প্রজাপতির পাখার কারিগরি
৮ জুন ২০১৬প্রকৃতি আজও সেরা কারিগর৷ বড়বড় পোকামাকড়ের শরীর, শিং কিংবা শক্তপোক্ত পাখনা তৈরি করার ক্ষমতা একমাত্র প্রকৃতিরই আছে৷
কার্লসরুহের ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোকামাকড়ের পাখনার রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চলেছে, যদি তা থেকে বাড়ি তৈরির কাজে কোনো নতুন প্রেরণা পাওয়া যায়৷ এক্স-রে মাইক্রোটোমোগ্রাফি নামের একটি নতুন ত্রিমাত্রিক পদ্ধতিতে ছবি তোলা হচ্ছে৷ গোটা হল জোড়া একটি পার্টিকল অ্যাক্সিলারেটর এক্স-রে রশ্মিটি সৃষ্টি করে৷
কার্লসরুহ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পদার্থবিদ টমি দোস সান্তস রোলো জানালেন, ‘‘এটা একটা সিনক্রোটোন রেডিয়েশন, যাতে চুম্বকের মাধ্যমে ইলেকট্রনগুলো একত্রিত করে একটি জোরালো এক্স-রে সৃষ্টি হয়৷ তা দিয়ে আমরা উচ্চ স্পেসিয়াল আর টেম্পোরাল রেজোলিউশনের সব ছবি তৈরি করি৷''
এই এক্স-রে মানুষ বা জীবের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর; কাজেই যে নমুনার ছবি তোলা হচ্ছে, একটি রোবোটের মাধ্যমে সেটিকে এক্স-রে'র বিমের মধ্যে ফেলা হয়, তৈরি হয় একটি এক্স-রে ভিডিও৷ বিজ্ঞানীরা পাশের কন্ট্রোল রুম থেকে প্রক্রিয়াটির উপর নজর রাখেন৷ সংগৃহীত তথ্য থেকে গবেষকরা একটি মডেল তৈরি করেন; কম্পিউটারে একটি ত্রিমাত্রিক হাই রেজোলিউশন ছবি ফুটে ওঠে, যা থেকে পোকামাকড়ের পাখার মাইক্রোমিটারে মাপা যায়, এমন সব ছোট খুঁটিনাটি দেখা যায়৷
টমি দোস সান্তোস রোলো বোঝালেন, ‘‘পাখাটা ফোঁপরা, সেইজন্যে খুব হালকা৷ স্থিতি আসে পাখার ওপর আর নীচের দিকটা বহু ‘স্ট্রাট' বা গোঁজ দিয়ে জোড়া বলে৷ এছাড়া পাখাটা ব্যাঁকানো৷ তার ফলে আরো বেশি স্থিতি আসে৷ ঠিক কাগজের মতো: যতক্ষণ ফ্ল্যাট থাকবে, ততক্ষণ সবদিকে মোড়া যায়; একবার দুমড়ে-মুচড়ে ফেললে, তা আর করা সম্ভব নয়৷''
পাখার ওপর আর নীচের দিকের মধ্যে গোঁজগুলোর বিশেষত্ব হলো, সেগুলো এক গোছা ফাইবার দিয়ে তৈরি, যেগুলো একবার ওপর, একবার নীচ দিয়ে যায়, ফলে পাখার স্থিতিশীলতা বৃ্দ্ধি পায়৷ স্টুটগার্টের কম্পিউটার ভিত্তিক ডিজাইন প্রতিষ্ঠানের স্থপতিরা পোকামাকড়ের পাখার এই নির্মাণপদ্ধতি খুঁটিয়ে দেখেছেন ও একটি টেকনিক্যাল প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন, যা জীববিজ্ঞানের এই বুনিয়াদি নীতির নকল করতে পারে৷ পোকামাকড়ের পাখা তৈরি হয় চিটিন দিয়ে; স্থপতিদের মডেলটি তৈরি হয়েছে কাচ আর কার্বনের ফাইবার দিয়ে৷ তবে যেমন পাখা, তেমন মডেল, দু'টোই যেমন হালকা, তেমন শক্তপোক্ত৷
স্টুটগার্টের এক কম্পিউটার ভিত্তিক ডিজাইন প্রতিষ্ঠানের কর্মী মরিৎস ড্যোর্স্টেলমান জানালেন, ‘‘আমরা পোকামাকড়দের হালকা কাঠামোর নীতিটা নির্মাণপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে চাই৷ এখানে দু'টি জিনিসে আমাদের আগ্রহ: প্রথমত, পাখারওপর থেকে নীচে একটানা ফাইবারের বাঁধন; দ্বিতীয়ত, জ্যামিতিকভাবে ব্যাঁকানো অংশটা, যা তার জ্যামিতির কারণে গোড়া থেকেই স্থিতিশীল৷''
একটি রোবোট স্বয়ংক্রিয়ভাবে অংশগুলো তৈরি করে৷ অংশটিকে পরে যেসব টান সহ্য করতে হবে, ঠিক সেইভাবে ফাইবারগুলো চলে গেছে৷ অংশটি আকৃতি পাচ্ছে ফাইবারগুলো যেভাবে বোনা হয়েছে, তা থেকে৷ ফাইবারের গোছাগুলোকে প্রথমে রজনে ভিজিয়ে নিয়ে পরে টান-টান করে বোনা হয়৷
এই নির্মাণপদ্ধতিতে মালমশলা কম লাগে, কেননা গোটা কাঠামোর ওপর যেখানে যেখানে টান অথবা চাপ সৃষ্টি হয়, ফাইবারগুলো ঠিক সেখান দিয়েই গেছে৷ ফলে গোটা অংশটার ওজনও কম হয়৷
মরিৎস ড্যোর্স্টেলমান বললেন, ‘‘বিভিন্ন ফাইবারের গোছা কিভাবে পরস্পরের ওপর দিয়ে চলে গেছে, তা এখানে খুব ভালোভাবে দেখা যায়৷ এগুলো বাস্তবে সুতোর মতো সরল রেখা হলেও, পরস্পরের চাপে বেঁকে গেছে, যা এখানে দেখা যাচ্ছে৷ এখানে যা শুরু হয়েছে, পরে তা থেকে ফাইবারগুলো আরো বেশি করে বেঁকে এই জ্যামিতিক আকার নিয়েছে৷''
এভাবে একটি কর্মক্ষম অথচ হালকা কাঠামো সৃষ্টি হয়েছে, যা একটা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের নির্মাণপদ্ধতির সূচনা ঘটাতে পারে৷