নেতিবাচক স্মৃতি মুছে ফেলা
২৯ আগস্ট ২০১৬কত স্মৃতি আছে, যা মানুষকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়৷ সেই স্মৃতি আজকের অনেক সিদ্ধান্ত সহজ করে তোলে, ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রস্তুত করে তোলে৷ কিন্তু যে খারাপ ঘটনা, ভয়াবহ অভিজ্ঞতার ছাপ আমাদের মস্তিষ্কে গেঁথে আছে – চাইলেও যেগুলি মুছে ফেলা যায় না, সেই স্মৃতির কী হবে?
২০০২ সালে রোব্যার্ট যখন সৈন্য হিসেবে আফগানিস্তানে মোতায়েন ছিলেন, তখন তাঁর ইউনিটের সৈন্যরা একটি রকেট নিষ্ক্রিয় করার সময় মারাত্মক ভুল করে৷ ফলে বিস্ফোরণ ঘটে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সব ছবি আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না৷ হঠাৎ আমি গোলাগুলির মধ্যে নিজেকে দেখতে পাই৷ চারিদিকে লাশ, নানা মুখ চলে আসে৷''
শরীরে অংশ, পোড়া মাংসের গন্ধ, কান ফাটানো শব্দ – বার বার ফিরে আসে৷ সেই সব স্মৃতি রোব্যার্ট-কে অস্থির করে তোলে৷ চরম আতঙ্ক তাকে গ্রাস করে৷ তাঁর এই রোগের পোশাকি নাম ‘পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার' বা পিটিএসডি৷
ইউরোপীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হলো – স্মৃতি আদৌ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কিনা এবং সেটা সম্ভব হলে কীভাবে তা করা যায়৷ আন্ড্রে ফিশার এমন এক কোড খুঁজছেন, যা ভয়ের স্মৃতি মুছে দিতে পারে৷ তিনি ‘লং টার্ম মেমারি' নিয়ে কাজ করছেন৷ সেখানেই ভয়ের স্মৃতি জমা থাকে৷ যে এনজাইম নেতিবাচক স্মৃতি জমা রাখার দায়িত্বে রয়েছে, সেটির খোঁজ করছেন তিনি৷ ভয় কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে মস্তিষ্কে জাঁকিয়ে বসে, ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে তিনি সেটা জানার চেষ্টা করছেন৷
খাঁচার মধ্যে একটি ইঁদুরকে গারদের মাধ্যমে সামান্য মাত্রায় ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়৷ ফলে ইঁদুরটি ভয়ে নড়াচড়া করতে পারে না৷ বিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকে ‘কনডিশানাল ফ্রিজিং' বলেন৷ এক দিন পর ইঁদুরটিকে একই খাঁচায় পুরে দেওয়া হয়৷ সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রিক শকের কথা তার মনে পড়ে যায়৷ ভয় আবার ফিরে আসে৷ প্রো. আন্ড্রে ফিশার বলেন, ‘‘এটা মানুষের মতোই৷ যেমন মানুষ কোনো নতুন শহরের নতুন কোনো গোলমেলে এলাকায় গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়৷ পরের বার সেখানে গিয়ে সে অত্যন্ত সতর্ক থাকে৷ চালাক মানুষ সেখানে আর ফেরেই না৷''
বিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে ভয়ের পেছনে যুক্তি থাকে৷ সেই ভয় বিপদ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে দিয়ে সুরক্ষা দেবার চেষ্টা করে৷ কিন্তু ট্রমার ক্ষেত্রে স্মৃতি ফিকে হয়ে যায় না, সব সময়ে সজাগ থাকে৷ তথাকথিত ফ্ল্যাশব্যাক যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায় ফিরে এসে পীড়া দিতে পারে৷