এর কাছ থেকে ওর কাছে যান, দেশ থেকে বিদেশে। অ্যালোপ্যাথি থেকে কবিরাজি, সব ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থাই কখনো না কখনো পরখ করে দেখেন৷ এতে করে রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়, রোগের শেকড় আরো গভীরে যায়। এতে করে ভোগান্তি বাড়ে, কমে না। অসুখও ভালো হয় না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর কার্যক্রম এই সব 'ডক্টর হপিং' করা রোগীদেরই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
তৃতীয় বিশ্বে সবকিছুই রাজনৈতিক; ভারতীয় ঔপন্যাসিক আর কে নারায়ণের ' ওয়েটিং ফর মহাত্মা' উপন্যাসটা পড়ানোর সময় ক্লাসে বলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল আলম স্যার। তখন ছোট ছিলাম,কথাটার মর্ম বুঝিনি। এখন চল্লিশ পেরিয়ে আর বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতায় এক যুগের বেশি সময় পার করে কথাটা হাড়ে হাড়ে টের পাই। এখানে মাঠ নয়, স্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। প্রক্রিয়া নয়, ব্যক্তি। তাই তো রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সব স্থাপনার নাম বদলে যায়। স্টেডিয়াম নির্মাণ করার জন্য উপযুক্ত জায়গা খোঁজার বদলে রাজনৈতিক বিবেচনায় জায়গা নির্ধারণ করা হয়। তাই তো এক সময়ের সুয়ো রানি অন্য সরকারের সময়ে হয়ে ওঠে দুয়ো রানি। এই পরিবর্তনের খেলায় লাভের গুড়টা রাজনীতিবিদ থেকে ব্যবসায়ী সবার পকেটেই যায়, বঞ্চিত থেকে যান ক্রীড়াবিদরাই।
বাংলাদেশে বিএনপি আমলে বগুড়ায় স্টেডিয়াম বানানো হলো শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। এরপর আওয়ামী লীগ এলো ক্ষমতায়। ফল, ২০০৬ সালের পর সেখানে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই হলো না। এমনকি এক সময় বগুড়া স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটও খুলে নেয়া হলো অন্য কোথাও জুড়ে দেবার জন্য। পল্টনের আউটার স্টেডিয়াম এলাকা দখল করে বানানো হয়েছে শেখ রাসেলের নামে রোলবল স্টেডিয়াম। এখন সেই নাম মুছে ফেলা হয়েছে, পড়ে আছে বিশাল স্থাপনা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সবচেয়ে উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা ছিল শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। এই স্থাপনা নির্মাণের জন্য ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে বিশাল জায়গা কেনা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নকশা করানো হয়েছে। নৌকার আদলে হবে স্টেডিয়াম। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেই স্টেডিয়াম নির্মাণের দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। জায়গা পরিদর্শন করতে গিয়ে বিসিবি'র বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘‘মাঠ করতে তো নৌকা বা স্কয়ার শেপের দরকার নেই, মাঠ হবে ওভাল।'' ফারুকের আগে বিসিবি সভাপতি যিনি ছিলেন, সেই নাজমুল হোসেন পাপন আওয়ামী লিগের শেষ সংসদে ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছিলেন। তার সময়ে এই স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয়ই হয়েছে ৬০ কোটি টাকার বেশি। টনি হেমিং নামের অস্ট্রেলিয়ান একজন বিশেষজ্ঞকে পিচ কিউরেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাঠের কাজ একটুও এগোয়নি, হেমিং ১ বছর অনেকটা বেকার বসে থেকেই পরে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। অথচ বিসিবি এতদিনেও নিজেদের একটা মানসম্মত একাডেমি বানাতে পারেনি, এই সংক্রান্ত কোনো পরিকল্পনাও