বইবাজার : বাণিজ্যের আড়ালে সৃজন
১৬ এপ্রিল ২০২১দেশের সৃজনশীল বইয়ের জগতে সর্বশেষ বড় আঘাতটি করেছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকরা। এমনকি মেলার বিক্রিও এবার তলানিতে ঠেকেছে।
তবে এর মাঝেও এবারের বইমেলায় ইংরেজি শেখার দুটি বই সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় উঠে এসেছে, যে রকমটি অতীতে আর কখনোই দেখা যায়নি। মুনজেরিন শহীদ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য স্নাতোকোত্তর এক শিক্ষার্থী এই দুই বইয়ের লেখক।
বাংলাদেশের বইয়ের বাজার
বাংলাদেশের বইয়ের বাজার মোটামুটি চারভাগে বিভক্ত- পাঠ্যবই ও পাঠ্যসহায়ক বই, চাকরির বই, ধর্মীয় বই এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল বই। সিপাহী বিদ্রোহের কাছাকাছি সময়ে ঢাকায় এই বইয়ের ব্যবসা শুরু হয়। তবে এখানকার বইয়ের ব্যবসার বড় একটা টার্নিং পয়েন্ট ৪৭-এর দেশ বিভাগ।
দেশ বিভাগের আগে অবিভক্ত বাংলার রাজধানী হিসাবে পুরো বাংলার প্রকাশনা জগতেরও কেন্দ্র ছিল কলকাতা। সেখানকার বই-ই চলতো গোটা পূর্ববঙ্গে। দেশ বিভাগের পর এই পালা ঘুরে যায়। তখন ঢাকার বাংলাবাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে আজকের বই বাণিজ্য। কলকাতা থেকেও তখন কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা ঢাকায় চলে আসে। এভাবেই এক নব যাত্রা শুরু করে ঢাকার প্রকাশনা জগত।
ষাটের দশকে ঢাকার প্রকাশনা শিল্প দেখেছেন খান ব্রাদার্সের মালিক কে এম ফিরোজ খান। তিনি বলেন, সে সময় আজাদ সিনেমা হলের পেছনে ছিল তাবুক প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং। সেখানে একদিন দেখি, কৃষ্ণ গোপাল বসাকের ‘রিক্তের বেদন' উপন্যাসটি ১০ হাজার কপি ছাপা হচ্ছে।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তখন সালেহা, আনোয়ারা, মনোয়ারা- এই বইগুলোও খুব চলতো।
দুই সময়ে প্রিন্টিং প্রযুক্তিও বদলে গেছে অনেক। ফিরোজ খান বলেন, তখন সাড়ে ১২শ, সাড়ে ২২শ, সাড়ে ৩২শ- এ রকম সংখ্যায় বই ছাপা হতো। এখন তো অনেকে কম্পিউটারে প্রিন্ট করে ১০টা বইও ছাপে।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদের মতে, দেশের প্রকাশনা শিল্পের বাজার ১৫ হাজার কোটি থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে সৃজনশীল বইয়ের বাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো।
সৃজনশীল এসব বইয়ের কেনাবেচার বড় একটা উপলক্ষ্য বইমেলা।
বইমেলার কেনাবেচা
গত বেশ কয়েক বছর মেলা শেষে বাংলা একাডেমি মেলার মোট কেনাবেচার একটা হিসাব দিয়ে আসছিল। হিসাব দেয়ার এই ধারায় ছেদ পড়েছে এবার।
সাধারণত প্রতিবছর মেলার শেষদিন বা তার পরেরদিন বিক্রির এই অংক একাডেমি থেকে জানা যেতো। এবার সেটা জানা যায়নি। তবে এক সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি বলেছে, এবারের মেলায় মাত্র তিন কোটি ১১ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যেটা আগের বছরের তুলনায় অনেক অনেক কম।
বাংলা একাডেমির হিসাব অনুসারে, ২০১৪ সালে বইমেলায় ১৭ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ২১ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৬ সালে ৪২ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২০ সালে ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়।
এই দুই হিসাব সঠিক হয়ে থাকলে এবারের মেলায় গত বছরের ২৬ ভাগের এক ভাগ বই বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদের মতে, এবারের মেলায় বিক্রির পরিমাণ কোনোভাবেই ৮-১০ কোটি টাকা ছাড়াবে না।
