বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উত্পাদনের চেষ্টা
২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ডয়চে ভেলে: একটা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেমন হওয়া উচিত? ঢাকা কতটা পিছিয়ে আছে?
কমোডর আব্দুর রাজ্জাক: আমি মনে করি, একটা শহর বর্জ্য মুক্ত থাকবে৷ রাস্তায় বর্জ্য দেখা যাবে না৷ মানুষ সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট জায়গায় বর্জ্য ফেলবে৷ এদিক থেকে ঢাকা অনেকটাই পিছিয়ে আছে৷ যদিও আমরা উন্নতি করছি৷ এটার আরো উন্নতি করার সুযোগ আছে৷ আগে এক সময় আমাদের সব রাস্তাতেই বর্জ্য থাকত৷ আমরা রাস্তা থেকে বর্জ্য সরিয়ে নিয়েছি৷ আমরা ট্রান্সফার স্টেশন করেছি৷ আমাদের ৩৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩১টি ওয়ার্ডে এসটিএফ আছে৷ আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি ওয়ার্ডে দুই থেকে তিনটি এসটিএফ নির্মাণের জন্য৷ যদিও আমাদের জায়গার সংকট আছে৷ তবে আমরা জায়গা পাওয়া চেষ্টা করছি৷
একটু আগেই বলছিলেন, আমরা পিছিয়ে আছি৷ এই জায়গা থেকে সমাধানের পথ কী?
অনেক উন্নতি করার সুযোগ আছে৷ যদি মানুষের সচেতনতা ও সহযোগিতা থাকে৷ আসলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম শর্ত হচ্ছে, মানুষের সচেতনতা ও সহযোগিতা৷ এটা যদি পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় তাহলে দ্রুতই আমরা উন্নতি করতে পারব৷ কিছু সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে৷ কিছু বর্জ্য পরিবহনে আমরা খোলা ট্রাক ব্যবহার করছি৷ আগামী বছর যাতে খোলা ট্রাক রিপ্লেস করা যায় সেই চেষ্টা করছি৷ পাশাপাশি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উত্পাদনের একটা চেষ্টাও আমাদের আছে৷ বিদেশি কোন কোম্পানির সঙ্গে যদি এটা আমরা করতে পারি তাহলে বিরাট একটা মাইলফলক হবে৷
উন্নত দেশে আমরা দেখি বর্জ্য রিফাইন করে জৈব সার, গ্যাস এমনকি বিদ্যুৎ তৈরি করা হচ্ছে৷ এগুলো নিয়ে আমাদের কি কোনো পরিকল্পনা আছে?
একটু আগেই বলছিলাম বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উত্পাদন করতে আমরা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি৷ আশা করি শিগগিরই এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারব৷
কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা দেশের সঙ্গে আপনাদের আলোচনা হচ্ছে?
এখানে চাইনিজ কোম্পানি, কোরিয়ান কোম্পানি ও জার্মান কোম্পানির লোকাল এজেন্টের সঙ্গে কথা হচ্ছে৷ এছাড়া তাদের প্রতিনিধিও এখানে আছেন, যাঁদের সঙ্গে কথা হচ্ছে৷ আশা করছি, ভবিষ্যতে আমরা ভালো সমাধানে পৌঁছাতে পারব৷
ঢাকা শহরে কী পরিমাণ বর্জ্য উত্পাদিত হয় এবং তার কতটুকু আমরা পরিষ্কার করতে পারি?
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে প্রতিদিন কী পরিমাণ বর্জ্য জেনারেট হয়, সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই৷ তবে প্রতিদিন আমরা কতটুকু বর্জ্য সরিয়ে নিচ্ছি তার একটা হিসাব আমাদের কাছে আছে৷ এটাও আবার সিজন টু সিজন ভ্যারি করে৷ এই শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন আমরা ২১শ' থেকে ২২শ' টন বর্জ্য পরিবহন করে নিয়ে যাচ্ছি৷
আমরা তো পুরোটা নিতে পারছি না?
পুরোটা নিতে পারছি না, এটা বলা ঠিক হবে না৷ কারণ সিটি কর্পোরেশন যে সুবিধা দিয়েছে তাতে করে যে বর্জ্য আমাদের কাছে আসছে, তার পুরোটাই আমরা নিয়ে যাচ্ছি৷ কোনো বর্জ্য তো রেখে যাওয়া হচ্ছে না৷ সিটি কর্পোরেশন তো প্রতিটি মানুষের দরজায় যেতে পারবে না৷ কিন্তু আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি সেখানে যদি মানুষ বর্জ্যটা পাঠানোর ব্যবস্থা করে, তাহলে আমরা প্রতিদিনই সেটা পরিষ্কার করে নিয়ে যাচ্ছি৷
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যারা যুক্ত তাদের তো স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে৷ এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন বা সরকারের তরফ থেকে কি তাদের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?
