1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশের উপকার করছে কাগজের কলম

২৭ নভেম্বর ২০২৩

বেড়ে চলা প্লাস্টিকের ব্যবহার যে পৃথিবীর সর্বনাশ ডেকে আনছে, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই৷ ভারতে এক ব্যক্তি এক পণ্যের মাধ্যমে সামান্য হলেও পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা করছেন৷ সবার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/4ZULJ
কাগজের কলম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতেও সাহায্য করছে।
কাগজের কলম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতেও সাহায্য করছে।ছবি: DW

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের আইয়ামপালায়াম গ্রামের শিব বালনের মাথায় পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ কলম'-এর আইডিয়া এসেছিল৷ মনে হয়েছিল, পরিবর্তনের বীজ এভাবেও বপন করা যেতে পারে৷ শিব বলেন, ‘‘আমি স্বীকৃত মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার৷ আমি এক প্রত্যন্ত গ্রামে, প্রকৃতির খুব কাছে বড় হয়েছি৷ শহরগুলিতে বন নিধন ও প্লাস্টিক ব্যবহারের মাত্রা অত্যন্ত বেশি৷ ছোট আকারে হলেও আমি একটা সমাধানসূত্রের খোঁজ করছিলাম৷ তখন আমি ‘পেপার পেন' ডিজাইন করলাম৷''

রিসাইকেল করা বায়োডিগ্রেডেবল কাগজ দিয়ে তৈরি এই কলমের মধ্যে বীজভরা ক্যাপসুল রয়েছে৷ সেই বীজ স্থানীয় মাটিতে বপন করলে চারাগাছের তেমন যত্নও নিতে হয় না৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শিব বালন বলেন, ‘‘এই পেন থেকে সত্যি গাছ গজিয়ে উঠবে, সে বিষয়ে লোকের মনে সংশয় ছিল৷ তাই আমি আমার দফতরের বাইরের জমিতে কয়েকটি ব্যবহৃত পেন ফেলে দিয়েছিলাম৷ স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়ারাও সেটাই করেছিল৷ সেগুলি থেকে সত্যি গাছ গজিয়েছে৷ অনেকে বলেছেন, তাঁরা এই গাছ বেড়ে উঠতে দেখে খুব খুশি৷''

কাগজের কলম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতেও সাহায্য করছে৷ ভারতে বছরে ২৪০ কোটি পর্যন্ত প্লাস্টিক পেন বিক্রি হয়৷ জাতীয় সবুজ ট্রাইবুনালের সূত্র অনুযায়ী, তার নব্বই শতাংশেরও বেশি রিসাইকেল করা হয় না৷ তরুণ এই উদ্যোগপতি নিজের কলমের মাধ্যমে সমাজেও পরিবর্তন আনতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘এক ব্যক্তির পক্ষে যে উৎপাদন সম্ভব নয়, সেটা আমি জানতাম৷ তাই আমি নিজের গ্রামের বেকার কিছু নারীদের প্রশিক্ষণ দিলাম৷ দৈনিক আয়ের মুখ দেখে তাঁদের উপকার হয়েছে৷ আমরা কাছের গ্রামগুলিতেও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালাচ্ছি৷''

এই উদ্যোগে যোগ দেওয়া কর্মী হিসেবে সুগন্থি মনে করেন, ‘‘পরিবারের দেখাশোনার পাশাপাশি আমরা কিছু উপার্জন করতে পারি৷ সাধারণ চাকুরির তুলনায় সেটা অনেক বেশি সুবাধিজনক৷ আমরা পারিবারিক জীবনের সঙ্গে সেই কাজের সমন্বয় ঘটাতে পারি৷''

শিব বালন ও তাঁর টিম চাহিদা অনুযায়ী দিনে ৮০০ থেকে এক হাজার কলম তৈরি করেন৷ স্কুল-কলেজই তাদের প্রধান গ্রাহক৷ কলমের দাম পাঁচ ভারতীয় টাকা৷ উৎপাদন প্রক্রিয়া বর্ণনা করে সুগন্থি বলেন, ‘‘আমরা কাগজ নিয়ে মাঝের অংশে আঠার রেখা লাগিয়ে কালির রিফিল বসাই৷ তারপর সেটা ভাঁজ করে পেপার রোলিং মেশিনে ঢুকিয়ে দেই৷ কলম শুকিয়ে গেলে পেছনে বীজভরা ক্যাপসুল লাগিয়ে দেই৷ তারপর আবার আঠা লাগিয়ে ঢাকনা ও মোড়ক যোগ করি৷''

আতস বাজি তৈরির এক যন্ত্র দিয়ে কলমগুলি প্রস্তুত করা হয়৷ শিব বালন সেই মডেলটির রূপান্তরের এক পথ খুঁজে পেয়েছেন৷ এখন তিনি সেটির একটি ছোট সংস্করণ বিক্রির পরিকল্পনা করছেন৷ তিনি নিজের কলমগুলিকেও আরো পরিবেশবান্ধব করে তুলতে চান৷ রিফিলও অরগ্যানিক উপাদান দিতে তৈরি করা তাঁর লক্ষ্য৷ শিব বলেন, ‘‘পণ্যটিকে একশো শতাংশ অরগ্যানিক করে তোলাই আমার চ্যালেঞ্জ৷ এখনো আমরা সেটা করতে পারি নি৷ শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি৷ গবেষণার মাধ্যমে আমরা উন্নতির চেষ্টা করছি৷ ময়ুরের পালকের মতো উপাদান নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছি৷ প্রাচীনকালে সেটি দিয়ে লেখা হতো৷ ব্যক্তি হিসেবে শুধু আমার পেপার পেন দিয়ে পরিবর্তন আনতে পারবো না৷ সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে৷ এমন পণ্য ব্যবহার করে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে৷ ছোট পরিবর্তনগুলির সমষ্টিতে কাজ হয়৷''

মারিয়া লেসার/এসবি