এই হিসাব সঠিক ধরলেও মেলায় এবার বিক্রি কমে ১০ ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে, যেটাকে অকল্পনীয় বলছেন প্রকাশক ফরিদ।
তিনি বলেন, আমরা বড় প্রত্যাশা করিনি। আমাদের প্রত্যাশা না থাকলেও এই বইমেলাকে নিয়ম মানার বইমেলা ও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু এতটা খারাপ হবে, এটা আমাদের ধারণাই ছিল না।
বাংলাদেশের বেস্ট সেলিং বই
নব্বইয়ের দশকে হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বেশি বই বের করেছেন সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ। তার মতে, তখন হুমায়ূনের নতুন একটা বই মেলায় এলে তিন হাজার কপি চলতো।
হুমায়ূন আহমেদকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার ২০ হাজার ক্রেতা বাংলাদেশে তৈরি করবো। বাংলাদেশের ২০ হাজার ঘরে ২০ হাজার বুক শেলফ থাকবে, যেখানে হুমায়ূন আহমেদের বই বের হলেই তারা সংগ্রহ করবে।''
ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘‘এটা পরে সত্যি হয়েছিল।
তিনি (হুমায়ূন) যখন বেঁচে ছিলেন, তখন তার যে কোনো বই মেলাতে বের হলে ২০-৩০ হাজার কপি বিক্রি হতো। কিছু কিছু বইয়ের আলাদা ক্রেজ ছিল। যেমন হিমু সংক্রান্ত বই হয়তবা আরেকটু বেশি বিক্রি হতো।”
একটা পর্যায় পর্যন্ত জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশনের বিক্রি ২৫ হাজার ক্রস করে গিয়েছিল। ওনার কিশোর থ্রিলারগুলো ২০ হাজারের এদিক-ওদিক বিক্রি হতো।”
ফরিদ আহমেদের মতে, দেশে আরো ৫-১০ জন লেখক রয়েছেন, যাদের বই ৫ হাজার কপি পর্যন্ত বিক্রি হতো। তা ছাড়া বাংলাদেশের যেকোনো লেখকের বই সর্বাধিক ৫০০ ছাপা হয়।”
বাংলাদেশের বেস্ট সেলিং বইয়ের গল্প আনিসুল হকের ‘মা' ছাড়া সম্ভবত করা যাবে না। এই বইয়ের প্রকাশক সময় প্রকাশন।
ফরিদ আহমেদ বলেন, মা'র একশতম মুদ্রণ হয়ে গেছে। এই একশতম মুদ্রণ হতে সময় লেগেছে ১৭ বছর। এর কোনো কোনো মুদ্রণে এক হাজার কপি, আর কোনো কোনো মুদ্রণে পাঁচ হাজার কপি ছাপা হয়েছে।
এই বই নিয়ে খুশি হলেও বিক্রির এই সংখ্যা নিয়েও খুশি নন ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‘এরকম বইয়ের প্রতি আমাদের আসতে হবে। তবে পাঁচ বছরে একটা বই যদি ৫ লাখ কপি বিক্রি হয়, সেটাকে নিয়ে আমরা আল্লাদ করতে পারি।''
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের ১৬-১৭ কোটি লোক। ইউরোপের কয়টা দেশ মিলালে ১৬/১৭ কোটি লোক হবে? তারপর বাংলাদেশের শিক্ষিত জনসংখ্যা হচ্ছে ৮০ শতাংশ। সুতরাং আমাদের দেশের লোকজনেরই যদি পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে পুরো ইউরোপে একটা বই যত কপি চলে, এক বাংলাদেশেই এর চেয়ে বেশি বই চলতে পারে।''
তবে বাস্তবের পরিস্থিতি এখন অনেক খারাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এখন বেস্ট সেলিং বইয়ে ২০ হাজার কপি দিয়েই আমরা সন্তুষ্ট। কারণ, সেকেন্ড লেভেল তো মাত্র ২০০।''
‘‘যারা ভালো লেখেন, তাদের কিশোর উপযোগী যে কোনো বই অন্তত এক লাখ কপি চলা উচিত। যে পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী সেই হিসাবে কী পরিমাণ বই চলা দরকার। এই ১৭ কোটি লোকের এক শতাংশও যদি বই পড়ে, তাহলেও এটা দুই লাখের কাছাকাছি চলে যেতে পারে।”
বেস্ট সেলার মুনজেরিনের বই
এবারের বইমেলায় আলোচিত বই হচ্ছে, ‘ঘরে বসে Spoken English ও ‘সবার জন্য Vocabulary। এই দুই বইয়ের লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য স্নাতকোত্তর এক শিক্ষার্থী মুনজেরিন শহীদ।