প্রাথমিকভাবে যারা ভ্যানে করে বর্জ্য নিয়ে যাচ্ছে, তারা কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের কর্মী না৷ তথাপি তাদের ব্যাপারে আমরা সচেতন৷ এদের যারা ভ্যান মালিক তাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিতই কথা বলছি৷ যারা এগুলো নিচ্ছে, তারা যেন বর্জ্য নেয়ার সময় হাতে হ্যান্ডগ্লাভস পরে বা মুখে মাস্ক পরে সেটা আমরা বলছি৷ কিন্তু এটা একটা অভ্যস্ততার ব্যাপার৷ অনেক সময় তারা হ্যান্ডগ্লাভস বা মাস্ক পরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না৷ তারপরও কীভাবে তাদের অভ্যস্ত করা যায় সে চিন্তা আমাদের আছে৷ আমরা সে ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি৷
এই বর্জ্যগুলো তো উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে৷ এই অবস্থার পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব?
আমাদের দু'ধরনের পরিকল্পনা আছে৷ আমি আগেই বলেছি, যদি এগুলো রিফাইন করে বিদ্যুৎ উত্পাদন করা যায় তাহলে এই বর্জ্য অর্ধেকের নীচে নেমে আসবে৷ আরেকটা ব্যবস্থা হলো, যেখানে আমরা বর্জ্য ফেলি সেখানে ১০ ফিট বা ১৫ ফিট হলে সেটা আমরা কাভার দিয়ে ঢেকে দেই৷ তার উপর আবার বর্জ্য ফেলা হয়৷ এভাবে চলতে থাকে৷ বর্তমানে আমাদের যে ল্যান্ডফিল আছে, সেটা আমরা ২০০৫ সালে শুরু করেছি৷ এটা আর দু-তিন বছর চলবে৷ এরপর আমাদের নতুন জায়গায় চলে যেতে হবে৷ সেটা আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি৷ নতুন জায়গা পেলে আমরা পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বর্জ্য ফেলার ব্যাপারে চিন্তা করছি৷
ঢাকার দু'টি সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ১৮১ বর্গকিলোমিটার৷ এর সঙ্গে আরো ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত হচ্ছে৷ এর ফলে ঢাকার আয়তন হবে প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার৷ এই বিশাল এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে? আমাদের কি সেই পরিমাণ প্রস্তুতি আছে?
নতুন এলাকা যুক্ত হলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়তন হবে ১৯৬ বর্গকিলোমিটার৷ এখন যেটা আছে ৮৩ বর্গকিলোমিটার৷ এখন ওয়ার্ড আছে ৩৬টি৷ আরো ১৮টি যুক্ত হয়ে হবে ৫৪টি৷ বিশাল জনগোষ্ঠী যুক্ত হবে সিটি কর্পোরেশেনের মধ্যে৷ এর জন্য আমাদের প্রস্তুতি চলছে৷ আমরা অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি৷ ভেহিকল যেগুলো লাগবে সেগুলো কেনার প্রস্তুতি চলছে৷ নতুন এলাকাতে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের জন্য আমরা জায়গা খোঁজার চেষ্টা করছি৷ ল্যান্ড সিলের জন্য কোনো জায়গা পেলে সেটা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমকে আরো গতিশীল করবে৷ সামনের বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি৷
ঢাকা শহরে এখনো আমরা অলি-গলিতে বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখি৷ উন্নত কোনো দেশে আমরা এই অবস্থা দেখি না৷ এই পরিস্থিতি থেকে কি বের হওয়া সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব৷ কেন সম্ভব হবে না? আমি আগেই বলেছি, আপনারা যে লেভেলে আশা করছেন সেটা করতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতা ও সহযোগিতা৷ একজন মানুষ যদি নিজে সচেতন হন এবং এইভাবে সহযোগিতা দেন যে আমি রাস্তার মধ্যে কোনো ময়লা ফেলব না৷ আমি আমার বাড়ির ময়লাটা রাস্তায় ফেলে আসব না৷ তাহলে অগি-গলিতে আপনি বর্জ্য দেখবেন না৷ তখন সে কী করবে, সিটি কর্পোরেশন যে জায়গা দিয়েছে সেখানে সে ময়লা ফেলে আসবে৷ এটা করতে পারলে আপনারা যে লেভেলে আশা করছেন সেই লেভেলে পৌঁছে যাবো আমরা৷
ঢাকা শহরকে বর্জ্যমুক্ত করতে আপনার পরামর্শ কী?
আমার প্রথম পরামর্শ হলো, ঢাকা শহরের নাগরিকদের সচেতনতা ও সহযোগিতা দরকার৷ যদি আমরা ক্লিন ঢাকা গড়তে চাই৷ আপনি জানেন আমাদের মেয়র যখন দায়িত্ব নেন তখন তিনি বলেছিলেন, তার তিনটি টার্গেট৷ এগুলো হলো – ক্লিন ঢাকা, গ্রিন ঢাকা ও সেইফ ঢাকা৷ ক্লিন ঢাকার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷ কোরবানি ঈদের সময় মানুষ যে পরিমাণ সহযোগিতা করে থাকে, পুরো বছর সেই পরিমাণ সহযোগিতা পেলেই ক্লিন ঢাকা পেতে আমাদের বেশি দেরি হবে না৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