‘টপলেস’ ছাড়া ফ্রান্স?
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪অথচ এই ফ্রান্সে কিছুদিন আগেও সমুদ্রসৈকতে মহিলাদের ‘ল্য টপলেস' ছাড়া কল্পনাই করা যেত না৷ কিন্তু নারীবাদের পথিকৃৎ ‘এল' ম্যাগাজিনের একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে, ৩৫ বছরের কম বয়সের ফরাসি মহিলাদের মাত্র দুই শতাংশ আজও জনসমক্ষে বক্ষদেশ উন্মুক্ত করতে রাজি৷ অর্থাৎ ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরায় ব্রিজিট বার্ডো-র কায়দায় অর্ধনগ্নতার যুগ বোধহয় সত্যই শেষ হয়েছে কিংবা শেষ হতে চলেছে৷
ফরাসি মহিলাদের নাকি সংকোচ বেড়েছে৷ নগ্নতাকে আজকাল নাকি ‘‘ভালগার'', অর্থাৎ অশিষ্ট কিংবা ইতর বলে বিবেচনা করছেন ফরাসি মহিলারা৷ সেখান থেকে যদি ফেরা যায় গত শতাব্দীর ষাটের দশকে, তাহলে শোনা – এবং দেখা যাবে আরেক কাহিনি ও দৃশ্য: নারীবাদকে ‘সেক্সি' করার লক্ষ্যে ‘কোট দাজুর', বা নীল সৈকতে টপলেস হয়েছিলেন অভিনেত্রী ব্রিজিট বার্ডো৷ যুক্তি ছিল: পুরুষদের যখন ওপরে কিছু পরতে হয় না, তখন মহিলাদেরই বা পরতে হবে কেন? খোদ ভ্যাটিকান থেকে আপত্তি উঠেছিল সেবার৷
ফ্রান্স কিন্তু রক্ষণশীলদের সোচ্চার প্রতিবাদ সত্ত্বেও তথাকথিত ‘মোনোকিনি'-কে নিষিদ্ধ করতে অস্বীকার করে: এ ছিল সত্তরের দশকের ঘটনা৷ তাহলে পঞ্চাশ বছর পরে আজ যে ‘‘ল্য টপলেস''-এর মৃত্যু ঘটতে চলেছে, সেটা কি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক? ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ও আর কিছু নয়, ফ্যাশন বদলে গেছে, তাই টপলেস-ও উধাও হচ্ছে৷ হালের ফ্যাশান হলো পূর্ণাঙ্গ, ওয়ান-পিস সুইমস্যুট – যাতে নজরটা যায় নিতম্বের দিকে৷
সমাজতত্ত্ববিদরা কিন্তু বলছেন, টপলেস-এর অন্তর্ধানের অর্থ, ফরাসি মহিলারা নারীবাদের অর্জন বিস্মৃত হতে বসেছেন৷ নারী স্বাধীনতা অর্জন করার পর আজকের মহিলারা গতানুগতিকতার অনুগামী, এমনকি অলস হয়ে পড়েছেন৷ উগ্র নারীবাদীদের প্রজন্ম আজ প্রবীণ; অপরদিকে তথাকথিত মিলেন্নিয়াম জেনারেশন পুনরায় প্রথাগত রক্ষণশীল মূল্যবোধের দিকে মোড় নিয়েছে৷
সমাজতত্ত্ববিদদের পরে আসছেন মনস্তত্ত্ববিদরা৷ তাঁরা বলছেন, ইউরোপে আর্থিক সংকটই টপলেস-এর অকালমৃত্যুর কারণ৷ বক্ষ অনাবৃত করার অর্থ ঝুঁকি নেওয়া, বিপ্লব করা; সেক্ষেত্রে এই মাগগিগণ্ডার বাজারে সব কিছু রেখে-ঢেকে রাখাটাই নিরাপদ!
‘এল' ম্যাগাজিন বলছে, মহিলাদের টপলেস বর্জন করার আসল কারণ হলো স্কিন ক্যানসারের ভয়!
শেষ একটা কারণ দেখানো যেতে পারে এবং দেখানো হয়েছে: মহিলারা শান্তিতে সূর্যস্নান করবেন কোথায়, যদি পুরুষরা সর্বত্র ফোন ক্যামেরা হাতে উঁকিঝুঁকি মারেন?
এসি/ডিজি (এপি)