বিএনপিতে কমিটি ভাঙা-গড়ার ‘ঝড়’
১৪ জুন ২০২৪বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ দেশের চারটি মহানগরে বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়৷ অন্য দুটি কমিটি হলো চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি৷ এছাড়া যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও একই সঙ্গে বিলুপ্ত করা হয়েছে৷
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলেরও চারটি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে৷ ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম- এই চারটি কমিটি বৃহস্পতিবার বিলুপ্ত করা হয়৷ এর আগে গত ১ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয় ৷ ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন রফিকুল ইসলাম ও নাছির উদ্দীন৷ একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটিও ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়৷ তারপর ২৫ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়৷
বৃহস্পতিবার রাতে ৯টি কমিটি বিলুপ্তির তথ্য জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে৷ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ওই কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে৷ কমিটিগুলো বাতিল করা হলেও নতুন কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি৷ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু বলা হয়েছে, বিলুপ্ত কমিটিগুলোর নতুন কমিটি পরে ঘোষণা করা হবে৷
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার বিকালে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা হঠাৎ কোনো ঘটনা নয়, দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম৷ ওই কমিটিগুলোর মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গেছে৷ তাই বাতিল করা হয়েছে৷ দলকে শক্তিশালী করতে এই ধরনের সাংগঠনিক কাজ অব্যাহত থাকবে৷''
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘দলকে আরো কার্যকর এবং গতিশীল করতে অবশ্যই দলে পুনর্গঠনের দরকার আছে৷ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিশ্চয়ই সেটা বুঝে কাজ করছেন৷ এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে৷''
আর যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার খন্দকার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘‘সার্বিকভাবে দলের নেতা-কর্মীরা সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন৷ তবে তারপরও তো কিছু সমস্যা ছিল৷ সবার কাছ থেকে তো দল প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া পায়নি৷''
তার কথা, ‘‘আন্দোলনে কার কী ভূমিকা ছিল, এখন কে কী ভূমিকা রাখছেন তার একটি মূল্যায়ন তো আছে৷ আমরা আমাদের মতো মূল্যায়ন করেছি৷ স্থায়ী কমিটি মূল্যায়ন করেছে৷ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে মূল্যায়ন আছে৷ সেই মূল্যায়নের পুরস্কার, তিরস্কার দুই দিকই আছে৷''
দলকে গতিশীল করার জন্যই এখন এইসব কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপির ৭৭টি সাংগঠনিক কমিটি এক যোগে বিলুপ্ত করা হয়েছিল বলে বিএনপির এক নেতা জানান৷ ওই সময় কিছু নেতাকেও দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল, যারা ‘মাইনাস টু থিওরি' বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছিলেন৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই নেতা বলেন, ‘‘এবার সেই শিক্ষা থেকেই কাজ হচ্ছে৷ মনে করা হচ্ছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কিছু নেতা দলের মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছেন, তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে৷''
বিএনপির আরেক নেতা বলেন, ‘‘যে কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আব্দুস সালাম ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ আরো প্রভাবশালী নেতারা রয়েছেন৷ তারাই তো এখন আরো অনেক সিনিয়র নেতাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন৷ তারা কী করেছেন জানতে চাইবেন৷ ফলে এটা কোন পর্যন্ত গড়ায় এখনই তা ঠিক বলা যাচ্ছে না৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেও নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ আছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘কোনো একটি ইউনিটের সভাপতি গ্রেপ্তার হলে দেখা গেছে পুরো কমিটি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে৷ কেউ জেলে গেলে বাকিরা আন্দোলন থেকে দূরে সরে গেছে৷ এটা আসলে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য খুবই খারাপ উদাহরণ৷''
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘দলে গঠন, পুনর্গঠন আগেই দরকার ছিল৷ আমরা যেহেতু আন্দোলনে ছিলাম, তাই তখন করতে পারিনি৷ এটা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ আমাদের সঙ্গে মতামত নিয়েছেন৷ সেটাই হয়তো এখন শুরু হয়েছে৷''
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এটা শুরু হলো মাত্র৷ এটা অব্যাহত থাকবে৷ আরো অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে সেগুলোও পুনর্গঠন করা হবে৷ দলকে আরো শক্তিশালী করতে এটা দরকার৷''
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘গঠন ও পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে সংগঠনকে সুসংহত করা, ঐক্যবদ্ধ করা, শক্তিশালী করা এগুলোই মূল উদ্দেশ্য৷ দলের হাইকমান্ড সেটাই প্রত্যাশা করে৷ সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷''