1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নির্বাচনের আগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ মে ২০২২

ফারুক ফয়সাল আর্টিকেল নাইনটিন-এর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের পরিচালক৷ তিনি মনে করেন নির্বাচনের আগে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্যই নতুন তিনটি আইন করছে সরকার৷

https://p.dw.com/p/4BCmY
ফাইল ছবিছবি: Mortuza Rashed/DW

২০১৮ সালেও নির্বাচনের আগে একই উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) করা হয়েছিলো৷ এইসব আইন যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের সুবিধার জন্য করা হয়৷ সাধারণ মানুষ এর শিকার হন৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত:

ডয়চে ভেলে: এপর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কী কী অপব্যবহার আপনারা দেখেছেন?

ফারুক ফয়সাল: আমরা এই আইনটি মনিটর করি৷ এটা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় কোনো কাজে আসে না৷ এটা সরকারি স্বার্থ বা যে দল ক্ষমতায় আছে তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহার করা হয়৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ আমরা সরকারকে জানিয়েছি, জাতিসংঘকেও জানিয়েছি৷ এটা মানুষের মুক্ত মতপ্রকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এখন সরকারও সেটা স্বীকার করছে যে এর অপব্যবহার হচ্ছে৷

ডয়চে ভেলে: এই আইনের কোনা ধারা বা বিধান মুক্ত মত প্রকাশের পথে বাধা?

ফারুক ফয়সাল: এই আইনের অতিরিক্ত অপব্যবহার হয়েছে৷ পুলিশকে সীমাহীন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ কোথাও কোথাও জামিন অযোগ্য করা হয়েছে৷ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ তল্লাশির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ যেমন ধরুন মানহানি৷ এর কোনো ব্যাখ্যা নেই৷ ফলে এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে৷

‘সব মিলিয়ে সরকার একটি কঠোর নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে’

ডয়চে ভেলে: নতুন ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্টকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ফারুক ফয়সাল: আইসিটি অ্যাক্ট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হলো৷ তাতে যা হলো পুরনো আইনে যা বিস্তারিত ছিল না নতুন আইনে তা আরো বিস্তৃত করা হলো৷ আর আইনটি করা হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে৷ তাই ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়, আমরাও তাই আবার ভয় পাচ্ছি৷ কারণ সামনে আবার জাতীয় নির্বাচন৷ শুধু বিটিআরসির ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট নয়, রেগুলেশন ফর ডিজিটাল,সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান ও পরিচালনা নীতিমালা- এই সবগুলোর মধ্যেই বলা হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় এইসব আইন করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্টকারী, ধর্মীয় চেতনায় আঘাতকারী, দেশীয় সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী কোনো কনটেন্ট আপ করা যাবে না৷  কিন্তু সমস্যা হলো এসবের কোনো ব্যাখ্যা নেই৷ এর ফলে যা হবে এটা ইচ্ছে মত ব্যবহার করা হবে৷ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবে৷ বাক স্বাধীনতা, মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে৷ যেটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়েছে৷ সব মিলিয়ে সরকার একটি কঠোর নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে৷

ডয়চে ভেলে: ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা কীভাবে হরণ করবে?

ফারুক ফয়সাল: আইনটি যখন হবে তখন কোনো নাগরিকই নিরাপদ থাকবেন না৷ তার ব্যক্তিগত যে তথ্য তার সংরক্ষণে থাকবে সেটা অন্যে হাতে চলে যাবে৷ সরকার যদি মনে করে সেটা অন্য কোনো দেশকে দিতে হবে, দিয়ে দিতে পারবে৷ ধরুন ইউক্রেন যুদ্ধ৷ সেখানে আমি রাশিয়ার পক্ষে নই৷ ফেসবুকে আমার যে কনটেন্ট আছে৷ আমি ফেসবুকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে (ইনবক্স) যা বলছি তা সরকারের হাতে চলে যাবে৷ সরকার চাইলে তা রাশিয়াকে দিতে পারবে৷ আমার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে৷ এটা আমার যেকোনো তথ্যের ব্যাপারেই হতে পারে৷ আমার ভয় হচ্ছে অপব্যবহারের জায়গায়৷

ডয়চে ভেলে: আলাদাভাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে শঙ্কার কারণ কী?

ফারুক ফয়সাল: শিল্পের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে৷ আমার চিন্তার ভিন্নতা, আমার মতের ভিন্নতা বা নতুন ধরনের চিন্তা কারো কারো কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে৷ কিন্তু আইনে তো সেটা আটকে দেয়া যাবে৷ আর আইনে বলা হয়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে তথ্যভান্ডার স্থাপন করতে হবে৷ তাহলে তো পুরোটাই সরকারের হাতে চলে যাবে৷ এই যে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা এটা শিল্পের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা অনবরত বিঘ্নিত করবে৷

ডয়চে ভেলে: তাহলে সব মিলিয়ে এই আইনগুলোর টার্গেট কী?

ফারুক ফয়সাল: সরকার যখনই মনে করে নির্বাচনে জেতার জন্য মানুষের মতকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তখনই এই আইনগুলো তৈরি করে৷ ডাটা প্রটেকশন তো মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা৷ এখানে তো উল্টোটা হচ্ছে৷ এখানো তো কোনো প্রটেকশনই নাই৷ অন্যান্য দেশে যে ডাটা প্রটেকশন আইন নেই তা নয়৷  কিন্তু তারা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী যতদূর সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করে৷  কিন্তু এটা রক্ষা না করা হলে স্বাধীন দেশে আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে৷ ফিজিক্যাল নিরাপত্তার মতই নাগরিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রয়োজন৷ তার জন্য যে আইন দরকার তা আমরা দেখছি না৷

ডয়চে ভেলে: সাধারণ মানুষের তো জিজিটাল, সাইবার নিরাপত্তা প্রয়োজন৷ সেটা তারা কীভাবে পাবে?

ফারুক ফয়সালবাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে রিজার্ভ চুরি হয়ে গেছে সেই তথ্য আমার জানা দরকার৷ বিকাশ থেকে যে জালিয়াতি হয় সেটা আমার জানা দরকার৷ আপনি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন তাহলে আপনাকে আগে আমার নিরাপত্তা দেখতে হবে৷ আপনার দলের, আপনার সরকারের, আপনার লোকজনের নিরাপত্তা, কর্তৃত্বই যদি প্রাধান্য পায় আমার নিরাপত্তার চেয়ে তাহলে তো হলো না৷ আমাকে বিব্রত করা বা আমাকে অনিরাপদ করার জন্য তো আমি আপনাকে ভোট দিয়ে বা না নিয়ে ক্ষমতায় আনি নাই৷