বাংলাদেশে একদিনে নিহত অন্তত ৯০
৪ আগস্ট ২০২৪বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টারের তথ্য অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জে ১৮ জন, ঢাকায় ১৩ জন, ফেনীতে আটজন, লক্ষ্মীপুরে আটজন, নরসিংদীতে ছয়জন, বগুড়ায় পাঁচজন, রংপুরে চারজন, সিলেটে চারজন, মাগুরায় তিনজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, মুন্সিগঞ্জে তিনজন, কুমিল্লায় তিনজন, শেরপুরে তিনজন, পাবনায় তিনজন, কক্সবাজারে একজন, জয়পুরহাটে দুইজন, বরিশালে একজন, ভোলায় একজন, হবিগঞ্জে একজন নিহত হয়েছেন।
রোববারও সারাদেশে বিক্ষোভ চালিয়ে যান আন্দোলনকারীরা৷ সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷ প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা৷ আগামীকাল ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ জারি করেছে বাংলাদেশের সরকার৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সপরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা সদর এবং উপজেলা সদরে কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে৷’’
এনায়েতপুর থানার ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত
দ্য ডেইলি স্টার বলেছে, অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
লক্ষীপুরে নিহত ৮
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অন্তত আটজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন৷ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সংবাদ মাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু ও তার অনুসারীরা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে অনবরত গুলি করতে থাকেন৷ মো. সোহেল রানা বলেন, ‘‘একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসার সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়৷ এসময় গোলাগুলি হয় ও হতাহতের ঘটনা ঘটে৷’’
নরসিংদীতে ছয় আ. লীগ নেতাকে হত্যা: মাধবধীর পৌর মেয়র
নরসিংদীতে ছয় আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন মাধবধীর পৌর মেয়র৷ রোববার দুপুর ১টার দিকে নরসিংদীর মাধবধী পৌর ভবনের পাশে বড় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
উত্তাল ঢাকা
এদিকে প্রতিবাদকারী ও সরকার পক্ষের অবস্থানে উত্তাল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা৷
উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নিহত হয়েছেন। ঢাকার ধানমন্ডি, গুলিস্তান ও ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন৷ আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে নিহত হয়েছেন দুইজন। সব মিলিয়ে ঢাকায় মোট ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেন৷ সকাল সাড়ে ১০টার পরে তাঁরা পুরান ঢাকার দিক থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন৷ প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘‘সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন৷ তবে পুরান ঢাকার দিক থেকে আসা মিছিল থেকে তাঁদের ধাওয়া দেওয়া হয়৷ তারা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যান৷ সেখান থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হচ্ছিল৷
তখন বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের খুঁজতে থাকেন৷ এ সময় হাসপাতালের প্রাঙ্গণে থাকা প্রায় ২০টি গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স এবং ১৫টির মতো মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করা হয়৷ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়৷''
সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা৷ তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন৷ শাহবাগ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা৷
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যানবাহনের চাপ ছিল কম৷
বগুড়ায় নিহত পাঁচ
সকাল থেকে বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে হাজারো বিক্ষোভকারী৷ ১১টার পরে বগুড়া সদর থানা ও দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা হয়েছে বলে বগুড়া পুলিশ সুপার জাকির হাসান ডেইলি স্টারকে জানান৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা হলে পুলিশ সেখানে গুলি ছোড়ে৷ গুলিতে অনেকে আহত হন৷ দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ডেইলি স্টারকে বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান৷ তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে৷ মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন৷
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়৷ তিনি গুলিবিদ্ধ ছিলেন কি না এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ পরে আরো একজনের মৃত্যুর তথ্য জানা যায়৷
সিলেটে নিহত চারজন
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন৷ পুলিশ ও বিজিবিসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন৷ শেষ পর্যন্ত জেলায় সংঘর্ষে মোট চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
রংপুরে নিহত চার
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন৷ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বে থাকা আব্দুল জলিল দ্য ডেইলি স্টারকে দুজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও দুজন নিহতের তথ্য জানান। নগরীর পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা ও তার গাড়িচালক সংঘর্ষের সময় নিহত হন৷ তাদের মরদেহ সিটি করপোরেশন গেটের সামনে পড়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন৷
পাবনায় নিহত তিন
পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন৷ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের টাউন হলের কাছে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে৷ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান৷ পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘‘একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে৷ চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন আরও দুজন।
কমপক্ষে ৩২ জন চিকিৎসাধীন আছেন৷’’
শেরপুরে নিহত তিন
শেরপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক৷ শেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
কিশোরগঞ্জে নিহত তিন
কিশোরগঞ্জ শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন৷
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে৷ আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ শতাধিক৷
মুন্সীগঞ্জে নিহত তিন
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, মুন্সীগঞ্জে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ এতে অন্তত দুইজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বেলা পৌনে ১১টার দিকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল নিহতের বিষয়টি ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের নামপরিচয় এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি৷ জরুরি বিভাগে ২০ জনের বেশি আহত মানুষ এসেছেন৷'' নিহত দুইজনই পুরুষ এবং পেশায় শ্রমিক৷ তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে৷
মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল হাসান বলেন, ‘‘হতাহতের সংখ্যা এখনো বলতে পারছি না৷ তবে, পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি৷''
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আহত প্রায় অর্ধশত
চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যকার সংঘর্ষে আহত অন্তত ৪২ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ তাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল কর্মকর্তা তুহিন শুভ্র দাশ৷
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ প্রায় ২০ জনকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়৷
জেলার নিউমার্কেট এলাকায় একই সময়ে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং সংঘর্ষ শুরু হয়৷
ডেইলি স্টার জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মসূচির আন্দোলনকারীরা শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয় ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের বাসভবনে হামলার পর থেকে চট্টগ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
বহদ্দারহাট এলাকায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা চালানোর পর পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে মোট চারজন আহত হন এবং তাদের মধ্যে পশ্চিম বাকালিয়া ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম শহীদ একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান৷
এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেনসহ চার বিএনপি নেতার বাসায় ভাঙচুর চালায়।
এফএস/আরকেসি (দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো)