1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুরসভার নিয়োগেও সিবিআই তদন্ত

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ এপ্রিল ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করবে সিবিআই। কলকাতা হাইকোর্ট তাদের হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছে।

https://p.dw.com/p/4QRDK
অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের ৮০-৯০টি পুরসভায় কর্মী নিয়োগের দুর্নীতি হয়েছে
অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের ৮০-৯০টি পুরসভায় কর্মী নিয়োগের দুর্নীতি হয়েছেছবি: Payel Samanta/DW

পুর নিয়োগে অনিয়ম

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেনেমে ইডি পাকড়াও করে হুগলির নির্মাণ ব্যবসায়ী অয়ন শীলকে। তাকে জেরা করে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে অনিয়মের তথ্য মিলেছে বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের ৮০-৯০টি পুরসভায় কর্মী নিয়োগের দুর্নীতিতে যুক্ত অয়ন।

কলকাতা হাইকোর্টে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির শুনানিতেঅয়নের পুর-যোগের তথ্য পেশ করে ইডি। তারা মুখবন্ধ খামে আদালতে রিপোর্টও দিয়েছে। শুক্রবার পুরসভা সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। 

বিচারপতির নির্দেশ, "ইডির রিপোর্টের সূত্র ধরে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করতে পারে সিবিআই। তদন্ত করে সিবিআই একটা রিপোর্ট জমা দেবে। দুর্নীতির জাল অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে।''

সিবিআই আইনজীবী আদালতে জানান, তারা তদন্ত করতে প্রস্তুত। এই তদন্তে রাজ্য প্রশাসনকে সহযোগিতার নির্দেশ দেন বিচারপতি। তার বক্তব্য, ''তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। ডিজি এবং মুখ্য সচিবকে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে।''

নির্দিষ্ট কোনও পুরসভা নয়, সামগ্রিকভাবে রাজ্যব্যাপী পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে চলে গেল। ২৮ এপ্রিল পুর মামলার পরের শুনানি। সেদিন তদন্তকারীদের প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত।

 বিচারপতির পর্যবেক্ষণ

এই নির্দেশ দিতে গিয়ে রাজনীতিকদের সম্পর্কে ক্ষোভ শোনা গিয়েছে বিচারপতির মুখে। তার ভাষায়, ''সাধারণ মানুষ মাত্র ১০ হাজার টাকা আয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ১০ হাজার টাকা উপার্জনের জন্য খেটে মরছেন। আর এক-একজনের কাছে এত এত টাকা!"

 স্কুল ও পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজেন বিভিন্ন পুরসভার নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল। জেলায় জেলায় এজেন্টদের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগের জন্য টাকা নেয়া হত। বেআইনি ভাবে শুধু অয়ন ৩৫০ কোটি টাকা তুলেছেন বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর।

এই বিপুল টাকার লেনদেন নিয়ে বারবার বিস্ময় প্রকাশ করেছে আদালত। শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "অর্পিতা মুখোপাধ্যায়দের কাছে এত টাকা আসে কোথা থেকে? একাংশ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কোটি কোটি টাকা! এইসব নেতাদের ছুঁলেই কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে।"

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ, অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া টাকার সঙ্গে দুর্নীতির যোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

নজরে তৃণমূল বিধায়করা

এই মামলায় পার্থ ছাড়াও গ্রেপ্তার হন তৃণমূলের দুই বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য ও জীবনকৃষ্ণ সাহা। বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের মোবাইলে নজর তদন্তকারীদের। শনিবার কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির দুই শীর্ষ আধিকারিক কলকাতার নিজাম প্যালেসে আসেন মোবাইলের তথ্য উদ্ধারের জন্য।

বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের মোবাইলে নজর তদন্তকারীদের
বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের মোবাইলে নজর তদন্তকারীদেরছবি: Payel Samanta/DW

বিধায়ক মোবাইল দু'টি পুকুরের ফেলে দেয়ার পর তা উদ্ধার করা হয়। ফোনগুলি চালু করা গেলেও কিছু দেখা যাচ্ছে না বলে সূত্রের খবর। তাই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বিশেষ সরঞ্জাম নিয়ে উড়ে এসেছেন দিল্লি থেকে।

'শহরে শিক্ষিত মানুষের একাংশ দুর্নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট'

তৃণমূলের আর এক বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে তাপসের নদিয়ার বাড়িতে সাড়ে ১৪ ঘণ্টা ছিলেন তদন্তকারীরা। গতকাল সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে সিবিআই তল্লাশি চালায় একটি বিএড কলেজে, যার সভাপতি এই বিধায়ক।

নিজেকে 'চক্রান্তের শিকার' বলে দাবি করেছেন তাপস।  আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের এক স্থানীয় নেত্রীর দিকে। একাধিক টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, "এলাকায় দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ জানালেও রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।"

সবমিলিয়ে ঘরে-বাইরে শাসক দলের উপর চাপ বাড়ছে। এর রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে নারাজ পর্যবেক্ষক শুভময় মৈত্র। তিনি বলেন, "শহরের শিক্ষিত মানু্ষের একাংশ দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের উপর অসন্তুষ্ট। কিন্তু গ্রামের মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ, সেটা জানতে সমীক্ষা প্রয়োজন। শুধু সাগরদিঘির ফল দিয়ে গোটা রাজ্যের মুড আঁচ করা যাবে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ হলে সেটা বোঝা যেত।"