বাবরি মসজিদ রায়: কার প্রতিক্রিয়া কী?
৯ নভেম্বর ২০১৯ভারতের অযোধ্যার এক বিতর্কিত জমি নিয়ে কয়েক দশক অপেক্ষার পর শনিবার রায় ঘোষণা করে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত৷ রায়ে ওয়াকাফ বোর্ডের আর্জি এবং নির্মোহী আখড়ার জমির উপর দাবি দুটোই খারিজ করে দেন বিচারকরা৷ বিতর্কিত সেই জমিতে একটি ট্রাস্টের অধীনে মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত৷ পাশাপাশি, একটি মসজিদ গড়তে কাছাকাছি অন্য কোথাও মুসলমানদের পাঁচ একর জমি দিতেও বলা হয়েছে রায়ে৷
রায় ঘোষণার পরপরই এক টুইটে সাধুবাদ জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি বলেন, পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে৷ এবং এই রায়ের ফলে বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে৷
এরপরপরই আরেকটি টুইটে তিনি ভারতের জনগণকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি ১৩০ কোটি ভারতীয় এ নিয়ে ধৈর্য দেখিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রমাণই দিয়েছে৷
রায়ের পরপরই টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও৷ তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট আজ অযোধ্যা ইস্যুতে রায় ঘোষণা করেছে৷ আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে৷ এটা সব ভারতীয়ের ভ্রাতৃত্ব, বিশ্বাস ও ভালোবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়৷''
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভগবত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘অযোধ্যা ইস্যুতে আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সাধুবাদ জানাই৷ এই রায়কে কারো জয় বা কারো পরাজয় হিসেবে দেখাটা ভুল হবে৷ অতীতের বিভেদ ভুলে রাম মন্দির নির্মাণে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷''
শিবসেনার প্রধান উদ্ধভ ঠাকরে বলেছেন, ‘‘আজকের দিন ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷'' আদালতের রায় মেনে দ্রুত রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিতে এক বিবৃতিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ৷
আজমীর শরীফের দেওয়ান সৈয়দ জয়নুল আবেদীনও এ রায় সবাইকে মেনে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা কারো জয় পরাজয়ের বিষয় নয়৷ আমাদের সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নেয়া উচিত৷ যা হয়েছে, দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমাদের এই বিরোধের এখানেই সমাপ্তি টানা উচিত৷''
একই আহ্বান এসেছে দেশটির শিয়া ও সুন্নি মতাবলম্বী ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকেও৷
শিয়া নেতা মওলানা কালবে জাওয়াদ বলেছেন, এখনও রিভিউ পিটিশনের সুযোগ থাকলেও বেশিরভাগ মুসলিম এই রায় মেনে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নিয়েছি৷ আমি মনে করি এই বিষয়টির এখানেই সমাপ্তি ঘটা উচিত৷''
সুন্নি কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর আহমাদ ফারুকিও আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং একে চ্যালেঞ্জ করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন৷
দিল্লী জামে মসজিদের শাহী ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি এ নিয়ে আর জল ঘোলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতের মুসলিমরা শান্তি চায়৷ ‘‘হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলা বিরোধ এখানেই শেষ হওয়া উচিত৷''
তবে, এই রায় নিয়ে অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ৷ অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি জানিয়েছেন, মামলার রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন৷ সুপ্রিম কোর্টকে সর্বোচ্চ আদালত বলে মানলেও তিনি মনে করেন সুপ্রিম কোর্টও সবসময় ‘নির্ভুল' নয়৷ ভারতীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানে আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে, আমরা আমাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছি৷ দান হিসেবে পাঁচ একর জমি আমাদের দরকার নেই৷ আমাদের এই পাঁচ একর জমি প্রত্যাখ্যান করা উচিত৷''
তবে ওয়াইসির বক্তব্যের পালটা প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি বলেছেন, কিছু মানুষের ‘তালিবানি মানসিকতা' রয়েছে এবং তারা দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর ‘আস্থাশীল' নয়৷
তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র (ছেলের নাতি) তুষার গান্ধী৷ এক টুইটে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘এই সুপ্রিম কোর্টে গান্ধী হত্যা মামলার বিচার হলে নাথুরাম গডসেকে (মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী) একইসঙ্গে খুনি এবং দেশপ্রেমিক বলে রায় দেয়া হতো৷''
অসন্তোষ প্রকাশ করে উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরিয়াব জিলানী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা রায়কে সম্মান করলেও সন্তুষ্ট নই৷ আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় না হওয়ায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে নেবো৷'' উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড এ মামলায় একটি পক্ষ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে৷
বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, ইসলামাবাদে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী রায়ের সমালোচলা করেছেন৷ এ রায়কে মোদী সরকারের ‘ঘৃণাসূচক মানসিকতার' বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷
এডিকে/এআই (এপি, এএফপি, ডিপিএ)