1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় কেঁচোর অবদান কম নয়

৪ জানুয়ারি ২০২৩

আধুনিক যন্ত্র ও রাসায়নিক নির্ভর কৃষিপদ্ধতি আখেরে মাটির অনেক ক্ষতি করে ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে৷ অথচ কেঁচোও মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে৷ বিশেষজ্ঞরা তাই চাষিদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর পরামর্শ দিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/4Lixu
Gemeiner Regenwurm,
ছবি: W. Layer/blickwinkel/picture alliance

বার্লিনের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বিশেষ পাঠক্রমে শিশুরা এমন এক প্রাণী সম্পর্কে জানতে পারছে, যা সাধারণত লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও মানুষের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ হড়হড়ে ও কোঁচকানো আর্থওয়ার্ম বা কেঁচোর কাছে যেতে মানুষ মোটেই পছন্দ করে না৷ কিন্তু শিশুরা জানে, ভালো করে এই প্রাণী চেনা কতটা জরুরি৷

অমেরুদণ্ডী প্রাণী হলেও আর্থওয়ার্ম অত্যন্ত সক্রিয়৷ আমাদের মাটির নীচের অনেক অদৃশ্য প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এই প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ ইউরোপের মতো যে সব অঞ্চলে কেঁচো বাস করে, সেখানকার মাটি ও উদ্ভিদজগতের জন্য এই প্রাণীর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

ক্লাস টিচার পাউলা রিসার পড়ুয়াদের পুষ্টি চক্র সংক্রান্ত এক ওয়ার্কশিট দিয়েছেন৷ তাতে দেখানো হচ্ছে, আর্থওয়ার্ম কীভাবে মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী খেয়ে নিয়ে সেগুলি মলে রূপান্তরিত করে৷ অত্যন্ত পুষ্টিকর সেই মল উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য জরুরি৷ শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্র এই প্রাণীর অবদানের কদর করবে বলে রিসার আশা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শিশুদের বৃহত্তর চিত্র বোঝা উচিত৷ জানা উচিত, যে সবকিছু পরস্পরের সাথে সংযুক্ত৷ আমি যদি ভালো আচরণ করি, সব প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাই, তখন অবশ্ই আমি আরও ভালো ও বাসযোগ্য পরিবেশ পাবো৷''

প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব কেঁচো

জার্মানির হালে শহরের কাছে এক গবেষণাকেন্দ্রে বিজ্ঞানীরা বিশাল আকারে আধুনিক কৃষি প্রক্রিয়ার কারণে ক্ষতির মাত্রা বোঝার চেষ্টা করছেন৷ বিস্তৃত এলাকার উপর পরীক্ষা চালিয়ে তাঁরা দেখছেন, জমি অন্যভাবে ব্যবহার করলে মাটির মানের কত পরিবর্তন ঘটে৷ জলবায়ুর বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের আরও উষ্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে৷ ইকোলজিস্ট হিসেবে মারি স্যুনেমান বলেন, ‘‘এমন শস্যের জমি আর্থওয়ার্মের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করছে৷ কেঁচো মাটিতে নিয়মিত সার দেওয়া পছন্দ করে না, কারণ তার ফলে মাটির পিএইচ মাত্রা কমে যায় এবং মাটিতে অম্লের মাত্রা বেড়ে যায়৷ এই প্রাণীর ত্বক খুবই নাজুক৷ কেঁচো একটি মাত্র উদ্ভিদ খায়৷ ফলে একটি স্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়৷''

মার্টিন শেডলার প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক সমন্বয়ক৷ তাঁর মতে, শুকনা বছরগুলির পর ঘাসজমির উদ্ভিদ জগত চাষের খেতের তুলনায় অনেক ভালোভাবে সামলে উঠেছে৷

শেডলার প্রায়ই গবেষণার ফলাফল অংশীদারদের সামনে তুলে ধরেন৷ তাঁর মতে, চাষিরা মাটিকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার বিষয়ে অনেক বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন৷ তিনি পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘ব্যবস্থাপনা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনুন৷ অর্থাৎ মাটির উপর যান্ত্রিক হস্তক্ষেপ এবং ধাতব সারের মতো রাসায়নিক ব্যাঘাত ঘটিয়ে মাটির প্রাকৃতিক পুষ্টিচক্র নষ্ট করবেন না৷ তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করলেও মাটির নিজস্ব জৈব জগতের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করা উচিত নয়৷''

ইকোলজিস্ট হিসেবে মারি স্যুনেমান মনে করেন, ‘‘এমন খেতে বীজ বপন করা উচিত, যেখানে জীববৈচিত্র্য বেশি৷ অনেক ধরনের ঘাস, লতাগুল্ম, সবজি থাকলে ভালো৷''

স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঠিক সেই নীতি হাতেনাতে প্রয়োগ করছে৷ মাটির দেখাশোনার অর্থ কেঁচো ও অন্যান্য জীবের যত্ন নেওয়া৷ সেগুলিই বীজ বেড়ে উঠতে সাহায্য করে৷

সোফি কির্বি/এসবি