‘আপনি জার্মান না বিদেশি?’
১৪ নভেম্বর ২০১৩আইসেগুল আচার এক তুর্কি মহিলা৷ তাঁকে এক বাড়ির মালিকের কাছ থেকে স্পষ্ট শুনতে হয়েছে: ‘‘বিদেশিদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে না!'' আইসেগুলের বাস বন শহরে৷ ৩০ বছরের বেশি আগে তিনি তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসেন৷ এ দেশটা তাঁর ভালো লাগে, নিজের স্বদেশ বলেই মনে হয় – কিন্তু বাড়ি খোঁজার সময় নয়৷
জার্মানিতে তিনবার বাড়ি বদলেছেন আইসেগুল৷ প্রতিবারই তাঁর একই অভিজ্ঞতা হয়েছে: জার্মান বাড়িওলাদের কাছে তিনি মনপসন্দ ভাড়াটিয়া নন৷ তাঁর পদবী, জার্মান ভাষা বলার ধরন এবং চেহারা – সবই ভুল, অন্তত বাড়িওলাদের চোখে৷ একা আইসেগুলেরই এই অভিজ্ঞতা নয়৷ বিদেশি-বহিরাগতদের অধিকাংশ জার্মানিতে বাড়ি খুঁজতে গিয়ে একই বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছেন৷
অথচ জার্মানিতে ভাড়াবাড়িতে থাকাটাই স্বাভাবিক: জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বাস করে ভাড়াবাড়িতে৷ বার্লিন অথবা হামবুর্গের মতো বড় শহর ধরলে, সেখানকার প্রতি দশজন বাসিন্দাদের মধ্যে আটজনই থাকেন ভাড়াবাড়িতে৷ বড় শহরে খালি ফ্ল্যাটের সংখ্যাও কম – বা সম্ভাব্য ভাড়াটিয়াদের সংখ্যা বেশি৷ কাজেই বাড়ির মালিকরা যাকে ইচ্ছা নিতে পারেন কিংবা বাদ দিতে পারেন, ফ্ল্যাট দিতে পারেন কিংবা নাকচ করতে পারেন৷ যে ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানসহ একা বাসরত মহিলা, ছাত্র কিংবা কর্মহীনেরা আগেই বাদ পড়বেন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ সেই সঙ্গে যুক্ত হয় জাতিবাদ৷
হিজাব পরিহিতা মুসলিম মহিলারা এবং কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরা বিশেষ করে এই জাতিবাদের শিকার হন: এঁদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ি বা ফ্ল্যাট খুঁজতে গিয়ে শুনেছেন, ‘‘দুঃখিত৷ ওই ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়ে গিয়েছে৷'' আইসেগুল আচারকেও বার বার সে অজুহাত শুনে বিদায় নিতে হয়েছিল৷ শেষমেষ তাঁর বড়ছেলের মাথায় একটি আইডিয়া আসে৷ ছেলেটি ঝরঝরে জার্মান বলে৷ সেই নাম ভাঁড়িয়ে জার্মান নাম ধরে টেলিফোনে জিগ্যেস করে, ফ্ল্যাটটা ভাড়া দেওয়া হয়েছে কিনা৷ বাড়িওলা এবার এই কাল্পনিক ‘‘হের শুলৎস''-কে সত্যি কথাটাই বলেন: না, বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়নি৷
আইসেগুল অবশেষে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন বটে, তবে কোনো জার্মানের কাছ থেকে নয়৷ তাঁর ফ্ল্যাটটির মালিক হলেন এক স্পেনীয়৷ অর্থাৎ আইসেগুলের মতো তিনিও বিদেশি-বহিরাগত৷