1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্লাস্টিকের সমস্যা দূর করতে এনজাইমের প্রয়োগ

২৪ জুন ২০২৪

প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তে প্রকট হয়ে উঠছে৷ প্লাস্টিকের বিকল্প ও পুনর্ব্যবহারের কিছু বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের তেমন সুফল দেখা যাচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/4hRBt
লাইপসিশের গবেষণাগার
জার্মানির লাইপসিশ শহরের গবেষকরা এমন এক এনজাইম পেয়েছেন, যা প্লাস্টিক বেশ দ্রুত ভেঙে দিতে পারেছবি: Clare Roth/DW

জার্মান বিজ্ঞানীরা এবার নতুন উপায়ে প্লাস্টিক ধ্বংসের উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তে প্রকট হয়ে উঠছে৷ প্লাস্টিকের বিকল্প ও পুনর্ব্যবহারের কিছু বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের তেমন সুফল দেখা যাচ্ছে না৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা এবার নতুন উপায়ে প্লাস্টিক ধ্বংসের উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

৷ তবে তার জন্য ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন৷

প্লাস্টিকের সমাস্যার সমাধান করতে ক্রিস্টিয়ান সনেনডেকারের টিম জৈব প্রযুক্তি কাজে লাগাতে চায়৷ সেই প্রচেষ্টার ব্যাখ্যা দিয়ে সনেনডেকার বলেন, ‘‘প্রকৃতির কাজ পর্যবেক্ষণ করে আমরা সেটা নকল করার চেষ্টা করছি৷ পলিমার ভেঙে দিতে প্রকৃতি এনজাইম ব্যবহার করে৷ আমরাও এখন ঠিক সেটাই করছি৷''

লাইপসিশ শহরের দক্ষিণের কবরস্তানে ক্রিস্টিয়ান ও তাঁর এক সহকর্মী সেই এনজাইম খুঁজে পেয়েছেন৷ কম্পোস্টের মধ্যে সেটা পাওয়া গেছে৷ সেই এনজাইম আসলে গাছ থেকে পড়ে যাওয়া পাতার পচন ঘটায়৷ সনেনডেকার বলেন, ‘‘এমন এক পাতার উপরে মোমের এক স্তর রয়েছে, যাকে কাটিন লেয়ার বলা হয়৷ সেটা এক ধরনের পলিয়েস্টর৷ এটা একটা পলিমার, যার কাঠামো ঠিক পিইটি প্লাস্টিকের মতো এস্টার বন্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে৷ অনেক জৈব প্লাস্টিকের মধ্যেও এমন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়৷ এই সব এনজাইম এতটাই অনির্দিষ্ট, যে সেটি পলিয়েস্টার স্পেকট্রামের এক বিস্তির্ণ রেঞ্জ শনাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে৷ সেটা আমাদের সুবিধা এবং সৌভাগ্যও বটে৷ কারণ আমাদের প্লাস্টিকের সমস্যার জৈব জবাব পাওয়া গেছে৷''

প্লাস্টিকের বিপদ এড়াতে এনজাইম

সেই এনজাইম কত দ্রুত প্লাস্টিক ভাঙতে পারে, ক্রিস্টিয়ান সনেনডেকার হাতেনাতে তা করে দেখাচ্ছেন৷ ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এনজাইম মাত্র এক দিনেই পিইটি মোড়ক পুরোপুরি ভেঙে দিতে পারে৷ তখন শুধু মৌলিক উপাদানগুলি পড়ে থাকে৷ গবেষকরা সেই এনজাইম পেয়ে খুব খুশি৷ ক্রিস্টিয়ান সনেনডেকার জানান, ‘‘আমরা সেটার নাম রেখেছি পিএইচএল সেভেন৷ অর্থাৎ পলিয়েস্টার-হাইড্রোলেজ-লাইপসিশ৷ এটা আমাদের পাওয়া নয়টির মধ্যে সাত নম্বর এনজাইম৷ সেটা ছিল বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন এনজাইম৷''

এনজাইম-টি দৃশ্যমান করে তুলতে সেটির থ্রিডি প্রতিরূপ প্রিন্ট করা হয়েছে৷ ফলে সেটির ক্রিয়া বোঝানো সহজ হয়েছে৷ সনেনডেকার বলেন, ‘‘এই হলো সেই এনজাইম৷ পিইটি শৃঙ্খলের প্রতিটি এস্টার বন্ড দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ পূর্বনির্ধারিত ব্রেকিং পয়েন্ট৷ এবার এনজাইম এসে এক একটি এস্টার বন্ড চিবিয়ে খাচ্ছে৷ প্রক্রিয়ার শেষে টেরেফথালিক অ্যাসিড এবং ইথিলিন গ্লাইকলের মতো মৌলিক উপাদান অবশিষ্ট থাকে৷ সে সব দিয়ে নতুন করে প্লাস্টিক তৈরি করা যায়৷''

সনেনডেকারের টিম এবার আরো এক ধাপ এগোচ্ছে৷ তারা এনজাইমের ডিএনএ এমনভাবে পরিবর্তন করতে চান, যাতে সেটি আরো দ্রুত প্লাস্টিক খেয়ে নিতে পারে৷ সেই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পরিবর্তিত এনজাইম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে৷ প্রত্যেকটি আলাদা করে বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে দক্ষ এনজাইম বেছে নিতে চান তাঁরা৷

প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই কাজে সহায়ক হচ্ছে৷ বায়োটেকনোলজিস্ট রনি ফ্রাংকের সঙ্গে মিলে গবেষকরা সেই কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার আমরা বড় আকারে আমাদের প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে চাই৷ সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের নতুন প্রোটোটাইপ তৈরি করেছি, যার সাহায্যে প্রায় ১০০টি এনজাইমের নমুনা বিশ্লেষণ করতে পারি৷ একই সঙ্গে উপরের স্তরগুলি পরিমাপ করতে পারি৷ সেই প্রয়োজনীয় তথ্য এআই-কে জোগান দিয়ে আমরা প্রশিক্ষণও দিতে পারি৷ এভাবে আরো নতুন ও উন্নত এনজাইম খুঁজে বার করে আমরা প্লাস্টিক ভেঙে দিতে পারি৷''

সুপার এনজাইমের সন্ধানে তাঁরা দিনে কয়েক হাজার এনজাইম বিশ্লেষণ করতে চান৷ তাঁদের মনে আরো এক ধাপ এগোনের স্বপ্নও রয়েছে৷ লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট ক্রিস্টিয়ান সনেনডেকার বলেন, ‘‘আমরা চাই, শেষ পর্যন্ত বাজারে আরো বেশি পলিয়েস্টার নিয়ে কাজ হোক৷ কারণ এনজাইম কাজে লাগিয়ে সেগুলি ভেঙে ফেলা অনেক সহজ৷ এভাবে আমরা সত্যি কার্যকর চক্রাকার অর্থনীতি সৃষ্টি করতে পারি৷ এই মুহূর্তে প্লাস্টিক বর্জ্যের কোনো ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না৷ ফলে আমাদের কাছে এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই৷ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমরা এমন কিছু করতে চাই, যাতে টেকসইভাবে প্লাস্টিক রিসাইকেল করা যায়৷''

আরিয়ানে মায়ার, ক্রিস্টিয়ান সেভাল্ড/এসবি