ফেরত পাঠানো অভিবাসীর আত্মহত্যা
১১ জুলাই ২০১৮আগের দিন যা নিয়ে কৌতুক করেছিলেন, পরের দিনই যে তা তাঁর জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াবে, হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি সেহোফার৷ কিন্তু ঘটলো ঠিক তাই৷
মঙ্গলবার তথাকথিত ‘অভিবাসন সংক্রান্ত মাস্টার প্ল্যান' উপস্থাপনের সময় তিনি হাস্যচ্ছলে বলেছিলেন, ‘‘আমার ৬৯তম জন্মদিনে আমার কোনো আদেশ ছাড়াই ৬৯ জনকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷''
সেহোফার যখন এই কথা বলছিলেন, তখনও তিনি জানেন না, এই ফেরত পাঠানো আফগানদের একজন কাবুলের এক ক্যাম্পে কয়েক ঘণ্টা আগেই গলায় দড়ি দিয়েছেন৷
বুধবার সেহোফারের মন্ত্রণালয়ই ২৩ বছর বয়সি জামাল নাসের মাহমুদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে৷ ছোট্ট এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ঘটনা ‘খুবই মর্মান্তিক'৷
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের উদার অভিবাসন নীতির বিরোধিতা করে এমনিতেই জার্মানিতে বেশ বিতর্কের মুখে খ্রীস্টিয় সামাজিক ইউনিয়ন সিএসইউ'র প্রধান সেহোফার৷ সংকট এতটাই তীব্র রূপ নিয়েছিল যে, অনেকে ভয় পাচ্ছিলেন জার্মানির সরকারই ভেঙে পড়বে৷
তবে শেষ পর্যন্ত ম্যার্কেলের দল সিডিইউ এবং জোট সরকারের আরেক শরিক সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি অভিবাসন নীতিতে বেশ কিছু ছাড় দেয়ায় গত সপ্তাহে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে৷
সরকারের মধ্যে প্রকাশ্য এই বিরোধে সেহোফারের জনপ্রিয়তা অনেকখানিই কমেছে৷ এখন তাঁর পদত্যাগের দাবি আরো জোরালো হয়ে উঠছে৷ এমনকি এখন জোট সরকারের অনেকেও তুলছেন সে দাবি৷
টুইটে এসপিডি সদস্যদের ক্ষোভ
এসপিডির যুব সংস্থার প্রভাবশালী নেতা কেভিন ক্যুনের্ট টুইট করেছেন, ‘‘হর্স্ট সেহোফার একজন ভয়াবহ ব্যক্তি এবং তিনি এই পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন৷ তাঁর অনেক আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল৷''
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন ভেস্টফালিয়ার এসপিডি টুইট করেছে, ‘‘যে গণতন্ত্রের কাছে আমরা এত কৃতজ্ঞ, মানবিক গুণাবলীহীন এমন একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই গণতন্ত্রকেই নষ্ট করে দিচ্ছেন৷''
বার্লিন থেকে নির্বাচিত এসপিডির পার্লামেন্ট সদস্য কান্সেল কিসিলিটেপা টুইটে ম্যার্কেলকে আহ্বান জানিয়েছেন অবিলম্বে যাতে সেহোফারকে বরখাস্ত করা হয়৷
তবে কট্টর ডানপন্থি, অভিবাসনবিরোধী দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড এএফডির পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বা তাঁর সিডিইউয়ের বড় কোনো নেতাও এখনও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি৷
অস্ট্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় এই ইস্যুতে প্রশ্নের মুখোমুখি আপাতত হতে হচ্ছে না সেহোফারকে৷
কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, সেহোফার এখন ম্যার্কেলের জোট সরকারের জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছেন৷ সরকারে তাঁর দিন হয়তো ঘনিয়ে এসেছে৷
জেফারসন চেজ/এডিকে