ভিন ধর্মের বিয়েতে সায় ভারতের হাইকোর্টের
২৯ ডিসেম্বর ২০২০এক মাস হলো উত্তর প্রদেশে ধর্মান্তর রোধ আইন করেছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। সেই আইন প্রয়োগ করে ৪৯ জনকে জেলে পুরেছে পুলিশ। ১৪টি মামলা হয়েছে। ঘটনা হলো, মাত্র একটি ক্ষেত্রে মেয়েটি নাবালিকা এবং দুইটি ক্ষেত্রে মেয়েটিই অভিযোগ করেছে। বাকি সব ক্ষেত্রে আত্মীয়-প্রতিবেশীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে এবং পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক হলে যে কেউ নিজেদের ইচ্ছেমতো জীবন ও সঙ্গী বেছে নিতে পারবে। ২১ বছর বয়সী হিন্দু মেয়ে শিখা বিয়ে করেছিল মুসলিম যুবক সলমন ওরফে করণকে। তাঁর বাড়ির মানুষদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সলমনকে অপহরণের দায়ে গ্রেপ্তার করে এবং শিখাকে বাবা-মা-র কাছে ফিরিয়ে দেয়। তারপর শিখাই হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। আদালতে শিখা বার্থ সার্টিফিকেট জমা দেয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে, তাঁর জন্ম ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, নিজে পছন্দ করে, নিজের শর্তে, জীবন কাটানোর স্বাধীনতা শিখার আছে। তিনি নিজের ইচ্ছেমতো চলতে পারেন। কোনো তৃতীয় পক্ষ তাঁর জীবনে বাধা দিতে পারবে না। অন্য সব বিষয় অবান্তর। প্রাপ্তবয়স্ক হলে নিজের মতো করে জীবন কাটানো যাবে। আদালতের রায়ে আবার প্রমাণ হলো, প্রাপ্তবয়স্ক হলে নিজের ইচ্ছেমতো জীবনসঙ্গী বেছে নেয়া যাবে। ধর্ম সেখানে বাধা হবে না। প্রশাসনের ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, শিখার ইচ্ছের বিরুদ্ধে, নিজেদের যুক্তিবোধ কাজে না লাগিয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে।
উত্তর প্রদেশে ধর্মান্তর আইনে গ্রেপ্তার হওয়া সব কটি ঘটনা খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তাদের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়ে বিয়ে করলেও বাড়ির অভিযোগে ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দুইটি ক্ষেত্রে অভিযোগ করেছে মেয়ে নিজে। একটি ক্ষেত্রে মেয়ে নাবালিকা। এই তিনটি ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকতে পারে না। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে মেয়েটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিতে চায়নি।
অমর্ত্য সেনের মত
নোবেল পুরস্কারপ্রাপক অমর্ত্য সেন বলেছেন, লাভের মধ্যে জিহাদ থাকতে পারে না। একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারতে ধর্মান্তর বিরোধী আইন নিয়ে যা হচ্ছে, তা খুবই চিন্তার বিষয়। এটা মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। জীবনযাপনের অধিকার হলো মৌলিক অধিকার। যে কেউ নিজের ধর্ম বদল করতে পারেন। তাই এই ধরনের আইন অসাংবিধানিক।
অমর্ত্য সেন বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের উচিত হস্তক্ষেপ করা। তাঁর মতে, আকবরের আমলে নিয়ম হয়েছিল, যে কেউ যে কোনো ধর্ম নিতে পারেন। যে কোনো ধর্মে বিয়ে করতে পারেন। লাভ বা প্রেমের মধ্যে কোনো জিহাদ থাকতে পারে না।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই)