1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

গরিবদের বাড়ি নিয়ে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৫ জানুয়ারি ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গে এবার গরিব মানুষের জন্য বাড়ি তৈরি করা নিয়েও দুর্নীতির অভিয়োগ। যাদের বাড়ি পাওয়ার কথা, তাদের নাম বাদ।

https://p.dw.com/p/4Ll4p
ছবি: Payel Samanta/DW

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে ভারত জুড়ে। কারা এই প্রকল্পে বাড়ি পাবেন, সেই তালিকায় বিস্তর গরমিল ও দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। যার ঘর নেই, তার নাম প্রকল্পের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। যার বাড়ি আছে, তার নাম রয়েছে তালিকায়, এমন উদাহরণ জেলায় জেলায় দেখা গিয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন অর্থাৎ পঞ্চায়েত ও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দপ্তরের মাধ্যমে তালিকা তৈরির কাজ হয়েছে। অভিযোগ, শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকা মানুষজন এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। প্রকৃত গৃহহীনরা বাদ পড়েছেন। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজেপি, বাম, কংগ্রেস।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মালদহ-মুর্শিদাবাদ থেকে পূর্ব মেদিনীপুর কিংবা নদিয়া, সর্বত্র বঞ্চিত মানুষেরা প্রতিবাদ করছেন। এই বিক্ষোভ, পথ অবরোধ কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকা ছাড়াই সংগঠিত হচ্ছে। এতে সমস্যায় পড়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস।

২০২২ সালের মার্চের পর আবাস যোজনায় বরাদ্দ টাকা রাজ্যকে পাঠানো বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র। এ নিয়ে দীর্ঘ চাপানউতোর চলে। দুই পক্ষের আলোচনা হয়। তার পর রাজ্য সরকার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করার কাজে নামে। তাতেই খুলে যায় প্যান্ডোরার বাক্স। দেখা যায়, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অবস্থাপন্ন গ্রামবাসীও ঢুকে পড়েছেন তালিকায়।

‘রাজনৈতিক নেতৃত্বসৎ নয় বলেই আজ এই পরিস্থিতি’

গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তালিকা সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট পোর্টালে আপলোড করার কথা ছিল। সেই তালিকায় ১৪ লক্ষ উপভোক্তার নাম কম পড়েছে। ২০২১ সালে ৫৪ লক্ষ মানুষ তালিকায় ছিলেন। গত বছরে সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ লক্ষ। প্রশ্ন উঠছে, কী করে এতো ব্যাপক পরিমাণ জল মিশল তালিকায়?

পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও বা ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকদের দিকেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে এই বিপুল দুর্নীতি, এমনই অভিযোগ বিরোধীদের। অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "প্রশাসন জড়িত না থাকলে দুর্নীতি করা যায় না। সেখান থেকে দুর্নীতি শুরু হয়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর আগের মতো সৎ নয়। ফলে আজকের এই পরিস্থিতি।"

বাম আমলেও নিচুতলায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এখন তার ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রের। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গরিব মানুষকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চাকরির জন্য, বাড়ির জন্য। পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে এটা খুব খারাপ নজির। এতে মানুষকে নৈতিক অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।"

এ বছরই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। তার আগে জেলায় জেলায় স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ শাসক দলকে চিন্তায় রেখেছে। রাজনৈতিক চাপানউতোর বাড়ছে তৃণমূল ও বিজেপিতে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার সমীক্ষক দল রাজ্যে এসে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

এতে বিরোধীরা খুশি। কিন্তু তাতে কি গরিব মানুষ মাথার উপর ছাদ পাবে? অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসু ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যাদের জন্য প্রকল্প, তারা সুবিধা না পেলে সবটাই অর্থহীন হয়ে যায়। গরিব মানুষ গরিবই থেকে যান, মুষ্টিমেয় লোকজনের সম্পদ বাড়ে।''

আবাস যোজনায় দুর্নীতি নিয়ে পথে নেমেছে বিরোধী দলগুলি।
আবাস যোজনায় দুর্নীতি নিয়ে পথে নেমেছে বিরোধী দলগুলি। ছবি: Payel Samanta/DW