ফ্রি-ডাইভিং-এর রহস্য
২১ নভেম্বর ২০১৭অবলীলাক্রমে গভীর জলে ডুব দিতে পারেন এই অ্যাপনিয়া ডাইভার বা ফ্রি-ডাইভাররা, এবং তা অক্সিজেন ছাড়াই৷ একবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে এরা যে গভীরে ডুব দিতে পারেন, অন্যরা অক্সিজেনের বোতল নিয়ে আর মুখোশ পরেও তা করতে পারেন না৷ যেমনডরিস হোফারমান, যিনি ছ'মিনিট অবধি নিঃশ্বাস না নিয়ে, দম আটকে থাকতে পারেন৷ দম নেওয়ার বিশেষ পদ্ধতি ও বহু বছরের প্রশিক্ষণ তাঁকে এ কাজে সাহায্য করেছে৷
বন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের ড. লার্স আইশহর্ন-এর মতো চিকিৎসকদের কাছে অ্যাপনিয়া ডাইভার বা ফ্রি-ডাইভারদের ডুব দেবার রেকর্ডগুলো একটা ধাঁধা৷ মানুষের শরীর এতোক্ষণ ধরে অক্সিজেন ছাড়া থাকতে পারে কি করে? বন ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল কলেজের ডক্টর আইশহর্ন ও তাঁর সতীর্থরা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷
ফ্রি-ডাইভারদের বিশেষ ক্ষমতার দরুন তাদের নিয়ে গবেষণা করে লাভ আছে৷ বিভিন্ন পরীক্ষায় তাদের হাত-পা ও মস্তিষ্কে কী পরিমাণ অক্সিজেন আছে, তা মেপে দেখা হয় – যেমন ডরিস হোফারমান৷ তিনি জানালেন, ‘‘প্রাথমিক ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, হাত-পায়ের চেয়ে মাথায় অনেক বেশিক্ষণ ধরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে৷ এখানে আমরা অক্সিজেনের অভাব পূরণের কোনো অজ্ঞাত পদ্ধতির হদিশ পাচ্ছি৷ আমরা জানতে চাই, মস্তিষ্কের ক্ষতি ছাড়াই মানুষ এতোক্ষণ ধরে দম না নিয়ে থাকতে পারে কি করে৷''
এমার্জেন্সি সার্ভিস?
দৃশ্যত মানবশরীরের একটা গোপন আপৎকালীন পরিকল্পনা রয়েছে: সংকটের মুহূর্তে যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে ধরে রাখার এক আপৎকালীন পরিকল্পনা৷
ফ্রি-ডাইভিং-এ আন্তর্জাতিক রেকর্ড হল ১১ মিনিটের বেশি৷ অপরদিকে সমুদ্রের গভীরে ডুব দেওয়ার ক্ষেত্রে ফ্রি-ডাইভারদের রেকর্ড হল ২০০ মিটারের বেশি৷ ফ্রি-ডাইভাররা তাদের ফুসফুসের প্রতিটি কোণ ভরে দম নিতে ও নাড়ির গতি অত্যন্ত কম রাখতে পারেন৷
পানির নীচে মানবশরীর একটি জটিল পদ্ধতিতে কাজ করে৷ বন-এর গবেষকরা সেই পদ্ধতি বুঝতে চান৷ এক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে, কেননা শরীরের এই অঙ্গটি সারা শরীরে রক্তচলাচল ও তার সঙ্গে অক্সিজেন প্রেরণের ব্যবস্থা করে৷ অ্যাপনিয়া ডাইভারের জীবন্ত হৃৎপিণ্ড দেখে চিকিৎসকরা যা জানতে ও বুঝতে পারছেন, তা হয়তো একদিন এমার্জেন্সি পেশেন্টদের কাজে আসবে৷ কেননা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের অভাব একটি সুপরিচিত সমস্যা৷
ড. আইশহর্ন বললেন, ‘‘স্বভাবতই সাধারণ রোগীদের নিয়ে এ ধরনের পরীক্ষা চালানো যায় না৷ ফ্রি-ডাইভারদের নিয়ে পরীক্ষা করে আমরা দেখতে পারি, চরম পরিস্থিতিতে মানুষের শরীর কীভাবে কম অক্সিজেন সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে নিতে পারে৷ আমরা দেখি, একটি সুস্থ মানুষের শরীর কীভাবে অক্সিজেনের অভাব পুষিয়ে নেয় – তা থেকে হয়তো আমরা ভবিষ্যতে রোগীদের আরো ভালোমতো সাহায্য করতে পারব৷''