দুই বইয়ের সফট কপি প্রথমে বাজারে আনেন তারা। পরে বইমেলায় আসে প্রিন্টেড কপি। দুটি বইই উঠে আসে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায়।
সৃজনশীল বইয়ের মেলা হিসাবে পরিচিত বইমেলায় মুনজেরিনের বইয়ের পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মীয় বইয়ের সাফল্যের পর অনেকেই মুখর হন সমালোচনায়।
তবে মুনরেজিন পুরো বিষয়কে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন।
তার মতে, সমাজে একটা স্কিল গ্যাপ আছে। সে কারণেই তার বই পড়ছে মানুষ।
সৃজনশীল বই বিক্রি কমার কারণ
বইমেলায় এবারের কেনাবেচা কম হওয়ার পেছনে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি ও বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল পাল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নানা কারণকেই সামনে এগিয়ে রাখছেন।
তবে দীর্ঘমেয়াদে সৃজনশীল বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমার পেছনে আরো নানা কারণের কথা বলছেন তারা।
ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘‘যখন বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যখন মিটিং হয়েছিল, যখন আমরা বইমেলার জন্য রেজিস্ট্রেশন করছিলাম। যখন বইমেলার জন্য আমরা স্টলের কাজকর্ম করছিলাম, তখন কিন্তু এত সংক্রমণ ছিল না। বরং যখন বইমেলার তারিখ ঘোষণা করা হয়, তখন সংক্রমণ ছিল সর্বনিম্ন পর্যায়ে।''
এরপর বইমেলা শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেল। মেলা শুরুর পর সংক্রমণ আরো বাড়তে থাকে। সংক্রমণ বাড়ার কারণে বইমেলায় লোক সমাগম কম হয়।”
তার মতে, ‘‘এরপর বইমেলা চলার যে সময়, দুপুর তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা, নয়টা- এ সময়সূচি কর্তৃপক্ষ দুই/তিনবার পরিবর্তন করে। এরপর বইমেলা চলাকালেই শুরু হয় লকডাউন।''
সব মিলিয়ে বিক্রি নিয়ে তার মূল্যায়ন, ‘‘আমাদের ধারণা ছিল হয়ত বিক্রি ২০ বা ২৫ শতাংশ কমে যাবে। ৩০-৪০ভাগও কমতে পারে। কিন্তু ৯০ শতাংশ কমে যাবে, এটা আমরা ভাবতেই পারি নাই।''
তিনি বলেন, ‘‘বইমেলায় যে ক্রেজ থাকে, সেটা হচ্ছে জাফর ইকবাল। শিশুদের ক্রেজ। তারা জাফর ইকবালের বইয়ের জন্য পাগল হয়ে যায়। আনিসুল হক। এ ধরনের আরো অনেক আছে। কিন্তু এরা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয়।''
ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘‘এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ঢাকাতেই নেই। যারা ঢাকায় আছে, তারা তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যান না। মেলায় কীভাবে যাবে? অভিভাবকরা তাদেরকে বাসা থেকে বের হতে দেয়নি।
এই শ্রেণিটা এবারের বইমেলাতে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল।”
জাফর ইকবাল যখন বইমেলায় ঢোকেন, তখন তার পেছনে হ্যামিলনের বংশিবাদকের মতো বাচ্চাদের বিশাল লাইন পড়ে যায় অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য। তিনি এবার একদিনও বইমেলায় যাননি। আনিসুল হক দুই-তিন দিন গিয়েছেন শুধুমাত্র কয়েকটা অ্যাসাইনমেন্টে, কয়েকটা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে চলে এসেছেন। এই ক্রেজগুলো এবারের বইমেলায় ছিল না।”
৯০'র দশকে যখন দেশে শিক্ষার হার ছিল ২০ শতাংশ- সেই তুলনায় বাংলাদেশে সৃজনশীল বইয়ের বাজার বাড়েনি বলেও মত তার।
এর জন্য তিনি দায়ী করেন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে।
