বাজেট থেকে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা
আগামী ১ জুন বাজেট ঘোষণা করা হবে৷ ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাজেট নিয়ে কী ভাবছেন, তাদের প্রত্যাশা কী, জানতে চেয়েছিল ডয়চে ভেলে৷
আমরা কি ভালো-মন্দ খামু না?
নির্মাণশ্রমিক হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিতে কাজ করেন মোঃ আজগর মৃধা৷ আসন্ন বাজেট নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘‘বাজেট বাদ দেন, সামনে কুরবানির ঈদের আগে যে গরুর মাংস রান্দার যেসব মেইন জিনিস লাগে, আদা আর পেয়াইজ, এগুলির দাম যে তিন গুন বাইড়া গেল, আমরা কি বছরে একদিনও ভালো-মন্দ খামু না?’’
বাজেটের আগেই জিনিসের দাম বাড়সে
ঢাকার শ্যামলীতে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করা মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রত্যেক বছর দেখি বাজেটের সময় হওয়ার আগে দিয়া জিনিসের দাম বাড়ে নাইলে জিনিস পাওয়া যায় না, মার্কেট থেকা হাওয়া হয়া যায়৷ এইবারও ব্যতিক্রম হয় নাই, এক মাসের ব্যবধানে অনেক কিছুর দাম ডাবল হয়া গেসে৷’’
আমরা সব সহ্য করে নিচ্ছি
ঢাকার মিরপুরের এই অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘‘আমরা এখন হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আছি৷ কারো বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারছি না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারছি না৷ সব ধরণের জুলুম শোষণ আমরা মুখ বুজে সয়ে নিচ্ছি৷’’
এখন আমি লাখ টাকা ঋণী
ঢাকার কমলাপুরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন শিখা রাণী দাস৷ বাজেট নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘করোনার আগে আমার এক টাকাও ঋণ ছিল না, দিন আনছি দিন খাইসি, কিছু টাকা জমাইসি৷ করোনায় সব জমানো টাকা ভাইঙ্গা খাইসি৷ গত দুই বচ্ছরে আমার এখন লাখ টাকা ঋণ৷ সুদে ঋণ নিসি, এইটা কীভাবে শোধ দিমু, আমি জানি না৷’’
বাজেটের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই
লেখক এবং আলোকচিত্রী শাহরিয়ার খান শিহাব বলেন, ‘‘আমি বাজেট বলতে বুঝি, দেশ থেকে শোষণ বিলুপ্ত হবে, দেশ সিন্ডিকেটমুক্ত হবে৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে৷ অন্যদিকে, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ করে দেওয়া যাবে না, যা প্রতিবছরই করা হচ্ছে৷’’ তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি আয়-ব্যয়ের ঘাটতি দূর করতে হবে৷ আর বাজেট শুধু পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ না রেখে এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা জরুরি৷
সংসার চলে না
স্নাতকে পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে বিক্রি হওয়া পণ্য ডেলিভারি করেন সাইফুল ইসলাম৷ বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সরকার কীভাবে কী বাজেট করে আমরা এতোকিছু বুঝি না৷ আমরা শুধু জানি আমাদের সংসার চলে না, দিনদিন কঠিন থেকে আরো কঠিন হচ্ছে সবকিছু৷’’
বাজেটে জিনিসের দাম কমে না
ঢাকার কেরাণীগঞ্জের পোশাকশিল্প কর্মী সালেহা আক্তার বলেন, ‘‘বাজেটে জিনিসপত্রের দাম বাড়ালে নিশ্চিত ধইরা নেন ঐ জিনিসের দাম বাড়বে৷ কিন্তু বাই চান্স যদি কিছুর দাম কমেও, সেইটার দাম আমগো আর কমে না৷ দেশে একবার দাম বাড়লে আর কমে না, এইটাই নিয়ম হয়া গেসে৷’’
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত
মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী মোঃ আকবর মিয়া বলেন, ‘‘আমগো দেশে দাম বাড়তে বাজেট লাগে না, প্রতিমাসেই এখন দাম বাড়তাসে জিনিসের৷ মানুষ যে এখন এক বেলা না খাইয়া আছে, আমাগো প্রধানমন্ত্রী কি এইসব দেখে না? আমার তো মনে হয় সাধারণ মানুষের দুঃখের আসল চিত্র তারে দেখানো উচিত৷’’
আমরা চলতে পারি কিনা সেইটাই আমাদের বাজেট
ঢাকার পীরেরবাগের একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তারক্ষী মোঃ আবদুল জলিল জানান, ‘‘বাজেট মানে আমরা বুঝি, আয় কতো আর ব্যয় কতো৷ প্রত্যেকেই আমরা মাসের শুরুতে সংসার বা নিজেগো খরচ চালাইতে একটা বাজেট করি৷ সরকারি বাজেট কী অতো বুঝি না, কিন্তু আমরা ঠিকমতো তিনবেলা খাইতে পরতে পারি কিনা, সেইটাই আমগো কাছে বাজেট৷’’
মানুষের একটাই চাওয়া যেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না হয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ ডঃ এমএম আকাশ বলেন, ‘‘বাজেটে সাধারণ মানুষের চাওয়া একটাই, যেন কর এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না হয়৷ তবে ভ্যাট এবং পরোক্ষ ট্যাক্স বেশিরভাগক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের উপরই বসানো হয় এবং দ্রব্যমূল্য বাড়ে৷ তবে এই বছরটা খুব ক্রুশিয়াল হওয়ায় সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করবে যেন পরোক্ষ কর বৃদ্ধি না পায়৷’’