নেয়নি। শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেতরে একাডেমি ভবন বলে যে স্থাপনাটি আছে, সেটা মূলত ব্যবহৃত হয় ক্রিকেটারদের ট্র্যানজিট ক্যাম্প হিসেবে। কোনো সিরিজের আগে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে ক্রিকেটাররা জড়ো হন, তারপর অনুশীলন শেষে এখান থেকেই তাদের বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়া হয়। একাডেমির যে মাঠটা রয়েছে, সেটা আদতে একটা ফুটবল মাঠের মতোই চৌকোণা। খেলোয়াড়রা নেটে অনুশীলন করতে গিয়ে জোরে উড়িয়ে মারলেই সেটা স্টেডিয়ামের মিডিয়া ব্লকে দাঁড়ানো সাংবাদিকরা মাথা বাঁচাতে বসে পড়েন। একই জিমে বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে নারী ও পুরুষ সব দলের ক্রিকেটারদেরই আসতে হয়। কোষাগারে ৯০০ কোটি টাকার গল্প শুনিয়ে বোর্ড পরিচালকরা পাঁচ তারকা হোটেলে বৈঠক করেন আর দেশ-বিদেশে ঘোরেন, কিন্তু কেউই কখনো একটা পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাডেমির কথা কখনো ভাবেননি। তাদের ভাবনায় এসেছে প্রধানমন্ত্রীর নামে স্টেডিয়াম করার কথা, কারণ, এর মাধ্যমে ব্যক্তি তোষণ হবে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাবার মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডে এসেছেন কয়েকজন নতুন মুখ, যারা বিগত সরকারের সময় ছিলেন কোণঠাসা। তারা এসেও যে খুব বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পেরেছেন,সেটাও বলা যাচ্ছে না। সেই পুরনো সংস্কৃতিই চলমান। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর খেলোয়াড়দের অর্থ পুরষ্কারে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশের প্রধান উপদেষ্টা ফোন করেছেন অধিনায়ককে, আগে যে ফোনটা করতেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাপ্তিযোগের আনন্দেই বোধহয় ভারত সফরে গিয়ে সবগুলো ম্যাচেই একপেশেভাবে হেরে এসেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকরা ছিলেন রাজনীতি সংশ্লিষ্ট। সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামালের মালিকানায়। সরকার পরিবর্তনের পর কামাল সপরিবারে পলাতক, তাকে বিদেশের এক বিমানবন্দরে সবশেষ দেখা গেছে। কুমিল্লা থাকছে না সামনের বিপিএলে, মালিকানা বদলে গেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম দলের। নতুন করে মালিকানা দেয়া হয়েছে রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির। এখানেও সেই একই ছবি, নতুন মোড়কে পুরনো জঞ্জাল। চট্টগ্রামের মালিকানায় এসেছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরি পরিবার, বিপিএলের প্রথম দুই আসরে তারা ছিল চট্টগ্রাম কিংস নামে। আমাকেই দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার রবি বোপারা বলেছিলেন, ‘‘সবচেয়ে খারাপ সময় কেটেছে চিটাগাং কিংসের (বিপিএলের প্রথম দুই আসরে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলেছে এই নামেই) হয়ে। ওই দলের মালিক সামির চৌধুরী, আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ। এখনো ওদের কাছে অনেক পাওনা রয়ে গেছে।'' পাতানো ম্যাচ, পারিশ্রমিক না দেয়াসহ অনেক কলঙ্কই জুড়ে ছিল বিপিএলের প্রথম দুই আসরের সঙ্গে। সেই সময়ের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের ফের সুযোগ দেয়া মানেই পুরনো রোগ নতুন করে ফিরে আসার রাস্তা তৈরি করে দেয়া। এবারও শোনা যাচ্ছে বিসিবিকে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি না দিয়েই অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি দল গুছিয়ে নিয়েছে!
পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের জাতীয় দলের কোচের চেয়ারেও। অসদাচরণ এবং চাকুরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করেছে বিসিবি। তার বদলে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ফিল সিমন্সকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ও আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি; বাংলাদেশের ক্রিকেট পঞ্জিকার আগামী চার আসরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে সিমন্সকে। এখানেও সেই রোগ সারানোর বদলে ডাক্তার বদলের প্রবণতা।
ভারত সফরে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রকৃত অবস্থাটা, পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর যা ঢাকা পড়েছিল রঙ্গীন মোড়কের আড়ালে। গৌতম গম্ভিরের দল বের করে এনেছে সত্যিটা। দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের শীর্ষ ক্রিকেটারদের বাইরে রেখে গড়া দলের সঙ্গেও পারে না বাংলাদেশ, টি-টোয়েন্টিটা তারা খেলে প্রাগৈতিহাসিক যুগের ওয়ানডে'র মতো করে। অথচ এই সিরিজ শেষেই অবসরে যাওয়া ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে রেখে হয়েছে আগামী বছরের বিপিএলের খেলোয়াড় বাছাইয়ের ড্রাফট। দিনের পর দিন খেলে যারা বাংলাদেশ দলের অবস্থার কোনো উন্নতি করতে পারেননি, কেউ ব্যাট ছেড়ে মাইক্রোফোন ধরেছেন তো কেউ রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে এখন একূল ওকূল সবই হারিয়েছেন, তারাই একেকটা দলে ঢুকেছেন মোটা টাকায়। অথচ তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য বরাদ্দ অল্পকিছু টাকা। ভালো কোচ নিয়োগের দিকেও মনযোগ নেই ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের, কোচরাও কাজ করতে খুব একটা আগ্রহী নন, কারণ আর্থিক দিকটা অবহেলিত। দলগুলো খেলোয়াড়দের নিজেদের তাঁবুতে আনে যোগ্যতা নয়, সম্পর্কের ভিত্তিতে। কারণ, বিপিএলের বাইরে আর কোনো টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা নেই। কোথা থেকেই বা উঠে আসবে নতুন ক্রিকেটার? কোনো মানসম্মত অ্যাকাডেমি নেই, সেই এক বিকেএসপিই ভরসা। বিভাগীয় পর্যায়েও হয় না কোনো টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা। দলগুলোতে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হয়ে চলে আসে শিশু, তারাই খেলনা কেনার মতো খেলোয়াড় কেনে।
অথচ চাইলে একটা মৌসুম বাদ দিয়ে ঘরোয়া প্রতিযোগিতার ভিতটা শক্ত করে বিপিএল করা যেতে পারতো। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল আক্ষেপ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘BPL কেন? BPL এখন আমাদের ক্রিকেটের জন্য প্রয়োজনীয় নয়, এটা আমাদের অগ্রাধিকার নয়। কেন আমরা অন্য দেশের পরিকল্পনা কপি এবং পেস্ট করি? আমরা তো ক্রিকেটের উন্নয়ন চাই, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো পারফর্ম করতে চাই। কিন্তু শেষ ১১টি BPL থেকে আমরা আসলে কী অর্জন করেছি? ১০৬ কোটি টাকা হিসাব নেই (Jamuna TV-র সংবাদ অনুযায়ী)! এত বড় অঙ্কের টাকা কোথায় গেল?''
দয়া করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে আরো আকর্ষণীয় করুন, ক্রিকেটের সামগ্রিক মান উন্নত করুন। একটা জিনিস মাথায় রাখুন—একজন টেস্ট খেলোয়াড় সব ফরম্যাটে খেলতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র একজন টি-২০ খেলোয়াড় আর কোনো ফরম্যাটে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারে না।
চোখ খুলুন, ভালোভাবে দেখুন—অনেক কিছুই আমাদের ক্রিকেট কাঠামো থেকে অনুপস্থিত, অথচ আমাদের দেশে বিশাল সম্ভাবনা আছে। কপি আর পেস্ট করার বদলে আমাদের নিজস্ব পথ তৈরি করার সময় এসেছে।
ক্রিকেটকে শক্তভাবে গ্রাম, উপজেলা, স্কুল, কলেজের সাথে যুক্ত করুন—ধালিউড, বলিউড, বা হলিউডের সাথে নয়। আমাদের ক্রিকেটের শিকড় এখানেই—যেখানে আসল প্রতিভার জন্ম।'
