নির্বাচনের ডামাডোলে চাকরিপ্রার্থীদের দাবি আদায়ের আন্দোলন
রাজ্য জুড়ে চলছে লোকসভা নির্বাচনের জমজমাট প্রচার৷তবে তিন বছর ধরে যারা প্রাপ্য চাকরি পাওয়ার আশায় রাস্তায়, তারা এখনো নতুন সকালের অপেক্ষায় চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলন৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা...
১১১৬+ দিন
নবম থেকে দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থানের বয়স সেদিন ১১১৬ দিন।তবে দিন গণনা যে আরো বহুদিন চলতে পারে তা তারা জানেন৷ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই আন্দোলন। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, পুলিশি নির্যাতন - কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি আন্দোলনকারীদের।
আন্দোলনের ধার
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের চলমান আন্দোলনকে শুরু থেকে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের মানুষই সমর্থন জানিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে গান্ধী মূর্তির কাছে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে।
ক্লান্তি
মধ্যমগ্রামের অভিষেক সেন। প্রথম থেকেই রয়েছেন আন্দোলন মঞ্চে । ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘কোনো ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এত দীর্ঘ আন্দোলন সারা পৃথিবীর ইতিহাসেই সম্ভবত বিরল। দীর্ঘদিন ধরে একটা আন্দোলন চললে শারিরীক ক্লান্তি আসবে তা খুব স্বাভাবিক। মানসিক অবসাদ তো রয়েইছে।’’
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রসঙ্গ
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাড়া ফেলে দেওয়া একের পর এক রায় আন্দোলনকারীদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছিল৷ সম্প্রতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন৷ শ্যামশ্রী মণ্ডল তাতে দোষের কিছু দেখছেন না৷ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হঠাৎ রাজনীতিতে পদার্পণে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ বিস্মিত হলেও শ্যামশ্রী এখনো আশা ছাড়েননি, তিনি মনে করেন, বিচার শেষে রায় তাদের পক্ষেই হবে।
আদালতে অটুট আস্থা
নদিয়ার স্বরূপ বিশ্বাস জানালেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে পদার্পণ তাদের বিস্মিত করলেও স্পেশাল বেঞ্চের বর্তমান বিচারপতি দেবাংশু বসাকের রায়ের ওপর আস্থা রয়েছে তাদের। তিনি আরো জানান, আদালতের প্রতিও পূর্ণ আস্থা আছে তাদের৷
যোগ্য হয়েও বঞ্চিত তারা
শুভদীপ মান্না এখনো নিয়মিত আসেন আন্দোলন মঞ্চে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচারপতির দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তির ভিন্ন রাজনৈতিক সত্ত্বা রয়েছে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে অনেকেই মনে করেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় ছিল অযোগ্য চাকুরিরতদের নিয়ে।তবে অযোগ্য কারো কারো চাকরি গেলেও যোগ্যরা এখনো পথেই বসে!’’
একই ছবি অন্য মঞ্চেও
গান্ধী মূর্তির পাদদেশে চাকরিপ্রার্থীদের আরও একটি মঞ্চ। সেখানেও একই ছবি। অবস্থানকারীদের সংখ্যা এই মুহূর্তে কিছুটা কম৷
‘সংগ্রাম চলবে’
৩০০ কিলোমিটার দূরের মুর্শিবাদ থেকে আন্দোলন মঞ্চে আসা খায়রুল ইসলাম বললেন, ‘‘আমাদেরও তো পেট চালাতে হয়। তিন বছর ধরে চলছে আমাদের এই প্রতিবাদ আন্দোলন। প্রতিদিন মঞ্চে আসতে হলে টান পড়ে রুটিরুজিতে। তাই পালা করে আসি। তবে যতদিন না যোগ্যদের চাকরি হচ্ছে, সংগ্রাম চলতে থাকবে।’’
রমজান মাস বলে...
মুর্শিদাবাদের মৌলি আহমেদ মনে করেন, রোজার মাস চলছে বলে এখন আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি কিছুটা কম। এছাড়া প্রকৃতির তীব্র দাবদাহও এর একটা কারণ। ঈদের পর থেকে আন্দোলন মঞ্চে আবার ভিড় বাড়বে বলে মনে করেন মৌলি৷