নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩১৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন মেহেদী, লিটন ৩৬ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ছিলেন ৪২ রানে। জয়ের রান তোলা মেহেদীই হন ম্যাচসেরা। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে বোলিং নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৩৪ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সেরা বোলিং করেন শরিফুল। কিউইদের করা ১৩৪ রান ৮ বল আগেই টপকে যায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থেকে রান তাড়ায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন লিটন। ২৫ বলে ৪০ রানের জুটিতে তাকে সঙ্গ দিয়ে ১৬ বলে ১৯ করে বোলিংয়ে ২ উইকেট নেওয়া শেখ মেহেদী হাসান।
১৩৫ রান তাড়ায় ইতিবাচক শুরুর আভাস দেন রনি তালুকদার। টিম সাউদিকে ছক্কায় উড়িয়ে শুরু তার। তবে অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে ইনিংস টানতে পারেননি। অ্যাডাম মিলনের বলে আরেক ছক্কা মারতে গিয়ে তুলে দেন সহজ ক্যাচ।
অধিনায়ক শান্ত নেমেই পুল করে পান বাউন্ডারি। তার ব্যাট থেকে বাউন্ডারি আসে আরও তিনটি। উড়তে থাকা শান্ত আচমকায় ধসে পড়েন। জিমি নিশামের শর্ট বলে অনায়াসে বাউন্ডারি পাওয়া যেত। শান্ত টাইমিংয়ে গড়বড় করে তুলে দেন সহজ ক্যাচ। ১৪ বলে ১৯ করে তিনি ফিরতে ৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
চারে নেমে ইশ সোধিকে সুইপে ছক্কা, রিভার্স সুইপে চারে শুরু করেন সৌম্য সরকার। খেলছিলেন পরিস্থিতি বুঝে। বেন সিয়ার্সের বলে ফ্লিকে দারুণ চার মারার পর পরের বলেও একই চেষ্টায় যান। গতিময় দারুণ ডেলিভারিটি ভেঙে দেয় তার স্টাম্প। লিটনের সঙ্গে ভাঙে ২২ বলে ২৯ রানের জুটি।
তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে এরপর আরেক জুটি পান লিটন। হৃদয় ছিলেন তুলনামূলক আগ্রাসী। সিয়ার্সকে ছক্কায় উড়িয়ে শুরু করা তরুণ ব্যাটার ছিলেন সাবলীল। তাড়াহুড়ো না করে এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। বলে রানের চাহিদায় বলে-রানেই স্কোরবোর্ড সচল রাখছিলেন দুজন। ২৯ বলে ২৯ তুলা এই জুটি ভাঙেন স্যান্টনার। কিউই অধিনায়কের বলে খানিকটা এগিয়ে পুশ করতে গিয়ে কাভারে ধরা দেন ১৮ বলে ১৯ করা হৃদয়।
শেখ মেহেদীকে নিয়ে জুটি পান লিটন। একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে বাংলাদেশকে টানেন দলের অন্যতম সেরা ব্যাটার। ২৫ বলে ৪০ রানে অবিচ্ছিন্ন জুটি শেষ পর্যন্ত ম্যাচ শেষ করে দেয়।
এর আগে টস জিতে বোলিং নিয়ে দলের দারুণ শুরুর নায়ক মেহেদী। প্রথম ওভারেই উইকেট এনে দেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে জোড়া শিকার ধরেন শরিফুল। ১ রানেই নিউজিল্যান্ডের টপ তিন ব্যাটারকে তুলে নেয় বাংলাদেশ।
২০ রানে ৪ আর ৫০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা কিউই ইনিংস টেনেছেন জিমি নিশাম। অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে ৩১ বলে ৪১ রানের জুটিতে দলকে লড়াইয়ের জায়গায় রাখেন তিনি। ২৯ বলে ৪৮ করে ১৭তম ওভারে তিনি আউট হতে দেড়শো পেরুনোর আশা মিইয়ে যায় স্বাগতিকদের।
ম্যাচের শুরুতেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। শেখ মেহেদী ইনিংসের চতুর্থ বলেই বোল্ড করে দেন টিম সেইফার্টকে। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে আরেক সাফল্য। শরিফুল ইসলামের বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা দেন বিপজ্জনক ফিন অ্যালেন।
পরের বলটি ভেতরে ঢোকান শরিফুল। ক্রিজে এসে গ্লেন ফিলিপস বুঝতেই পারেননি। মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। ১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড।
দলের প্রবল চাপে জ্বলে উঠতে চাইছিলেন ড্যারেল মিচেল। পঞ্চম ওভারে তাকে বোল্ড করে চতুর্থ উইকেট ফেলে দেন শেখ মেহেদী। ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় কিউইরা।
তানজিম সাকিবের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে দুই চার, তিন ছক্কায় ১৪ রান নিয়ে নেয় নিউজিল্যান্ড। তাতেও ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৪ উইকেটে ৩৬।
মার্ক চাপম্যান-জিমি নিশাম জুটি গড়ে দলকে জুতসই পুঁজি আনতে চেয়েছিলেন। কিছু রান বের করলেও খুব আগ্রাসী হতে পারছিলেন না তারা।
২৮ বলে দুজনের ৩০ রানের জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। দশম ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই সাফল্য পান তিনি। রিশাদকে কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন ১৯ বলে ১৯ করা চাপম্যান।
অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার নেমে দারুণ সঙ্গ দিতে থাকেন নিশামকে। ৬ষ্ঠ উইকেটে জমে উঠে জুটি। এই জুটি বিপদজনক জায়গায় যেতেই ফের শরিফুলের আঘাত।
৩১ বলে ৪১ রানের জুটি থামাতে সৌম্যের অবদানও অনেক। দারুণ এক নিচু ক্যাচ হাতে জমান তিনি। থেমে যায় ২২ বলে স্যান্টনারের ২৩ রানের ইনিংস। স্যান্টনার ফিরলেও নিশাম তুলছিলেন ঝড়। দলকে জুতসই পুঁজির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মোস্তাফিজকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে ফিফটির কাছে যাওয়ার পরের বলে ফুলটসে কাবু তিনি। মোস্তাফিজের নিচু ফুলটস তুলে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে দেন ক্যাচ। ২৯ বলে ৪ চার, ৩ ছক্কায় ৪৮ করে তিনি বিদায় নিতেই আর চ্যালেঞ্জিং পুঁজির আশা মিইয়ে যায় স্বাগতিকদের। শেষ দিকে অ্যাডাম মিলনে ১২ বলে ১৬ করে কিছু রান যোগ করেন।
এপিবি/কেএম