প্রতিবাদ-মুখর কলকাতায় বিশাল অভিনব মানববন্ধন
আরজি করে নিহত চিকিৎসকের প্রতি ন্যায়ের দাবিতে কলকাতায় বিশাল মানববন্ধন হলো। ইস্টার্ন বাইপাসে বিক্ষোভ হাজারো মানুষের।
বেলেঘাটা থেকে পাটুলি
বেলেঘাটা থেকে পাটুলির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসে এই পুরো জায়গাটা জুড়ে বিক্ষোভ হলো। তবে এই বিক্ষোভ হলো রাস্তার একপাশে। কোনোরকম বাধা সৃষ্টি না করে।
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা
মূলত বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদল যখন লালবাজারে পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করছেন, তখন বেসরকারি চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা ন্যায়ের দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন।
সঙ্গে সাধারণ মানুষ
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষকেও এই বিক্ষোভে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাতে সাড়া দিয়ে দলে দলে মানুষ যোগ দিয়েছেন। তারা আওয়াজ তুলেছেন, 'জাস্টিস ফর আরজি কর' বা 'আরজি কর নিয়ে ন্যায় চাই'।
গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন নয়
কলকাতা শহরে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত রাস্তা। বিক্ষোভের ফলে তাতে গাড়ি চলাচলে যাতে কোনো বাধা না হয়, সেদিকে নজর রাখা হয়েছিল। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। তারা সমানে ন্যায়ের দাবিতে আওয়াজ তুলেছেন।
ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবি
এই বিক্ষোভে যোগ দেয়া একাধিক মানুষ জানিয়েছেন, তারা ব্যবস্থা পরিবর্তন চান। তারা চান, হাসপাতালে বা অন্য কোথাও যেন এরকম ধর্ষণ ও হত্যা না হয়। কোনো অপরাধ হলে তার প্রমাণ লোপের চেষ্টা না হয়। তদন্তে যেন দেরি না হয়। পরিস্থিতি সীমার বাইরে চলে গেছে বলে তারা রাস্তায় নেমেছেন।
অরাজনৈতিক বিক্ষোভ
আরজি কর নিয়ে কলকাতায় যে বড় বিক্ষোভ হচ্ছে, যেখানে সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছেন, সেগুলি অরাজনৈতিক বিক্ষোভ। কোনো রাজনৈতিক দলকে তাদের পতাকা, তাদের স্লোগান, তাদের কর্মসূচি নিয়ে এখানে অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না। বরং আয়োজকরা সবিনয়ে রাজনীতিকদের জানাচ্ছেন, তাদের এই সব বিক্ষোভে কোনো প্রয়োজন নেই।
সাধারণ মানুষের যোগদান
যে মানুষরা এতদিন বাড়ির নিরাপদ ঘেরাটোপে থাকতেন, রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর আগে অনেকবার ভাবতেন, তারা নেমে আসছেন এই বিক্ষোভে। এরকম কয়েকজন জানিয়েছেন, তারা মনে করছেন, যথেষ্ট হয়েছে। এবার প্রতিবাদ করতেই হবে। কারণ, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
সমবেত প্রতিবাদ
বাইপাসের এই প্রতিবাদ ছিল বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ। তাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এই বিক্ষোভে তারা সকলেই এক। সবচেয়ে বড় কথা, যুবদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে সমানতালে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বয়স্করা। তারা যে এই অনাচার মানবেন না সেই কথাটাই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন।
আলোয় আলোয়
অন্ধকার হওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে দিলেন। এও এক প্রতিবাদের ভাষা। অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাওয়ার কথা বলছেন তারা। সাধারণ মানুষ শৃঙ্খলিতভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রাজনীতিকদের দূরে রেখে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, গর্জে উঠছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, যেখানে মেয়েরা রাতদখল করছেন, যেখানে তারকারা মিশে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে, এমন প্রতিবাদ সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি।