নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, বিভক্ত বিশ্বনেতৃত্ব
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এ নিয়ে বিভক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
ইসরায়েল: 'ইহুদিবিরোধী সিদ্ধান্ত'
নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ইহুদিবিরোধী সিদ্ধান্ত আধুনিক সময়ের ড্রেফাস বিচারের সাথে তুলনীয় এবং এটা একইভাবে শেষ হবে৷’’ নেতানিয়াহু উনিশ শতকে আলফ্রেড ড্রেফাস নামে এক ইহুদি সেনা ক্যাপ্টেনের ঘটনার উল্লেখ করেছেন। ড্রেফাসকে ফ্রান্সে রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল৷ পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হয়৷
যুক্তরাষ্ট্র: 'মৌলিকভাবে প্রত্যাখ্যান'
আইসিসির সিদ্ধান্তকে 'মৌলিকভাবে প্রত্যাখ্যান' করার কথা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘গ্রেপ্তার পরোয়ানা চাওয়ার জন্য প্রসিকিউটরের তাড়াহুড়া এবং এই সিদ্ধান্তে আসার ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার কারণে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷’’ তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়েছে যে এই বিষয়ে আইসিসির এখতিয়ার নেই৷’’
আর্জেন্টিনার দ্বিমত
আর্জেন্টিনা আইসিসির সিদ্ধান্তের সঙ্গে 'দ্বিমত' পোষণের কথা জানিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলে এক্স-এ লিখেছেন, "হামাস এবং হিজবুল্লাহর মতো সংগঠনের ক্রমাগত আক্রমণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার বৈধ অধিকারকে উপেক্ষা করে (এই সিদ্ধান্ত)।"
হামাস: 'ন্যায়বিচারের পদক্ষেপ'
ইসরায়েলি রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বলেন, "(এটি) ন্যায়বিচারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকারের উপায় দেখাতে পারে, তবে এটি প্রতীকী থেকে যাবে যদি বিশ্বের সমস্ত দেশ সমর্থন না করে।"
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: 'রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়'
জর্ডান সফরকালে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি আদালতের সিদ্ধান্ত, একটি বিচারের আদালতের, একটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সিদ্ধান্ত। আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে৷’’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ: 'আশার চিহ্ন'
হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলেছে, "আইসিসির সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আশা ও আস্থার প্রতিনিধিত্ব করে৷’’ নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের সঙ্গে ‘যোগাযোগ ও বৈঠক ছিন্ন করার নীতি’ প্রয়োগ করার জন্য আইসিসি সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল: 'ওয়ান্টেড ম্যান'
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন আনুষ্ঠানিকভাবে একজন ওয়ান্টেড ব্যক্তি৷ আইসিসির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারকদের সামনে এই ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত আইসিসি সদস্য রাষ্ট্র এবং সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কিছুতেই থামা উচিত হবে না৷’’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ: কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ‘‘ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি নেতা এবং হামাসের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ফলে কিছু ব্যক্তি আইনের নাগালের বাইরে, এমন ধারণা ভেঙে গেছে৷’’
তুরস্ক: 'ইতিবাচক সিদ্ধান্ত'
তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইলমাজ টুঙ্ক এক্স-এ বলেছেন, আইসিসির এই সিদ্ধান্ত "রক্তপাত বন্ধ করতে এবং ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ করার পথে একটি বিলম্বিত কিন্তু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত৷’’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই পরোয়ানাকে "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ" উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইটালি: 'মূল্যায়ন করা হবে'
ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, "আমরা আইসিসিকে সমর্থন করি, তবে এটাও সবসময় মনে রাখি যে আদালতকে অবশ্যই আইনি ভূমিকা পালন করতে হবে, রাজনৈতিক ভূমিকা নয়৷’’ তিনি বলেন, "আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে মিলে কী করতে হবে এবং কিভাবে এই সিদ্ধান্তকে ব্যাখ্যা করতে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো৷’’
নরওয়ে: 'ন্যায্যতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস'
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইডে বলেছেন, "আইসিসির জন্য তার আদেশকে ন্যায়সঙ্গতভাবে পালন করা গুরুত্বপূর্ণ। আমি আস্থা রাখি যে আদালত সর্বোচ্চ ন্যায্য বিচারের মানদণ্ডের ভিত্তিতে মামলাটি পরিচালনা করবে।"
সুইডেন: 'স্বাধীনতা এবং অখণ্ডতা'
সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ড বলেছেন, "সুইডেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আদালতের গুরুত্বপূর্ণ কাজকে সমর্থন করে এবং এর স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষা করার ব্যাপারে কাজ করে৷’’