আট দিনের রিমান্ডে নূর হোসেন
১৬ জুন ২০১৪গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়৷ এর তিনদিন পর তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে৷ এই ঘটনায় আরেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়৷ নিহত নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইলাম অভিযোগ করেন নারায়ণগঞ্জ ব়্যাব-১১-র কমান্ডার লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লে. কমান্ডার এম এম রানা নজরুলের প্রতিপক্ষ নূর হোসেনের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা ঘুস নিয়ে ৭ জনকে হত্যা করেছে৷
এই ঘটনায় ৩ র্যাব কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনার পর পরই নূর হোসেন দেশের বাইরে পালিয়ে যান৷ এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে র্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেন এবং লে. কমান্ডার এম এম রানা আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন৷
শনিবার গভীর রাতে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর-সংলগ্ন বাগুইহাটি থানার পুলিশ নূর হোসেন এবং তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে৷
ঢাকায় পুলিশ সূত্র জানায়, নূর হোসেন ভারতে আত্মগোপন করে আছেন, এ খবর নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়৷ এরই ভিত্তিতে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ) ও বাগুইআটি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান চালায়৷
কলকাতার পুলিশ জানিয়েছে, সাত খুনের পর নূর হোসেন পালিয়ে কলকাতায় গিয়ে ৮ই জুন কৈখালি ইন্দ্রপ্রস্থ আবাসনের পাঁচতলা বাসায় ওঠেন৷ দুই সঙ্গী ওহিদুর জামান শামীম ও সৌমেন খান সুমনকে নিয়ে দুই মাসের জন্য ফ্ল্যাটটি তিনি ভাড়া করেন৷ ওহিদুরের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার বুড়িপাড়া ও সুমনের বাড়ি ফতুল্লা থানার রামবরাস গ্রামে৷
নূর হোসেন নিজেকে বাপী সাহা পরিচয় দিয়ে পাঁচতলার তিন বেডের ফ্ল্যাটটি ২০ হাজার ভারতীয় টাকায় ভাড়া নিয়েছিলেন৷
গ্রেপ্তারের পর তাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি প্রবেশের দায়ে সেখানকার থানায় মামলা হয়েছে৷
মামলার এজাহারে বলা হয়, বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করেন৷ তাঁদের কাছ থেকে পুলিশ পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং ১১টি সিম উদ্ধার করে৷ এর মধ্যে একটি সিম বাংলাদেশের গ্রামীণফোনের৷ ভারতে অবস্থানের কোনো কাগজপত্র বা পাসপোর্ট তাঁদের কাছে ছিল না৷
তাদের রবিবার বারাসাত আদালতে হাজির করে পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷ ২৩শে জুন পরবর্তী শুনানি হবে৷ আদালতে নূর হোসেনের পক্ষে কেউ জামিনের আবেদন করেননি৷
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, রোববার সকালে তিনি টেলিফোনে কলকাতার অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াডের এসিপি অনিমেষ সরকারের সঙ্গে কথা বলে নূর হোসেনের গ্রেপ্তার সম্পর্কে নিশ্চিত হন৷ তিনি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে জানান৷ আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনতে আইনগত কোন জটিলতা হবে না৷
এদিকে নূর হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছে এই খবরে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তারা রবিবার মিছিল করে নূর হোসেনকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিচারের দাবি জানান৷