেধে দিচ্ছে৷ শর্ত মেনেই বিএনপিকে কর্মসূচি শেষ করতে হচ্ছে৷ আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চায় না ৷ তারা এটা নিয়ে রাজনীতি করছে৷ তারা বিএনপিকে তেমন আমলে না নিলেও সামাজিক যেকোনো আন্দোলন নিয়ে সতর্ক আছে৷ বিশেষ করে ছাত্রদের চলমান অর্ধেক ভাড়া ও নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকে পর্যবেক্ষণ করছে৷ এর আগে কোটা সংস্কার ও নিরপদ সড়ক আন্দোলনের মত এই আন্দোলন যাতে প্রবল হতে না পারে সেদিকে নজর রাখছে৷ সরকার মনে করে, আন্দোলন বড় হয়ে গেলে সেটা বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ কাজে লাগাতে পারে৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সেই চিন্তা স্পষ্টও করেছেন৷ তিনি দাবি করেছেন,"রামপুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র নিহতের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটা বিএনপি জাময়াতের অপকীর্তি কী না খতিয়ে দেখতে হবে৷” আর তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, "একটি মহল ছাত্রদের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করছে৷” প্রধানমন্ত্রী বলেছেন," দুর্ঘটনা ঘটলে ভাঙচুর কোনো সমাধান নয়৷”
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে বোঝা গেছে যে তারা মনে করেন, দেশে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষমতা বিএনপির নাই৷ তাদের নেতা-কর্মীরা নিজেদের নিরাপদে রেখেই নানা কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন৷ সহিংস হওয়ার মত সাহস তাদের নেই৷ বিরোধী দলগুলোকে রাজনীতির সুযোগ দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আরো কিছু দেশের চাপও আছে ৷ তাই সরকার নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আপাতত বাধা দেবে না৷
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন,"আওয়ামী লীগ কোনো আন্দোলনের হুমকিতে ভয় পায় না৷ দেশের সব মানুষের সব দলের বাক স্বাধীনতা আছে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার আছে৷ কিন্তু কেউ যদি আন্দোলনের নামে সহিংসতা করে৷ জ্বালাও পোড়াও করে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে৷ আমরা আওয়ামী লীগ তাদের সহায়তা করব৷”
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"বিএনপির নেতৃত্ব এমন পর্যায়ে নেমে গেছে যে তারা এখন তাদের নেত্রীর মৃত্যু হলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়৷ তারা যদি খালেদা জিয়ার সত্যিকারের চিকিৎসা চাইতো, চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চাইতো তাহলে তার দণ্ড মওকুফের জন্য দোষ স্বীকার করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করত৷ তারা সেই আইনি পথে না গিয়ে আন্দোলন করছে৷ রাজনীতি করছে৷”