1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান শিল্প-বাণিজ্য ক্ষতির মুখে

৮ জুন ২০১২

শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় প্রথম দশটি দেশের মধ্যে পড়ে জার্মানি৷ কিন্তু বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের অভাব এতদিনে জার্মান সরকারেরও টনক নড়িয়েছে৷ বিদেশ থেকে কর্মী আনানো ছাড়া পন্থা নেই৷

https://p.dw.com/p/15APL
ছবি: picture-alliance/Frank May

জার্মান শ্রম বাজারের অবস্থা প্রথম নজরে ভালোই মনে হতে পারে, কেননা কর্মহীনদের সংখ্যা কমছে৷ অন্যদিকে খালি চাকরির সংখ্যাও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে৷ ফেডারেল শ্রমসংস্থান সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত জুন মাসে জার্মানিতে প্রায় পাঁচ লাখ চাকরি খালি ছিল, অর্থাৎ পাঁচ লাখ চাকরির জন্য কর্মী খোঁজা হচ্ছিল৷

তথাকথিত মেকাট্রনিক, সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম সংক্রান্ত যা কিছু, এছাড়া ধাতু শিল্প, মেশিন নির্মাণ শিল্প, গাড়ি শিল্প, এমনকি মাল পরিবহণ অথবা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন পেশাতেও আজ জার্মানিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না৷ আইটি, অর্থাৎ তথ্য-প্রযুক্তি শাখার তো কথাই নেই৷ জার্মান তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প সমিতি বিটকম'এর মুখ্য কার্যনির্বাহী ব্যার্নহার্ড রোহলেডার বলেন, ‘‘আমরা জানি, আমাদের শাখায় আমরা প্রায় দেড় বিলিয়ন ইউরো পরিমাণ ব্যবসা হারাচ্ছি, কেননা তার জন্য যথোপযুক্ত কর্মী আমাদের হাতে নেই৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের অভাবে সরাসরি ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে৷ এছাড়া নতুন পণ্য সৃষ্টিও ব্যাহত হচ্ছে, কেননা সেজন্য উদ্ভাবনশীল মস্তিষ্কের মানুষদের প্রয়োজন৷''

ভবিষ্যতে যা'তে শিল্প-বাণিজ্যের প্রয়োজন মেটাতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী পাওয়া যায়, সেজন্য তিনভাবে এগোতে হবে, বলে রোহলেডার'এর অভিমত৷ প্রথমত, জার্মান শিক্ষাব্যবস্থাকে তার উপযোগী করে তুলতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, বর্তমানে যেসব মহিলা ও প্রবীণেরা শ্রমবাজারে নেই অথবা শ্রমবাজার থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাদের সক্রিয় করতে হবে৷ তৃতীয়ত, অভিবাসন নীতির আধুনিকীকরণ করতে হবে৷

Migration nach Deutschland
বস্তুত বিদেশ থেকে কর্মী আনানো ছাড়া পন্থা নেইছবি: picture-alliance/ZB

কিন্তু শ্রমিক-কর্মীদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে অভিবাসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরেই খুব সহজ নয়৷ ঋণ সংকটের ফলে ইউরোপে বহু মানুষ এখন চাকরির খোঁজে৷ তবুও গ্রিস, স্পেন কিংবা পর্তুগাল থেকে খুব বেশি মানুষ যে জার্মানিতে আসতে আগ্রহী, এমন মনে হয় না৷ ফেডারেল শ্রমসংস্থান সংস্থার প্রধান হাইনরিশ আল্ট বলেন, ‘‘হ্যাঁ, ইউরোপের অভ্যন্তরে অভিবাসন বেড়েছে৷ এ'বছর ইইউ থেকে জার্মানিতে শ্রমিক-কর্মীদের অভিবাসন গতবছরের তুলনায় আরো লাখ দেড়েক বাড়বে, বলে আমাদের ধারণা৷ জার্মান শিল্পসংস্থাগুলি পরিকল্পিতভাবে অন্য দেশে কর্মীর খোঁজ চালাচ্ছে, কিন্তু তা শুধুমাত্র কয়েকটি পেশায়, যেখানে কর্মীর বিশেষ অভাব রয়েছে৷ এবং খুব যে বেশি কর্মী আনা হচ্ছে, এমন নয়৷''

বস্তুত খোঁজ চলেছে ইঞ্জিনিয়ারদের অথবা আইটি বিশেষজ্ঞদের৷ এক্ষেত্রে ইইউ'এর বাইরে থেকেও যে খুব বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী জার্মানিতে আসছেন , এমন নয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্লু কার্ড নিয়মাবলী অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়াররা, অথবা যে'সব পেশায় জার্মানিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের অভাব, সে'সব পেশার মানুষরা বছরে প্রায় ৩৫ হাজার ইউরো মাইনে দেখাতে পারলেই জার্মানিতে আসতে পারবেন৷ কিন্তু তা'তে যে কিছু জার্মানিতে আসার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে, বিটকম'এর মুখ্য কার্যনির্বাহী রোহলেডার তা মনে করেন না, ‘‘আমার একটি আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হয় ভারতে৷ সেখানে আমি এক আইটি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলছিলাম, যার তখন জার্মানি যাওয়ার কথা৷ বিশেষজ্ঞটি শুধু নিজেকেই নয়, আমাকেও জিজ্ঞাসা করছিলেন: ‘আমি ভুলটা কোথায় করলাম? আমাকে কেন জার্মানি যেতে হচ্ছে?' জার্মানিতে স্ট্র'বেরি পাওয়া যায়, এর বেশি তিনি কিছু জানতেন না৷ হয়তো কোনো জার্মান ফুটবল খেলোয়াড় কিংবা গাড়ির নাম৷ কিন্তু একজন কুশলী ভারতীয় আইটি বিশেষজ্ঞের পক্ষে জার্মানি যাওয়াটা হল এক ধরণের সাজা৷ জার্মানি তার কাছে স্বপ্নের দেশ নয়৷''

পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে রোহলেডার'এর কথাটা কত সত্যি৷ ২০১১ সালে ইইউ-বহির্ভূত দেশগুলি থেকে ১,২২১ জন ডাক্তার স্থায়ীভাবে জার্মানিতে আসেন৷ ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৯৫৷ ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রে ইইউ-বহির্ভূত দেশগুলি থেকে আগতদের সংখ্যা গত দু'বছরে মাত্র ৩০০ বেড়ে ১,১৯১'তে দাঁড়িয়েছে৷ অর্থাৎ যতদিন বসবাসের স্থান হিসেবে জার্মানি শিক্ষিত, প্রতিভাবান বিদেশিদের পক্ষে আকর্ষণীয় নয়, ততদিন এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটবে না৷ অপরদিকে বার্লিনে বিরোধীপক্ষের মতে অভিবাসীদের আনার আগে, দেশের মানুষদের মধ্যে যে সম্ভাবনা আছে, তার সদ্ব্যবহার করা দরকার৷ সে টানাপোড়েনের ফলেও মূল সমস্যা সমস্যাই থেকে যাচ্ছে৷

প্রতিবেদন: সাবিনে কিনকারৎস/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য