আদিবাসীদের বেঁচে থাকার লড়াই
২ নভেম্বর ২০১৫প্যারাগুয়ের রাজধানী আসুনসিয়ন শহরের উপকণ্ঠে পথের ধারে বেঁচে থাকার লড়াই৷ একবার এখানে এসে পড়লে আর কোনো উপায় থাকে না৷ দেশের অভ্যন্তরে বিতাড়িত আদিবাসীদের আজ এই দশা৷ তাদেরই একজন বললেন, ‘‘আমাদের জমি নেই, কোথাও যাবার জায়গা নেই৷ উপায় থাকলে অনেক আগেই চলে যেতাম৷''
কৃষিবিজ্ঞানী মিগেল লোবেরা আদিবাসীদের সমস্যা বোঝেন৷ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রীয় পরিবেশ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের প্রধান ছিলেন৷ আজ তিনি ‘গ্লোবাল ফরেস্ট কোয়ালিশন' নামের এক এনজিও-র হয়ে কাজ করেন৷ মিগেল বলেন, ‘‘এটা একটা শরণার্থী শিবির৷ মানুষ তাদের ভিটেমাটি হারিয়েছে, জঙ্গল হারিয়েছে৷ তাই এখন তাদের এমন দুর্দশা৷ আগে কখনো আদিবাসীদের অপুষ্টিতে ভুগতে দেখা যেত না৷ তার সব প্রয়োজন নিজেরাই মেটাতে পারতো৷ তাদের খাদ্য ছিল, ওষুধ ছিল – সবকিছু জঙ্গল থেকে আসতো৷ জঙ্গল হারিয়ে তারা সর্বস্ব হারিয়েছে৷''
গত ৫০ বছরে প্যারাগুয়ের দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে৷ সেই জায়গায় এখন বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির বিশাল সয়াবিন, ভুট্টা ও কার্পাসের খেত শোভা পাচ্ছে৷''
প্রায় ৪০ শতাংশ চাষি দেশের পূর্বাঞ্চলে মিংগা পোরা অঞ্চল ছেড়ে চলে গেছেন৷ আরেবালোস পরিবার অবশ্য এখনো নিজস্ব মাটি আঁকড়ে রয়েছে৷ স্থানীয় বাসিন্দা হেরোনিমো আরেবালোস বলেন, ‘‘আমরা বড় আকারের কৃষি উৎপাদনের বিরোধী নয়৷ কিন্তু আমরা আমাদের জমিতে বিষের প্রয়োগ এবং এখান থেকে মানুষ চলে যাওয়ার বিরোধী৷ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি৷
পরিবারগুলি তাই নিজস্ব উদ্যোগে পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে৷ হেরোনিমো বলেন, ‘‘যেমন এখানে জল আসছে এক প্রান্ত থেকে, অন্যদিকে অপর প্রান্ত থেকে৷ এই দুটি উৎস জুড়ে শক্তির সমন্বয় করে পাম্পের মাধ্যমে আমরা ১,৫০০ লিটার ট্যাংকে জল ধরছি৷ ফলে কোনো ব্যয় ছাড়াই ট্যাংক ভরে যাচ্ছে৷ এভাবে ১৭টি পরিবারের উপকার হচ্ছে৷ তারা বাগানে জল দিতে পারছে, রান্নাবান্না করতে পারছে৷ এটা ভালো জল, এতে কোনো দূষণ নেই৷''
কৃষিকাজের ফলে প্যারাগুয়ের অনেক নদী বিষাক্ত হয়ে পড়েছে৷ গাছপালা সংরক্ষণ, চাষবাস ইত্যাদি নানা কাজে রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়৷ অথচ মাটির অনেক নীচে ‘আকিফেরো গুয়ারানি' নামের বিশাল মিষ্টি জলের আধার রয়েছে৷ দেশের জীববৈচিত্র ও বাসিন্দাদের জন্য পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