আত্মনির্ভরশীল হতে চায় ইইউ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
গত প্রায় দুই বছর ধরে একাধিক সংকট থেকে শিক্ষা নিতে চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ করোনা সংকট থেকে শুরু করে আফগানিস্তানে সেনা অভিযানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রজোট হিসেবে অন্যের উপর নির্ভরতা যে মোক্ষম সময়ে কতটা অসহায় করে তুলতে পারে, ব্রাসেলস হাড়ে হাড়ে তা টের পেয়েছে৷ তাই সে সব দুর্বলতা কাটিয়ে আত্মনির্ভর হবার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় ইইউ৷ ব্রিটেনের প্রস্থানের পর এমন সব মৌলিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আগের মতো বাধার আশঙ্কাও কমে গেছে৷
ইইউ কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন তার দ্বিতীয় ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' ভাষণে এমন সংকল্পের রূপরেখা তুলে ধরলেন৷ সম্প্রতি আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর দ্রুত পতন ও তড়িঘড়ি করে মার্কিন সেনাবাহিনীর পাততাড়ি গোটানোর সিদ্ধান্তের ফলে ইউরোপের একাধিক দেশের সৈন্যরা অসহায় হয়ে পড়েছিল৷ তালেবানের কাবুল দখলের পর নিজস্ব নাগরিক ও আফগান কর্মীদের উদ্ধার করতে গিয়ে পদে পদে বাধার মুখে পড়েছিল ইউরোপীয়রা৷ সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে অ্যামেরিকার ‘একলা চলো রে' নীতি তাদের অসহায় করে তুলেছিল৷ সেই বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিজস্ব প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর পথে এগোতে চায়৷ ২০২২ সালের প্রথমার্ধে ফ্রান্সের সভাপতিত্বে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কাঠামোর লক্ষ্যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে ফন ডেয়ার লাইয়েন ঘোষণা করেন৷ ইউরোপে উৎপাদিত প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উপর বিক্রয় কর তুলে নেবার প্রস্তাব নিয়েও সেখানে আলোচনা হবে৷
করোনা সংকটের সময় মাস্ক থেকে শুরু করে টিকার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খেতে হয়েছে ইউরোপের দেশগুলিকে৷ প্রাথমিক বিলম্ব ও অব্যবস্থা সত্ত্বেও রাষ্ট্রজোট হিসেবে নাগরিকদের জন্য করোনা টিকার ব্যবস্থা করে শেষ পর্যন্ত বিপুল সুবিধা পেয়েছে ইইউ৷ বাকি শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় ইউরোপ আজ টিকা কর্মসূচির ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে৷ সম্মিলিত উদ্যোগের কারণে অর্থনীতি আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে৷ ইউরোপে মাস্ক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও টিকা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো সত্ত্বেও শিল্পজগতের ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে চিপের অভাব৷ ইইউ স্তরে ‘সেমিকন্ডাক্টর আইন' অনুমোদন করে দ্রুত নির্ভরতা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ শিল্প, প্রতিরক্ষাসহ একাধিক ক্ষেত্রে এমন ডিজিটাল আত্মনির্ভরতার প্রয়োজনীয়তা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন৷ উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আইন করে সেই পথে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চীনের আধিপত্যের মোকাবিলা করতেও ইইউ কার্যকর ভূমিকা নিতে চাইছে৷ কমিশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফন ডেয়ার লাইয়েন তাঁর ভাষণে বলেন, সড়ক নির্মাণের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ইইউ যথেষ্ট সক্রিয় থাকলেও চীনের তামার খনি ও চীন নিয়ন্ত্রিত বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে নিখুঁত সড়ক তৈরির কোনো অর্থ হয় না৷ তাই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ‘গ্লোবাল গেটওয়ে' কৌশলগত অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায় ইইউ৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)