বাভেরিয়ার ‘ভূমিকম্প' নাড়িয়ে দিল বার্লিনকে
১৫ অক্টোবর ২০১৮১৯৫০ সাল থেকে বাভেরিয়া রাজ্যে ‘রাজত্ব' করে এসেছে খ্রিস্টান সোশাল ইউনিয়ন বা সিএসইউ দল৷ জার্মানির জোট সরকারেরও শরিক এই দল৷ রবিবারের নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি সেই ধারা ভেঙে দিল৷ অভূতপূর্ব খারাপ ফলাফল করে এক ধাক্কায় দুর্বল হয়ে পড়লো সিএসইউ৷ সবচেয়ে বড় দল হিসেবে টিকে থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বার্থে তাদের জোট সরকার গঠন করতে হবে৷ ‘ফ্রাইয়ে ভেলার' বা মুক্ত ভোটার নামের আঞ্চলিক দল অথবা সবুজ দলের সঙ্গে সেই লক্ষ্যে আলোচনা করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার ‘ফ্রাইয়ে ভেলার' দলের সঙ্গেই সরকার গঠন করতে চান৷ উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে সবুজ দল৷ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হবে৷
বাভেরিয়ার নির্বাচনে সিএসইউ দলের তুলনায় আরো খারাপ করেছে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল৷ ফলে বার্লিনে জোট সরকারের দু-দুটি শরিক দল এক ধাক্কায় বেশ দুর্বল হয়ে পড়লো৷ দুই সপ্তাহ পর হেসে রাজ্যের নির্বাচনে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলও যদি খারাপ ফল করে, সে ক্ষেত্রে সরকারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷ দলের নেত্রী হিসেবে ম্যার্কেল আদৌ টিকে থাকতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে৷
জোট সরকারে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত এসপিডি দলের মধ্যে শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল৷ বাভেরিয়ায় ভরাডুবির পর দলের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরোধীরা আরো সোচ্চার হয়ে উঠবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এসপিডি সরকারের শরিক হয়ে সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক পদক্ষেপ তরান্বিত করলেও ভোটারদের মনে সেই ‘সাফল্য' কিছুতেই ধরছে না৷ তাই একের পর এক নির্বাচনে দল সমর্থন হারাচ্ছে৷ হেসে রাজ্যেও সেই প্রবণতা বজায় থাকলে জোট ত্যাগ করার জন্য দলের মধ্যে চাপ আরো বাড়বে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
অর্থাৎ, বাভেরিয়ায় জোরালো ধাক্কার বিশ্লেষণ করতে আপাতত ব্যস্ত থাকবে সরকারের তিন শরিক দল৷ সিএসইউ দলের ভরাডুবির দায়িত্ব নিয়ে দলের শীর্ষ নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার সম্ভবত বিদায় নিতে বাধ্য হবেন৷ ফলে ম্যার্কেল কিছুটা স্বস্তি পাবেন বটে, কিন্তু সরকার ও দলের প্রধান হিসেবে তাঁর বেড়ে চলা দুর্বলতা কাটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দল তাদের সাফল্য বজায় রেখেছে৷ ১০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে এই প্রথম তারাবাভেরিয়ার রাজ্য বিধানসভায় প্রবেশ করতে চলেছে৷ তবে দলের নেতারা আরো বেশি সমর্থন আশা করেছিলেন৷ শরণার্থী সংকট ও অভিবাসনকে কেন্দ্র করে তারা নির্বাচনি প্রচার চালালেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোট পায়নি সেই দল৷ সিএসইউ দলও একই বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে সমর্থন হারিয়েছে৷ ফলে বাভেরিয়ার নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সবুজ দলের নেত্রী আনালেনা ব্যেরবক৷ তিনি বলেন, গোটা দেশের জন্য এটা অত্যন্ত ভালো লক্ষণ৷ বাভেরিয়ার ভোটররা ধীরস্থির হয়ে মানবাধিকার ও মানবতার পক্ষে রায় দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, উগ্র দক্ষিণপন্থি ভাবধারার পরাজয় ঘটেছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)