তিনি বলেন, একটা শিশু-কিশোরের সিলেবাসে যদি ৫টা বই থাকে, তাকে ১৫টা বই পড়তে হচ্ছে। (সৃজনশীল বই পড়ার) তার সময়টা কোথায়। তার সঙ্গে তাকে সারাদিনে ৫টা কোচিং করতে হচ্ছে।
যারা বইয়ের পাঠক, তারা সারা বছর অল্প কিছু বই পড়ে। আর ফেব্রুয়ারির উৎসবে কিশোর ছেলে মেয়েরা বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরে, মেলায় গিয়ে বই কেনে। এভাবে তো একটা দেশের প্রকাশনা বৃদ্ধি পাবে না। একটা দেশের পাঠক বৃদ্ধি পাবে না। একটা দেশের লেখকরাও খুব বেশি এগুতে পারবে না।”
‘‘আমাদের বাবা-মায়েরা একটা বইয়ের সাথে সহায়ক তিনটা বই কিনে দিচ্ছেন, কিন্তু একটা ভালো সাহিত্য যে সহায়ক গ্রন্থ হতে পারে, সেটা আমরা অনুভব করছি না।”
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি এবং বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল পাল বলেন, ‘‘বইমেলার তিনটা তারিখ আমরা চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনোটাই হয়নি। সবশেষে মেলা শুরু হলো চৈত্রমাসে। প্রচণ্ড তাপদাহে। এর মাঝে তিনবার সময় পরিবর্তন হয়েছে। মেলা চলেছে ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত, যে সময় প্রচণ্ড রোদ থাকে। ''
বইমেলায় সৃজনশীল বইয়ের বাইরে অন্য বই সর্বাধিক বিক্রিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অভাব সংকট দেখা দিলে মোটিভেশনাল বই, চাকরির বই, ধর্মীয় বই বেশি চলবে। কোভিডের কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছে। তাই চাকরির বই সেল হচ্ছে, নিয়োগের বই সেল হচ্ছে।''
এর আগের বছরগুলোতে ধর্মীয় বইয়ের দাপট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ কেন জানি একটা দিকে ঝুঁকছে। প্রভাবিত হচ্ছে মানুষ। মুক্ত চিন্তার বাইরে গিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। এই ধাঁচটা শুরু হয়েছে গত ৫-৭-১০ বছর ধরে। এখন মহিরুহের আকার ধারণ করেছে।''
পরিবর্তনের জন্য তার সুপারিশ, "এখানে সৃজনশীল আন্দোলন করতে হবে। বই পড়াতে হবে, বই কিনতে হবে, বই পড়াতে বাধ্য করতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ৫ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বই ক্রয়ের বরাদ্দ ৪ কোটি টাকা। এই টাকায় কয়টা বই পাওয়া যায়? তার ভেতরেও ৩০ শতাংশ মন্ত্রী ও সচিবের কোটায় রয়ে যায়। তাহলে আমাদের জাতি কিভাবে সৃজনশীল মেধায় বিকশিত হবে? আমাদের সন্তানরা কীভাবে সৃজনশীল মেধায় বিনির্মাণ হবে?
পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে বলে দাবি তার।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে প্রত্যেকটা স্কুলে লাইব্রেরি ছিল। সেখানে কার্ড করে আমরা বই নিয়ে আসতাম। পড়ে ফেরত দিতাম। কিন্তু সেটা এখন আর নাই। আমরা এখন জিপিএ ফাইভের পেছনে ঘুরছি। সৃজনশীল মেধায় জাতি নির্মাণ করার চিন্তাই করছি না।''
তিনি বলেন, ‘‘বই পড়ার আন্দোলন তৈরি করতে হবে। প্রত্যেকটা স্কুলে পাঠাগার তৈরি করতে হবে, সেখানে বই দিতে হবে। জাতীয় বাজেটে সৃজনশীল বই কেনার জন্য অন্তত একশ কোটি টাকা দেয়া উচিত।''
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেই বছরে বই কেনার বাজেট ৮৯ কোটি টাকা। আমরা ১২শ-১৪শ-২ হাজার কোটি টাকার একাডেমিক বই ফ্রি দিচ্ছি। আমরা কি ১০০ কোটি টাকার বই (সৃজনশীল) দিতে পারি না? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও মাদকের পেছনে কত টাকা ব্যয় করছি। বইয়ের পেছনে টাকা ব্যয় করলে এই দুই খাতেও খরচ কমে যেতো। একটা শূন্যতা সৃষ্টি হলে অন্য কেউ সেই জায়গা দখল করবেই।”