পানি সংকটের হুমকিতে জার্মানি
৮ আগস্ট ২০১৯এ বছরের জুলাই মাসের কথাই ধরা যাক৷ এ সময় দেশটির কয়েকটি রাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রীর উপরে উঠেছে৷ এ সময় দেশটির নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া কর্তৃপক্ষের তৈরি করা অ্যাপটিতে দেখা গেছে এ রাজ্যটিতে খাবার পানির যথেষ্ট মজুদ নেই৷একই ঘটনা ঘটেছে লোয়ার স্যাক্সনিতেও৷
বাড়ছে পানির চাহিদা
দেশটির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের পরিবেশবাদি সংগঠন লুটস নয়েবাউয়ার জানায়, জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রতিবছর ভূপৃষ্ঠের পানির স্তর এক দশমিক পাঁচ থেকে দুই সেন্টিমিটার করে নিচে নামছে৷ এতে বুঝা যায় যে, দেশটিতে ধীরে ধীরে খাবার পানির সংকট তৈরি হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথেষ্ট বৃষ্টি না হওয়ায় এ সংকট আরো বাড়ছে৷ তীব্র গরমের ফলে পানির চাহিদা বাড়ে৷ যেমন, গরম বাড়ার সাথে সাথে গাছপালায় পানি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে আবার গরমের কারণে মানুষেরও বেশি পানি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়৷ চলতি বছরের গরমের সময়ে নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে অনেকেই তাঁদের সুইমিং পুলের পানি বার বার পরিবর্তন করেছে৷ সুইমিং পুলে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের কারণে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করেছে কর্তৃপক্ষ৷
বাড়ছে কৃষিকাজে পানির ব্যবহার
কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া কৃষকেরা তাদের জমিজমায় পানি সরবরাহের জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে৷ জার্মানির পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএ-এর পানি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়র্গ রেচেনব্যার্গ বলেন, ‘‘পানির জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে৷ আর তাই আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে এ পানির সংকট মেটানো যায়৷'' গ্রীষ্মকালীন উষ্ণ তাপমাত্রা এবং কম বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকরা ভূগর্ভস্থের পানি ব্যবহার বাড়িয়েছে৷ কৃষিকাজে পানির সংকট বাড়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে লুটস নয়েবাউয়ার নামের সংগঠনটি জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের অনেক কৃষক কর্তৃপক্ষের কাছে ভুগর্ভের পানি ব্যবহারের অনুমতি চাইছে৷
বৃষ্টির পানি ব্যবহারের পরিকল্পনা
লোয়ার স্যাক্সনির লোহনে শহরের মেয়র টবিয়াস গের্ডেসমেয়ার বলেন, বিশুদ্ধ পানির অপব্যবহার রোধ করতে হবে৷ তিনি বলেন কৃষকরা ধীরে ধীরে ভৃগর্ভস্থ পানির ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে৷ এমনকি খামারিরাও পানির সংকট মোকাবেলায় ভূগর্ভের পানি ব্যবহার করার কথা ভাবছে৷ ‘‘এ সংকট মোকাবেলায় আমাদের উচিত নতুন কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করা যেন আমরা পানির সঠিক ব্যবহার করতে পারি৷'' গের্ডেসমেয়ার বলেন, তাঁরা বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখার লক্ষ্যে বড় আকৃতির বেসিন তৈরির পরিকল্পনা করছে৷
জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ওল্ডেনবুর্গ-ইস্ট ফ্রিসিয়ান ওয়াটার এসোশিয়েসন নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ লোয়ার স্যাক্সনি অঞ্চলে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দশ লাখ গ্রাহক রয়েছে যার অর্ধেকেরই বেশি হলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান৷ পানির চাহিদার বিষয়টি জানাতে গিয়ে তারা বলছে, গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানিতে গত ৭১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পানির ব্যবহার হয়েছে৷ তবে পানির সংকটের বিষয়টি এখনো জার্মানির অন্যতম সংকট নয়৷ পানি বিশেষজ্ঞ রেচেনব্যার্গ মনে করেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে আতঙ্কিত হতে হবে বা দ্রুত, শক্তাশালী পদক্ষেপ নিতে হবে তবে ‘‘সময়ের সাথে সাথে আমরা নতনু নতুন উদ্ভাবনী ব্যবস্থা আরোপ করবো যেন পানির সংকট গভীর না হয়৷''
কয়েকমাস আগে জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘পানির ভবিষ্যৎ' নামে বেশ কিছু আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়৷ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা এ আলোচনায় অংশ নেয় যেখানে পানির সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়৷
লিজি হিনেল /আরআর