জাতীয় ক্রিকেট লিগে হয় প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ, এইবার তার সঙ্গে টি-টোয়েন্টি যোগ করা হয়েছে। এই আসরটার পর বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফট হতে পারতো, অথবা টুর্নামেন্টটা আগে। যেমনটা ভারতে হয়, আইপিএল নিলামের আগে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি হয়। সেখানে খেলোয়াড়দের দেখে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা একটা ধারণা পায়। এর বাইরে প্রায় প্রতিটা প্রদেশেরই নিজস্ব লিগ দাঁড়িয়ে গেছে। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ, মধ্যপ্রদেশ প্রিমিয়ার লিগ, উত্তর প্রদেশস প্রিমিয়ার লিগে খেলে খেলেই বরুণ চক্রবর্তী, রিঙ্কু সিংরা নিজেদের তৈরি করেন আইপিএলে আসার জন্য। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোরও নজর থাকে এই সব লিগে খেলা তরুণ ক্রিকেটারদের দিকে। অথচ বাংলাদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে বিপিএলের সময়ে মাসদুয়েক ছাড়া বাকি সারা বছর কোনো কাজে পাওয়া যায় না। অবশ্য যেসমস্ত ভূইফোঁড় প্রতিষ্ঠানকে স্বত্ব দেয়া হয়, ডাগআউটের পাশে সোফায় বসে চেহারা দেখানো ছাড়া তাদের বেশি কিছু করার সামর্থ্যও নেই।
বারবার পরিবর্তন আনলেই যদি সফল হওয়া যেতো, তাহলে বোধহয় পাকিস্তান ক্রিকেট দল টানা বিশ্বকাপ জিততো। পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডে গত তিনবছরে পাঁচজন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেছেন। এহসান মানি'র পর রমিজ রাজা চেয়ারে ছিলেন ১৩ মাস। এরপর মাসছয়েক নাজাম শেঠি, জাকা আশরাফ এলেন এরপর মাসছয়েকের জন্য। ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আছেন মোহসিন রেজা নাকভি। নির্বাচক প্যানেলও পরিবর্তন হয়েছে ঘন ঘন। জুলাইতে চাকরি হারান প্রধান নির্বাচক ওয়াহাব রিয়াজ এবং আরেক নির্বাচক আব্দুল রাজ্জাক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বেহাল পারফরম্যান্সের জন্য তাদের চাকরি যায়। দেশে ইংল্যান্ডের কাছে হারের পর আবারও নির্বাচকমন্ডলীতে পরিবর্তন আনে পাকিস্তান, আকিব জাভেদের সঙ্গে যোগ দেন সাবেক আম্পায়ার আলিম দারও! এভাবে প্রেসিডেন্ট আর নির্বাচক বদলে মাঠের পারফরম্যান্সে পাকিস্তান কতটা উন্নতি করেছে সেটা তো স্পষ্ট। দেশে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশের কাছে, ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে প্রথম ইনিংসে ৫০০'র বেশি রান করেও।
এতেই বোঝা যায়; সমস্যাটা ডাক্তারের নয়, রোগীর। হাত দিতে হবে অসুখের শেকড়ে, তাহলেই আরোগ্য মিলবে। বিদেশি কোচ কিংবা বিপিএল চটজলদি টোটকা হতে পারে, তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমস্যার সমাধান নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে দরকার ঘরোয়া ক্রিকেটে মানসম্মত উইকেট, আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দিতামূলক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, কার্যকর ক্রিকেট অ্যাকাডেমি যেখান থেকে ক্রিকেটাররা উঠে আসবে এবং সর্বোপরি ধারণার বদলে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সভিত্তিক মূল্যায়ন এবং সেই অনুযায়ী দলে সুযোগ দেয়া। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ভালো করায় টি-টোয়েন্টি দলে সাকিব এর বিকল্প হিসেবে চলে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ, যে ১৪ মাস কোনো টি-টোয়েন্টি খেলেনি! পাকিস্তান সফরে 'এ' দলের হয়ে একটা ভালো ইনিংস খেলে জাকের আলি অনিক চলে আসেন টেস্ট দলে। এমন অদ্ভুত সব সিদ্ধান্ত আগেও দেখা যেতো, এখনও দেখা যাচ্ছে। তখনই 'যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ', প্রবাদটা বেশি করে মনে পড়ে।
হুটহাট চমক নয়, নিয়মিত সাফল্য পেতে সারাতে হবে ক্রিকেটের এসব অসুখ। সেটা দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতিতে হলেও, যেটা হবে কুইনাইনের মতোই তেতো। প্রয়োজনে করতে হবে অস্ত্রোপচার। হোমিওপ্যাথির মিষ্টি বড়ি দিয়ে মন হয়তো ভোলানো যাবে, তবে অসুখ সারবে না।