প্রণোদনার অভাবে পিছিয়ে বিজ্ঞান গবেষণা
২১ আগস্ট ২০১৭আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন বোসরা নিজ গুণে জগদ্বিখ্যাত৷ কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদেরও আছে অভাবনীয় সাফল্য৷ ২০১২ সালে হিগস কণা আবিষ্কারের প্রবক্তাদের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়৷ ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ' বা সার্নের বিজ্ঞানীরা গড পার্টিকল বলে পরিচিত হিগস কণার সন্ধান পান৷ আর এই আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. লস্কর মোহাম্মদ কাশিফ৷
ড. কাশিফ বাংলাদেশে লেখাপড়া শেষে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান৷ পিএইচডি করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ পিএইচডির প্রায় অর্ধেকটা সময় তাঁকে কাটাতে হয়েছে সার্নে৷ ডক্টরেট শেষে এখন তিনি সেখানেই কাজ করছেন৷
২০১৬ সালে যাতায়াত ব্যবস্থা বিষয়ক গবেষণাকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ইয়ং রিসার্চার অফ দ্য ইয়ার', অর্থাৎ বর্ষসেরা তরুণ বিজ্ঞানীর পুরস্কার দেয়া হয় ক্যানাডার ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট বাংলাদেশি তরুণ ড. মনির মনিরুজ্জামানকে৷ ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফোরাম বা আইটিএফ প্রতিবছর এই পুরস্কার দেয়৷
২০১৩ সালে সেনেগালের একটি প্রযুক্তি মেলায় বাংলাদেশি এক বিজ্ঞানীরএকটি আবিষ্কার দেখে মুগ্ধ হয়েছিলে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ আর যা দেখে তিনি মুগ্ধ হন তা হলো ধান ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া ছড়ানো সহজে বহনযোগ্য এবং কম দামের এপ্লিকেটর৷ এটার আবিষ্কারক ‘ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার' বা আইএফডিসি-র বাংলাদেশ কার্যালয়ে কর্মরত ড. ওহাব৷
এছাড়া ২০১০ সালে কলেরার কারণ আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. শাহ এম ফারুকের নাম৷ তখন আইসিডিডিআরবির মলেকুলার জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান তিনি৷ তিনি এবং তাঁর গবেষক দল দেখিয়েছেন, এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে কলেরা হয়৷ এ ব্যাকটেরিয়াগুলোকে আগে নিরাপদ মনে করা হতো৷
বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণার প্রধান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিসিএসআইআর৷ এর বাইরেও সরকারি, বেসরকারি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তি পর্যায়েও আছে গবেষণা৷ বিজ্ঞানের পাশাপাশি আছে সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানও৷ এইসব প্রতিষ্ঠানে অনেক বিজ্ঞানী কাজ করলেও উল্লেখযোগ্য গবেষণা হাতে গোণা৷
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, গবেষণার জন্য যে উদ্যোগ এবং বরাদ্দ প্রয়োজন, বাংলাদেশে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই৷ গুরুত্বপূর্ণ এসব আবিষ্কার দেশের ও দশের কাজে না লাগার এটাই প্রধান কারণ বলেও মনে করেন তাঁরা৷
বিজ্ঞান গবেষণায় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও বরাদ্দ আশাব্যঞ্জক নয়৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিজ্ঞান ও গবেষণা খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৬৬৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা৷ হিসাবে এটি মোট বাজেটের মাত্র ২ শতাংশ৷ তবে আগের বছর এটি ছিল আরও কম, মাত্র সাড়ে আট কোটি টাকা৷
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন এবং পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আলি আসগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমস্যাটা হলো এখানে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রয়োগ নেই৷ ফলে বড় ধরনের গবেষণাও হয় না৷ একটি আবিষ্কারের পর তা যদি কাজে না লাগে বা লাগানো না যায় তাহলে বিজ্ঞানীরা হতাশ হয়ে পড়েন৷ আর আবিষ্কারের সঙ্গে আর্থিক প্রাপ্তিও জড়িত৷ ফলে বাংলাদেশের মেধাবীরা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন৷ তারা বিদেশে গিয়েবিজ্ঞান গবেষণায় সাফল্য দেখাচ্ছেন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণার গৌরবময় ঐতিহ্য আছে৷ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথম রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন৷ তাঁকে যে নোবেল পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল, এখন মার্কিন বিজ্ঞানীরারাও তা স্বীকার করছেন৷ সত্যেন বোস তাঁর আবিষ্কার করা বোস কণার জন্য বিশ্বখ্যাত৷ তাঁর নাম আইস্টাইনের সঙ্গে উচ্চারিত হয়৷''
ড. আলি আসগরের মতে, ‘‘বাংলাদেশের গবেষক এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং গাবেষণাপত্র এখনো আলোচিত৷ তরুণরা ভালো করছেন৷ কিন্তু সমস্যা হলো সেটা সংখ্যায় কম এবং হাতে গোণা৷ আর এর জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ৷ সেটা শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, বেসরকারি পর্যায়েও দরকার৷ বিশ্বে অনেক বড় আবিষ্কারের বিনিয়োগকারী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান৷''
গবেষণা ও আবিষ্কারে অনুপ্রেরণা থাকতে হয়৷ উৎসাহ দিতে হয়, বছরের পর বছর অর্থ ঢালতে হয়৷ বাংলাদেশে এটার বড় অভাব বলে মনে করছেন ড. আলি আসগর৷
আপনার এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