1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিক হয়ারানির এক ‘জঘন্য' উদাহরণ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ জানুয়ারি ২০১৭

তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার হয়ে একমাস যাবৎ কারাগারে সাংবাদিক নাজমুল হুদা৷ গত সপ্তাহে নাজমুলকে জামিন দেওয়া হলেও, মুক্তি মিলছে না৷ এজাহারে নাম না থাকলেও, আরো পাঁচটি পুরনো মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/2WUHR
সাংবাদিক নাজমুল হুদা
ছবি: DW/H. U. Swapan

বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং একুশে টেলিভিশনের সাভার-আশুলিয়া প্রতিনিধি নাজমুল হুদাকে আশুলিয়া থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় আটক করে গত ২৩শে ডিসেম্বর রাতে৷ গতমাসে আশুলিয়া এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্যই তাঁকে আটক করা হয়৷ কিন্তু এজাহারে যেসব অভিযোগ করা হয়, বাস্তবে নাজমুল তাঁর প্রতিবেদনে সেসব তথ্য দেননি৷ নাজমুলকে এই মামলায় দু'দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ৷ নাজমুলের আইনজীবী তুহিন হাওয়লাদার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘নাজমুলকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা করা হয়েছে৷ থানায় নেওয়ার পথে গাড়িতেই তাঁকে মারধোর করে পুলিশ, মারে লাথি৷ এ মুহূর্তে তিনি এক কানে শুনতে পারছেন না৷ আদালতকে নাজমুল এ নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন৷''

তুহিন হাওলাদার

বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সম্পাদক নঈম নিজাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু নির্যাতন নয়, এখন নাজমুলের গ্রামের বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে৷ পুলিশ নতুন নতুন মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে৷ এটা স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে আমি করি৷''

নাজমুলকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আটকের পর, দু'দফা রিমান্ডে নিয়েও পুলিশ তাদের এজাহারে দেয়া অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্য পায়নি৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পুলিশ অসত্য এজাহার দায়ের করেছে৷ এজাহারে বলা হয়েছে, নাজমুল লিখেছেন ৬০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ আদতে নাজমুল তাঁর প্রতিবেদনে ৫৫টি পোশাক কারাখানা বন্ধের কথা লিখেছিলেন, যা সত্য এবং পোশাক কারখানা মালিকদের দেয়া তথ্য থেকেই এ কথা লেখেন নাজমুল৷ পুলিশই অসত্য তথ্য দিয়েছে এজাহারে৷ তাই আমার মনে হয়, ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে এর মধ্যে৷''

নঈম নিজাম

আইনজীবী তুহিন হাওলাদার দাবি করেন, ‘‘আশুলিয়া এলাকার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হচ্ছে নাজমুল৷ এ কারণে এখন পুরনো যেসব মামলায় অজ্ঞাত আসামি রয়েছে, সেই সব মামলায় নাজুমলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নতুন করে রিমান্ড চাইছে তারা৷ আসলে ঐ মামলাগুলোর কোনোটির এজাহারেই নাজমুলের নাম নেই৷

যেসব মামলায় নাজমুলকে নতুন করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে

তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলা ছাড়াও, আশুলিয়ার পুলিশ সাংবাদিক নাজমুলকে এ পর্যন্ত আরো যে পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড চেয়েছে, তার দু'টি বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং তিনটি পোশাক কারখানায় চুরি, হামলা, শ্লীলতাহানি ও ভাঙচুরের কারণে৷

আশুলিয়া থানায় ১৮ই ডিসেম্বর দায়ের করা ২৫ নম্বর মামলার অভিযোগ হলো, একটি পোশাক কারখানায় ঢুকে হামলা, মারপিট, শ্লীলতাহানি, ভাঙচুর ও প্যান্ট চুরির৷ এই মামলায় সুজন মিয়া এবং সাইফুল নামে দু'জন আসামিসহ অজ্ঞাত পরিচয় অনেককে আসামি করা হয়ে৷ এজাহারে সাংবাদিক নাজমুলের নাম বা তাঁকে সন্দেহ করার কথা নেই৷ কিন্তু এই মামলায় পুলিশ নাজমুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে৷

মোহসীনুল কাদির

আশুলিয়া থানায় ২৪শে ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় অভিযোগ একই রকম৷ সেখানে একটি পোশাক কারখানায় ঢুকে হামলা, শ্লিলতাহানি ও চুরির অভিযোগ করা হয়েছে৷ এই মামলায় ৩৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করেছেন বাদি৷ ৩৯ জনের মধ্যেও এজাহারে কোথাও সাংবাদিক নাজমুলের নাম নাই৷ তারপরও পুলিশ নাজমুলকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে৷

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের দু'টি মামলাতে গ্রেপ্তার দেখিয়েও নাজমুলের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ৷ দু'টি মামলার এজাহারেও নাজমুলের নাম নেই৷ তবুও পুলিশের ইচ্ছা হয়েছে, তাই নাজমুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে তারা৷ বিশেষ ক্ষমতা আইনের দু'টি মামলাই ২৩শে ডিসেম্বর দায়ের করা হয় আশুলিয়া থানায়৷

নূর খান

আরেকটি মামলায় নাজমুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও তার নথিপত্র এখনো আদালতে দেয়নি পুলিশ৷ এই মামলাটি আশুলিয়া থানায় দায়ের করা হয় গত ডিসেম্বরে৷ মামলা নম্বর ২৮৷ এই মামলার এজাহারেও নাজমুলের নাম নাই৷

এ নিয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহসীনুল কাদির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি কোনো কথা বলবো না৷ ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করেন, ‘‘আমি মিডিয়ার সাথে কথা বলি না৷''

ঊর্ধতন কর্মকর্তা ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিক নাজমুলকে আমরা কেউ চিনি না৷ সে আমাদের প্রতিপক্ষও নয়৷ তাঁকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই আটক করা হয়েছে৷''

এজাহারে নাম নেই এমন পাঁচটি পুরনো মামলায় নাজমুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত পর্যায়ে এজাহারের বাইরেও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়, সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে৷''

তাই তাঁর কথায়, ‘‘নাজমুলকে প্যান্ট চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখনো হয়েছে বলে আমরা জানা নেই৷ তাছাড়া পুরো ঘটনাটি এখন গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করছে৷ তদন্ত শেষেই আসল ঘটনা বলা যাবে৷''

শাহ মিজান শাফিউর রহমান

আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, ‘‘আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি৷ তবে অশঙ্কা, পুলিশ না আবার নাজমুলের বিরুদ্ধে আরো নতুন মামলা হাজির করে৷''

বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি তথ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি৷ আমরা মনে করি, পুলিশ ব্যক্তিগত হীন স্বার্থে সাংবাদিক নাজমুলকে নির্যাতন ও হয়রানি করছে৷ এই পুলিশ কর্মকর্তারা সরকারের সঙ্গে মিডিয়ার দূরত্ব বাড়াচ্ছে৷ এখন সরকার যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে সরকার সম্পর্কে ভুল মেসেজ যাবে৷''

এ বিষয়ে মানবাধিকার নেতা নূর খান বলেন, ‘‘পুলিশ একটি ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছে৷ এর মধ্য দিয়ে তারা সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চায়৷ তাই সরকারের উচিত, এই পুলিশকে থামনো৷''

আপনার কী মনে হয়? নাজমুল হুদা কি সত্যিই অপরাধী? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য