বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব: আলোচনায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪চলচ্চিত্রের ভাষায় বেরিয়ে আসে মানবাধিকার, মূল্যবোধ এবং বিশ্ব রাজনীতির নানা বিষয়৷ এর জন্য আলাদা পরিচিতি আছে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের৷ চলতি বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি৷ সিনেমার পর্দায় আর আলোচনায় তাই চলমান ইসলাইল-হামাস যুদ্ধ৷
১৫ ফেব্রুয়ারি উৎসবের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে অবশ্য খুব একটা প্রতিবাদ বা আলোচনা দেখা যায়নি৷ যদিও লাল গালিচায় ‘ফ্রি গাজা' লেখা বেশ কিছু প্রতিবাদলিপি চোখে পড়েছে৷
কঠোর বিবৃতির দাবি
জার্মানির এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবকে বলা হয় বার্লিনালে৷ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নিজেদের সৃষ্টি নিয়ে হাজির হন চলচ্চিত্র নির্মাতা, গল্পকথকেরা৷
সেই বার্লিনালেতে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনীদের পক্ষ থেকেই যে প্রতদিবাদ এসেছে বিষয়টি তেমন নয়৷ উৎসবে যোগ দিতে আসা বিভিন্ন সংগঠনও দেখিয়েছে নানা প্রতিবাদ৷ করেছে উন্মুক্ত আলোচনা৷
উৎসবে বিভিন্ন বিভাগের কিউরেটরসহ বার্লিনালের ৬০ ‘কন্ট্রাক্টর' এক খোলা চিঠিতে গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে কঠোর বিবৃতি প্রদানের জন্য উৎসব আয়োজনকদের আহ্বান জানায়৷
অবশ্য উৎসবের ব্যবস্থাপনা কমিটির দুই সদস্য মারিয়েট্টে রিজেনবিক এবং কার্লো শাটরিয়ান বক্তৃতায় মধ্যপ্রাচ্য সংকটে সকল ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন৷ তারা বলেন, ‘‘সবার কষ্টের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে এবং জটিল এই বিশ্ব পরিস্থিতিতে সবার জন্যই এই উৎসব উন্মুক্ত থাকতে হবে৷’’
তবে ওই অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, এই বিবৃতি যথেষ্ট নয়৷
বয়কটের আহ্বান ‘স্ট্রাইক জার্মানির’
এদিকে উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের আরেকটি অংশ ফোরাম এক্সপান্ডও একটি খোলা চিঠি লিখে৷ ১০০ কিউরেটরের সাক্ষররসম্বলিত এই চিঠিতে উৎসব শুরুর আগে যেই চারজন শিল্পী নিজেদের প্রত্যাখ্যান করে নিয়েছিলেন তাদের প্রতিবাদকে সমর্থন করেন৷
ওই চার শিল্পী নিজেদের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ‘স্ট্রাইক জার্মানি' মুভমেন্টের সাথে সহমর্মিতা পোষণ করেন৷ স্ট্রাইক জার্মানি মুভমেন্ট ‘জার্মান সরকারের যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানাতে অনিচ্ছার' প্রতিবাদে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বয়কটের আহ্বান জানায়৷
ইসরায়েলি চলচ্চিত্র
এগিয়ে এসেছেন ইসরায়েলি শিল্পীরাও৷ কুন্ঠা বোধ করেননি নিজ দেশের সরকারের সমালোচনা করতে৷ বার্লিনালেতে বিখ্যাত ইসরায়েলি পরিচালক আমোস গিতাই তার নতুন চলচ্চিত্র শিকুন প্রদর্শন করেন৷ চলচ্চিত্রটিতে তিনি গত বছর ইসরায়েলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিবাদকে ফুটিয়ে তুলেন৷
নেতানিয়াহুকে ইসরায়েলের জন্য ‘হুমকি' মনে করেন গিতাই
এদিকে বালিনালেতে এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারের বিষয়ে নিজের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা৷ সাক্ষাৎকারের শুরুতে হামাসের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় -এমন মত দেন৷ সেইসাথে তিনি বলেন, ‘‘নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোটের হাতে ইসরায়েল জিম্মি হয়ে আছে৷’’
ডয়চে ভেলেক তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী (নেতানিয়াহু) ইসরায়েলকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে৷
‘‘যেহেতু তার কোনো নৈতিক বাধা নেই, তাই তিনি ইসরায়েলের সমাজের সবচেয়ে খারাপ উপাদানগুলোকে একত্রিত করেছেন: উগ্র-জাতিয়তাবাদী, বর্ণবাদী, উগ্রপন্থি, আল্ট্রা-অর্থোডক্স, যারা নারীদের অধিকারের এবং এলজিবিটি গোত্রের মানুষের অধিকারের বিরোধী৷’’
জার্মানির প্রতি জোরালো নৈতিক অবস্থান নেওয়ার আহ্বান
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিয়ে তৈরি উৎসবে আসা আরেকটি চলচ্চিত্র হলো ‘নো আদার ল্যান্ড'৷ ছবিতে দেখানো হয়, পশ্চিম তীরে ইয়াত্তা গ্রামে দখলদারিত্বের প্রতিবাদে তরুণ অধিকারকর্মী বাসেল আদ্রার সংগ্রাম৷ অবশ্য বাসেল আদ্রা নিজেও এই মুভিটির একজন সহপরিচালক৷
ছবিতে দেখানো হয়, তিনি কীভাবে ইসরায়েলি সাংবাদিক ইয়ুবাল আব্রাহামের সাথে যুক্ত হন৷ ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদে আরবি ভাষা শিখে আব্রাহাম একজন অধিকারকর্মী হয়ে উঠেন৷
ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্রাহাম বলেন, ‘‘আমি জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে জার্মানদের মধ্যে অপরাধের বোধ রয়েছে৷’’
জানালেন, তার অনেক আত্মীয়কেই হলোকাস্টের সময়ে হত্যা করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘ওই অনুভূতিকে এখন ব্যবহার করবেন না এবং কাজে লাগাবেন না৷ এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো থেকে বিরত থাকবেন না৷ ওই অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করতে সাহায্য করুন৷ এটিকে ব্যবহার করে ইসরায়েল রাষ্ট্রের উপর দখলদারিত্ব বন্ধে চাপ তৈরি করুন৷’’
এলিজাবেথ গ্রেনিয়ার/আরআর