প্রতিস্থাপন চিকিৎসায় বিপ্লব – কাঠ থেকে তৈরি হাড়ের বিকল্প
৪ জানুয়ারি ২০১১বিভিন্ন সময় নানা দুর্ঘটনায় আমাদের শরীরের হাড় ভেঙে যায় বা অনেক সময় হাড়ের অসুখ জনিত সমস্যার কারণে তা প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হতে পারে৷ তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে সবসময় আঘাতটা ঠিকমত সেরে ওঠে না বা ভাঙা হাড় জোড়া লাগে না৷ ইদানীং বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম কাঠের হাড় বা উডেন বোন তৈরি করে সাফল্য পেয়েছেন৷ তাঁরা বিভিন্ন গাছের কাঠ দিয়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম এই হাড় তৈরি করেছেন৷ এটি হাড়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে৷ গবেষকরা বলছেন, এই প্রযুক্তি হাড় প্রতিস্থাপনে বিরাট সাফল্য বয়ে আনবে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘টেম-প্ল্যান্ট' প্রকল্পের সহায়তায় ইটালির বিজ্ঞানীরা এই নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন৷ ধাতুর পরিবর্তে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় হাড়ের বিকল্প, যা গুরুতর ভাঙা হাড় জোড়া লাগানোর কাজে সহজে ব্যবহার করা যায়৷ এই পদ্ধতিটি প্রতিস্থাপন চিকিৎসায় বিপ্লব আনবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ মারসিলিও মারকাচি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মত মানুষের দান করা হাড়গোড়ও সহজে পাওয়া যায়না৷ এসবের জন্য বিশেষ ব্যাংকের প্রয়োজন৷ এছাড়া এগুলোকে হতে হয় নিশ্ছিদ্র জীবাণুমুক্ত৷ ভবিষ্যতে কাঠের তৈরি হাড়ের বিকল্প এই সমস্যার সমাধান বয়ে আনতে পারে৷''
ইটালির গবেষক আনা তাম্পিয়েরি ও তাঁর সহকর্মীরা হাড়ের এই নতুন ধরনের বিকল্প বের করেছেন৷ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাঠের সঙ্গে হাড়ের অনেক মিল রয়েছে৷ তাই হাড়ের বিকল্প বানাতে কাঠের কথাই ভেবেছেন গবেষকরা৷ কাঠকে অনেকক্ষণ ধরে পোড়াতে থাকলে অবিশিষ্ট থাকে কাঠকয়লা৷ এরপর রাসায়নিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে একধরনের পদার্থ পাওয়া যায়, যা দাঁত ও হাড়গোড়কে শক্ত করার কাজে লাগে৷ ধাতু ও সেরামিকের তুলনায় এটি অনেকটা ফাঁপা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র যুক্ত৷ আসল হাড়ের মত বলে এই কাঠ থেকে তৈরি কৃত্রিম হাড় সহজেই শরীরের হাড়ের কোষের সাথে খাপ খেয়ে যায়৷ বিজ্ঞানী আনা তাম্পিয়েরি বলেন, এই পদার্থটির সুবিধা হল, প্রাণীর হাড়ের কাঠামোর সঙ্গে এটির খুব মিল রয়েছে, এর ফলে তা হাড়ের চারপাশে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে৷ ফলে জৈব কাঠামোটাও ভাল হয়৷''
আনা তাম্পিয়ারি আরো জানান, ‘‘আমরা হাড়ের কিছু অংশের বিকল্প হিসেবে সাধারণ কাঠের টুকরোগুলোকে এক ধরনের অজৈব মিশ্রণে পরিণত করছি৷'' এই প্রক্রিয়ার প্রথমে লাল ওক, রাটান বা বেত জাতীয় কাঠকে গরম ক'রে একেবারে কয়লা বানিয়ে ফেলা হয়৷ তারপর সেই কয়লার ওপর ক্যালসিয়াম ছেটানো, ক্যালসিয়াম কারবাইড৷ এর পর আরো কিছু রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটি পরিণত হয় কার্বন মিশ্রিত হাইড্রক্সিল্যাপাটাইটে৷ এই বস্তুটিই কৃত্রিম হাড় হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ৷ এক খন্ড কৃত্রিম হাড়ের দাম পড়ে ৮৫০ আমেরিকান ডলার৷ গবেষকরা বলেন, যে কোন আকারের কৃত্রিম হাড় প্রস্তুত করা সম্ভব৷
কাঠ থেকে তৈরি বিকল্প হাড়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম৷ শরীরে বিকর্ষণের ভাবও তেমন দেখা যায় না৷ ভেড়ার শরীরে এই ধরনের কৃত্রিম হাড় সফলতার সঙ্গে বসানো হয়েছে৷ মানুষের শরীরে তা প্রতিস্থাপন করতে আরো কয়েক বছর গড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী