পোল্যান্ডের গ্রামে পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব
২৩ অক্টোবর ২০২৪পোল্যান্ডের উত্তর পশ্চিমে সিয়াদলো দলনে গ্রামের মধ্য দিয়ে ওডার নদী বয়ে যাচ্ছে৷ ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সেখানে বড় আকারে মাছের মৃত্যুর ঘটনার দুই বছর পরেও অনিশ্চয়তা কাটেনি৷ কারণ এর ফলে শুধু পরিবেশই ধাক্কা খায়নি, পর্যটন ক্ষেত্রেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে৷
মার্সিন ভেরবিনস্কি কায়াক ভাড়া দেন৷ বিপর্যয়ের কয়েক মাস আগে তিনি ছোট আকারে সেই ব্যবসা শুরু করেছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সে সময়ে অনেক মানুষ আসতেন৷ আমার কাছে যথেষ্ট কায়াকই ছিলনা৷ প্রায় সারাদিন আমার কায়াকগুলি পানিতেই থাকতো৷ মানুষ লাইন দিয়ে কায়াক ভাড়া করতো, তারপর সাঁতার কাটতো৷''
সিয়াদলো দোলনে গ্রামে বিশাল সংখ্যায় মরা মাছ ভেসে ওঠার পর পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেল৷ তখন থেকে পর্যটকদের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেল৷ যেমন চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ রোববার মার্সিন একটি কায়াকও ভাড়া দিতে পারেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘টেলিভিশনে কোনো ঘটনার রিপোর্ট দেখলেই মানুষ এখানে আসা বন্ধ করে দেয়৷ নদীটি আবার দূষিত হলো কিনা, সবার মনে সেই প্রশ্ন জাগে৷ বিশেষ করে কেউ যখন এর কারণ বলেনি, তাই কোনো রাসায়নিক দায়ী কিনা জানা নেই৷ আমার মতে, লবণাক্ত পানি দায়ী৷''
সিয়াদলো দোলনে গ্রাম স্টেচিন শহরের প্রায় সাত কিলোমিটার দক্ষিণে এবং জার্মানির সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ প্রকৃতিপ্রেমী, ওয়াটার স্পোর্টসে উৎসাহী মানুষ এবং সাইক্লিং ও মাছ ধরার অনুরাগীদের জন্য জায়গাটি আদর্শ গন্তব্য ছিল৷
নর্বার্ট মোরাভস্কি তাঁর বোনের সঙ্গে সেই গ্রামে এসেছেন৷ দুই বছর আগের ঘটনা তাঁর স্পষ্ট মনে আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘নদীতে অঘটনের কারণে মানুষের মনে গভীর দুঃখ টের পাচ্ছিলাম৷ তখনো স্পষ্ট ছিলো না, কেন মাছ মারা যাচ্ছে৷ আমরা এই নদীর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ বোধ করি৷''
বিজ্ঞানীদের অনুমান অনুযায়ী ২০২২ সালের গ্রীষ্মে ওডার নদীতে ৩০০ টনেরও বেশি মাছ মরে গিয়েছিল৷ এই ঘটনার পর যে সব পর্যটক ফিরে এসেছেন, তাঁরা এখনো পানিতে নামতে ভয় পাচ্ছেন৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক বিষয় এই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল৷ লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় টক্সিক অ্যালজির বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল৷ উচ্চ তাপমাত্রা, পানির নীচু স্তর ও উচ্চতর পুষ্টির ঘনত্বও অন্যতম কারণ ছিল৷
ডিডাব্লিউ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ শহরে ড. আলিসিয়া পাভেলেচ-ওলেসিনস্কা় নামের এক হাইড্রোবায়োলজিস্টের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিল৷ তিনি মনে করেন, ‘‘এবার আর দশ লাখ মরা মাছ দেখতে পাবো না, কারণ সেখানে তাদের আর অস্তিত্বই নেই৷ দুই বছর আগে গোল্ডেন অ্যালজি প্রায় ৫০ শতাংশ মাছ মেরে ফেলেছিল৷ অর্ধেকেরও বেশি টিকে আছে৷ গোল্ডেন অ্যালজির বাড়বাড়ন্ত হলে সেগুলিও মরে যাবে৷''
ড. আলিসিয়া পাভেলেচ-ওলেসিনস্কা়র মতে, ওডার নদীর অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল হলেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘পোল্যান্ডের সব নদীতেই মিষ্টি পানি রয়েছে৷ খনি ও শিল্পখাতের কার্যকলাপের কারণে ওডার নদীতে লবণের মাত্রা হুবহু না হলেও প্রায় বাল্টিক সাগরের মতো বেড়ে গিয়েছিল৷ ফলে গোল্ডেন অ্যালজির বাড়বাড়ন্তের আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল৷ তার সঙ্গে ক্ষেতে ব্যবহৃত সার, উচ্চ তাপমাত্রা ও পানির নীচু স্তরের মতো কারণ যোগ করলে বিপর্যয়ের সব পূর্বশর্ত পূরণ হয়৷''
পোল্যান্ডের নতুন সরকার টক্সিকাল অ্যালজির মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রণালী গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে৷ খনির পানির ডিস্যালিনেশন ও অন্যান্য পদক্ষেপও নিতে চায় সরকার৷
ততদিন পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ পর্যটকদের ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন৷ সেই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষ ফিরে আসবে, এমনটাই তারা আশা করছেন৷
আদ্রিয়ানা বোরোভিৎস/এসবি