বাংলা একাডেমি কতটা ডিজিটাল
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পে বিভিন্ন খাতকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল করছে। মুজিব জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমিকেও ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। এ দাবি কতটা বাস্তবসম্মত? দেখুন ছবিঘরে...
অনলাইনে স্টলের লটারি
বাংলা একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রন বিভাগের পরিচালক ডঃ জালাল আহমেদ জানান, অমর একুশে বইমেলার স্টল বন্টনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে লটারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে অনিয়মের যে অভিযোগ ছিল, সেটি সম্পূর্ণ দূর হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
তথ্যকেন্দ্রের ডিজিটাল সহায়তা
বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে দুইটি তথ্যকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে দর্শনার্থীরা এসে স্টলের অবস্থান, বইয়ের প্রকাশক, লেখক এবং দাম সম্পর্কে অনলাইনে সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা রাজীব কুমার সাহা।
অনলাইন বইয়ের তালিকা হাল-নাগাদ নয়
ওয়েবসাইটে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইয়ের তালিকায় দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ, ফোকলোর, প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য, প্রাণিবিদ্যা, আইন শিক্ষা, সাংবাদিকতা ইত্যাদি বিষয়ে আলাদা শাখায় বইয়ের তালিকা থাকলেও ২৬ মে, ২০২১-এর পর থেকে সেটি আর হাল-নাগাদ করা হয়নি।
বইমেলার পৃথক ওয়েবসাইট
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলাকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমি একটি ওয়েবসাইট (ba21bookfair.com) চালু করেছে। এখানে বইমেলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ ও আর্কাইভ করা হচ্ছে। এই ওয়েবসাইটে ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের তালিকা, মেলার অনুষ্ঠানসূচি, ঘোষণা ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়েছে।
‘আমাদের আধুনিকীকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে’
বাংলা একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ডঃ জালাল আহমেদ বলেন, “বাংলা একাডেমি ডিজিটালাইজেশনের কাজ আমরা অনেকদিন ধরেই করছি। তবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। অনলাইনে আমরা বই বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, আমাদের লাইব্রেরি ডিজিটালকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যে এর সুফল ভোগ করছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই বাকি কাজগুলোও আমরা শেষ করতে পারবো।“
অনলাইন অভিধান নেই
১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমির বেশ কয়েকটি অভিধান বই আকারে থাকলেও এর কোনো অনলাইন সংস্করণ নেই। বাংলা একাডেমির সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, বাংলা উচ্চারণ অভিধান, বাংলা-ইংরেজি, ইংরেজি-বাংলা অভিধানগুলোর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এর অনলাইন সংস্করণ এখনো ছাড়া হয়নি৷ তবে বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনাধীন আছে বলে জানান বাংলা একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা।
বাংলা একাডেমির নিজস্ব ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত বাংলা একাডেমির রয়েছে একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট (banglaacademy.gov.bd)৷ ওয়েবসাইটটিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ফেলোশিপ, অফিস আদেশ ও বিজ্ঞপ্তি, কর্মকর্তাদের তালিকা ও ফোন নম্বর, প্রকাশনা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ইত্যাদি সন্নিবেশিত আছে। এছাড়া অমর একুশে বইমেলার হালনাগাদ তথ্যও এখানে পাওয়া যাবে।
‘অনলাইনে তথ্য থাকলে এতবার আসতে হতো না’
উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়াইব আহমেদ জানান, তিনি বইমেলায় ৪ বছর ধরে আসছেন। বইমেলা কতটুকু ডিজিটাল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবারই তিনি ৮-১০টি বই কিনেন, কিন্তু তথ্যের অভাবে একদিনে সব বই কিনতে পারেন না। এখন মানুষের হাতে হাতে ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে যদি বইয়ের হাল-নাগাদ তথ্য দেওয়া থাকতো, তাহলে জ্যাম ঠেলে দূর থেকে বারবার এসে বই কিনতে হতো না।
বইমেলায় ডিজিটাল কেনাকাটার সুবিধা
বইমেলা ২০২২-এ অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা বাংলা প্রকাশ-এর বিক্রয় প্রতিনিধি সাদাত সিফাত বলেন, ‘‘গত ৩-৪ বছর যাবত আমাদের ক্রেতারা ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে বই কিনতে পারছেন। এখন যেহেতু মেলায় দর্শনার্থীদের প্রায় সবারই স্মার্ট ফোন আছে, তাই দেখা যায় বই কিনতে এসে টাকার সংকটে কাউকে পড়তে হয় না। এটি আমাদের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক।’’
‘অনলাইন-অফলাইন দুটোরই দরকার আছে’
অমর একুশে বইমেলা ২০২২ এর মেলায় অংশ নেওয়া সজিব বুক কর্ণারের স্বত্বাধিকারী আহমেদ সোবহান বলেন, “বইমেলার বইসহ সব তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া গেলে অবশ্যই ভালো৷ তবে বইয়ের সাথে যেহেতু মানুষের সম্পর্কটা আত্মার, তাই সশরীরে এসে বই ঘেঁটে দেখার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে বলে আমি মনে করি। বইমেলার স্টলে আসা, ঘোরাঘুরি, দোকানে ভিড়, আড্ডা এই বিষয়গুলো যথেষ্ট উপভোগ করার মতো বলেই বইমেলা প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।’’
অনলাইন টিকার সনদ
পাঞ্জেরি পাবলিকেশনের বিক্রয় প্রতিনিধি তানজিল আল-দ্বীন বলেন, ‘‘আমরা যারা স্টলে আছি, তাদের সবার কোভিড টিকা সনদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা সবাই আমাদের সনদের একটি কপি অফিস কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছি, পাশাপাশি অনলাইন একটি কপিও আমরা সাথে রেখেছি যেন প্রশাসন চাইলে সাথে সাথে দেখাতে পারি।’’